বর্হিনোঙরে জাহাজে জট লাগায় লাইটারেজগুলো অলস বসে আছে।
- আপডেট সময় : ০৫:০১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০২৩ ৬৯ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণে স্থবিরতা নেমে এসেছে ব্যবসায়িক কর্মকান্ডেও। পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় বর্হিনোঙরে দ্বিগুণ বেড়েছে জাহাজের সারি। পাশাপাশি অলস পড়ে আছে লাইটার জাহাজগুলোও। অপরদিকে স্বাভাবিক সময়ে দিনে চার হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে অর্ধেকে। ফলে গত তিনদিন ধরে বন্দর ইয়ার্ডে গড়ে পড়ে আছে ৩২ হাজার টিইইউএস কনটেইনার।
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে গত ৫ আগস্ট খালাসের অপেক্ষায় ছিল ২০টি জাহাজ। বর্তমানে ৫৩টি পণ্যবাহী জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় আছে। সে হিসেবে বর্হিনোঙরে খালাসের অপেক্ষায় থাকা জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এসব জাহাজে খাদ্য সামগ্রী, সার, ক্লিংকার, চিনি, লবণ ও তেলসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। অপরদিকে স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে দিনে চার হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হলেও আজ ডেলিভারি হয়েছে মাত্র ২ হাজার ২০৪টি কনটেইনার।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট বন্দরের বর্হিনোঙরে অলস পড়েছিল ২১টি জাহাজ। ৫ আগস্ট খালাসের অপেক্ষায় ছিল ২০টি জাহাজ। ৬ আগস্ট আরও ২১টি জাহাজ এসে খালাসের অপেক্ষায় থাকে মোট ৪১টি জাহাজ। ভারী বর্ষণে বর্হিনোঙরে পণ্যের খালাস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বর্তমানে ৫৩টি জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে। এরমধ্যে ২টি কনটেইনারবাহী জাহাজ, ১৫টি জেনারেল কার্গো, ৬টি খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজ, ৩টি সারবাহী জাহাজ, ১৭টি ক্লিংকারবাহী জাহাজ, ৩টি চিনিবাহী জাহাজ, ১টি লবণবাহী ও ৬টি তেলবাহী জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় আছে।
বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা আছে। এদিকে ভারী বর্ষণের ফলে গত তিনদিন ধরে বন্দর ইয়ার্ডে গড়ে পড়ে আছে ৩২ হাজার টিইইউএস কনটেইনার। গত ৫ আগস্ট বন্দর ইয়ার্ডে ৩২ হাজার ৭৭ টিইইউএস কনটেইনার ছিল। পরদিন কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৮১৮ টিইইউএস কনটেইনার। আজ বন্দরের ইয়ার্ডে জমা পড়েছে ৩২ হাজার ৫৯৩ টিইইউএস কনটেইনার। ফলে বোঝাই যাচ্ছে বন্দরে পণ্য ডেলিভারি, কনটেইনার হ্যান্ডলিংসহ যাবতীয় কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ীরা পণ্য ডেলিভারি নিতে চান না। পাশাপাশি খোলা পণ্যের (চাল, ডাল, গম ইত্যাদি) খালাস বন্ধ রাখায় বর্হিনোঙরে জাহাজের সারি বাড়ছেই। সবমিলিয়ে আমাদের কাজের গতি কিছুটা কমেছে।
এদিকে, ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি তেলসহ বিভিন্ন খোলা পণ্য প্রায় আড়াই হাজার লাইটার জাহাজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়ে থাকে। কিন্তু ভারী বর্ষণের কারণে গত তিনদিন ধরে বর্হিনোঙর থেকে শুধুমাত্র কয়লা ও পাথর ছাড়া বাকি পণ্যগুলোর খালাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে পতেঙ্গা, মাঝিরঘাট ও সদরঘাট এলাকার ১৮টি বেসরকারি ঘাটে অলস পড়ে আছে বেশিরভাগ লাইটার জাহাজ।
লাইটার শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নবী আলম বলেন, বৃষ্টির কারণে খোলা পণ্যের লোড বন্ধ রয়েছে। তবে সাগরের পরিস্থিতি বুঝে ক্লিংকার, কয়লা, বালু এসব পণ্য নিয়ে কিছু লাইটার জাহাজ চলাচল করছে। তবে অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে। আমাদের শ্রমিকরাও অলস সময় পার করছে।
এদিকে, গত তিনদিন থেকে মাঝারি থেকে ভারি ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে চট্টগ্রামে। আবহাওয়া অফিস বলছে— শ্রাবণের শেষ সময়ে চট্টগ্রামে এবার গত ৩০ বছরের চেয়ে রেকর্ড পারিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া গত তিনবছরে এবারেই প্রথম এমন ভরা বর্ষার নাগাল পেল নগরবাসী। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২১৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার। আরও দুইদিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘন্টাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষন হতে পারে। এর প্রভাবে পাহাড় ধ্বসেরও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী পরশু থেকে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হবে। এরপর ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাতও কমে আসবে।