বিএনপি কঠোর কর্মসূচি দিতে চায়, কিন্তু……..
- আপডেট সময় : ০৭:৫২:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অগাস্ট ২০২৩ ২৭ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দীর্ঘদিন থেকেই আন্দোলন করছে বিএনপি। বিভিন্ন সময়ে বিএনপি পদযাত্রা, গণমিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশ, মহাসমাবেশের মতো কর্মসূচি দিয়ে থাকলেও কঠোর কোনো কর্মসূচি দিতে পারছে না দলটি।’ বিএনপির একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নানা কারণে বিএনপি বড় ধরনের কঠোর কোনো কর্মসূচি দিতে পারছে না। কিংবা কঠোর কোনো কর্মসূচির পরিকল্পনা থাকলেও বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ সমসাময়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসব কর্মসূচি থেকে পিছু হঠছে বিএনপি।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে দলটি সারাদেশে প্রচারপত্র বিলির কর্মসূচি পালন করে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় প্রচারপত্র বিলির এই কর্মসূচিতে অংশ নেন’। এছাড়া সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি শুক্রবার (১৮ আগস্ট) ঢাকাসহ সব মহানগরে গণমিছিল করে। শুক্রবার ঢাকায় দুটি গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি গণমিছিল করে বেলা তিনটায় গুলশান-২ থেকে এবং মিছিলটি গুলশান-১, তিতুমীর কলেজ হয়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। একই সময় রাজধানীর দয়াগঞ্জ থেকে গণমিছিল শুরু করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এই গণমিছিল সায়েদাবাদ ব্রিজ, ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার, গোলাপবাগ, কমলাপুর, বৌদ্ধমন্দির হয়ে খিলগাঁও, শাজাহানপুর, ফকিরাপুল হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। পরের দিন শনিবার (১৯ আগস্ট) সারাদেশে পদযাত্রার কর্মসূচি দেয় বিএনপি। এক দফা দাবিতে গণমিছিল এবং পদযাত্রার দুই দিনের এই কর্মসূচি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দল ও জোটগুলোও পালন করে। কিন্তু এসব কর্মসূচিগুলো তেমন জমাতে পারেনি বিএনপি।
সর্বশেষ বড় কোনো কর্মসূচির মধ্যে বিএনপির মহাসমাবেশ ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিএনপি সরকার পতনের এক দফা দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করে। গত ২৮ জুলাই (শুক্রবার) নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আয়োজন করা হয়। মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে সভাপতিত্ব করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং সঞ্চালনা করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ও আব্দুস সালাম’।
ওই মহাসমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পরদিন শনিবার (২৯ জুলাই) সমমনা সকল দলকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার সকল প্রবেশমুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু পরদিন রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচির সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফলে পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি। গত ২৯ জুলাই (শনিবার) বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পিটুনি খাওয়ার পর ডিবি অফিসে নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আপ্যায়ন করান ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর পরই এ নিয়ে শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শুধু তাই নয়, এ ইস্যু ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়। এখানেও বিএনপির কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়, জনমনে সন্দেহের ডালপালা ছড়াতে শুরু করে। এর পর থেকেই বিএনপি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।’
একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকালও বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের প্রকাশ্য অবস্থান স্পষ্ট হওয়ায় বিএনপি কোনো কর্মসূচি দেয়নি। ভারতের এই অবস্থানে এখন অন্য পথে হাটছে বিএনপি। তাছাড়া বিএনপির নির্বাচনমুখী অংশটি আন্দোলন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। নির্বাচনমুখী বিএনপির এই অংশটি এখন রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা কেন্দ্রীয় কমান্ডের কোনো বাধা না মেনেই নিজস্ব এলাকায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে বিএনপির মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার একটা চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে।’
এছাড়াও, গত সোমবার (১৪ আগস্ট) যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন। বৈঠকে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, তাঁরা চান বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ব্রিটিশ এই রাষ্ট্রদূত বিএনপির আন্দোলন কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনাই করেননি। বরং তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই তারা সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেবেন না। এছাড়া তার দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক’।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি বিভাজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই সহিংস কোনো আন্দোলন করা যাবে না। কিন্তু সহিংস কোনো আন্দোলন না করলে, এসব শান্তিপূর্ণ গণমিছিল, পদযাত্রা করে বিএনপি আন্দোলনে কোনো কাঙ্খিত ফলাফল পাবে না বলেই মনে করছে দলটির নীতি নির্ধারণী মহল। যার ফলে বিএনপির নীতি নির্ধারনী মহল একটি দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তারা কি ধরনের কর্মসূচি দিবে, কি ধরনের কর্মসূচি দিলে- কি ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে?এসব নিয়েই ভাবছে বিএনপির নীতি নির্ধারণী মহল। শেষ পর্যন্ত ভারত যদি সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং সে রকম পরিস্থিতিতে যদি বিএনপি আন্দোলন করে, তাহলে তাদের এই আন্দোরন পণ্ড হবে। আন্দোলন যদি ফলপ্রসু না হয় এবং সে সময়ে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে বিএনপির অস্থিত্ব বিলীন হয়ে যাবে- এমনটাই মনে করছেন বিএনপির নীতি নির্ধারণী মহল।’
এরকম একটি বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা করলেও যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশ বিএনপির সহিংস কোনো আন্দোলেনকে সমর্থন না করে, তাহলে দলটির একটি নড়বড়ে অবস্থান তৈরি হবে। ফলে বিএনপি এখন কোনো কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে পড়েছে। কাজেই- এসব দিক বিবেচনা করেই বিএনপি বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারছে না।
দেশি, বিদেশি বিভিন্ন চাপের মুখে পড়েই বিএনপি আন্দোলন জমিয়ে তুলতে পারছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, নানামুখী সঙ্কটের মধ্যে পড়েই বিএনপি এখন আর কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারছে না।