ভারত ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি
- আপডেট সময় : ১০:১২:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০২৩ ৩৬ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়। ভারতের পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করলে ক্ষতি সবার। এই বার্তা আনন্দবাজার, ডয়চে ভেলে এবং দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত হবার পর বিএনপির মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির আন্দোলনে যেন কেউ জল ঢেলেছে।,
প্রথমে বিএনপি নেতারা ভারতের এই অবস্থানের পর তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছিল। ভারত বিরোধিতা নতুন করে শুরু হয়েছিল বিএনপির মধ্যে। বিএনপির অন্তত তিনজন নেতা ভারতের এই অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ছিলেন এবং ভারতের আগ্রাসন, মাতবরি ইত্যাদি বন্ধের দাবিও জানিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভী এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা যেতে না যেতেই বিএনপির মধ্যে নেতারা ভিন্ন সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন। তারা এখন ভারত বিরোধিতা থেকে সরে এসে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার বক্তব্য দিচ্ছেন।,
বিএনপির অন্তত দুজন নেতা ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ দিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য রেখেছেন। এদের মধ্যে একজন দলের প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অন্যজন আব্দুল আউয়াল মিন্টু। এই দুজনই দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছিলেন। যদিও তারা সফল হয়নি। এখন তারা নতুন করে ভারতের পক্ষে সাফাই গাইছেন। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।’
বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন, এখনও ভারতপন্থী নেতাদের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে বিএনপির ভিড়ের মধ্যে এবং ভারতের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক রাখার পর তাদেরকে প্রতিহত না করতে পারলে বিএনপির আন্দোলনে বিজয় কোনভাবেই সম্ভব নয়।
বিএনপির জন্মই হয়েছিল ভারত বিরোধিতার মাধ্যমে। জিয়াউর রহমান ভারত বিরোধিতাকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে একত্রিত করা ছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ, চৈনিক বাম এবং উগ্র বামপন্থীদেরকে একত্রিত করে তিনি বিএনপি গঠন করেছিলেন। যাদের একটি যোগসূত্র ছিল তা হলো ভারত বিরোধীতা। প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতা করলেও জিয়াউর রহমান ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক করার ক্ষেত্রেও আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কোণঠাসা করার জন্য ভারত বিরোধিতার জিকির তোলার কোনো বিকল্প ছিলনা জিয়াউর রহমানের হাতে। পরবর্তীতে এরশাদও প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতা শুরু করেন। যদিও সেই সময় তিনি প্রকাশ্যে এবং গোপনে ভারতের সাথে সুসম্পর্কেরও একটা আবহ তৈরি করেছিলেন।,
১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ভারত বিরোধিতাকে প্রধান উপজীব্য করেন রাজনীতিতে। একানব্বইয়ের নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে পড়বে, ফেনী পর্যন্ত ভারত দখল করে নেবে ইত্যাদি কথা বলে জনগণের মধ্যে এক ধরনের উস্কানি দিয়েছিলেন। তীব্র ভারতবিরোধিতার মাধ্যমেই তিনি ওই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন’।
২০০৮ সালের পর থেকে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। এখন বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় আসার জন্য ভারতের সঙ্গে একটা সমঝোতার চেষ্টা করেছিল বিএনপি নেতারা। কিন্তু বিএনপি জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং উগ্র মৌলবাদীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত বলেই মনে করে ভারত। তাছাড়া ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দেয়ার ক্ষেত্রেও বিএনপির অগ্রণী ভূমিকা আছে এমনটি মনে করে ভারতের নীতিনির্ধারকরা। এ কারণেই ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেনি। এখন যখন বিএনপির কোনো কোনো নেতা প্রকাশ্য ভারত বিরোধীতার অবস্থান নিতে চায় এবং মনে করে যে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী ভোট ব্যাংকগুলোকে একাট্টা করলেই আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করা যাবে তখন বিএনপির মধ্যে ভিন্ন অবস্থান দেখা যাচ্ছে। এই দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে কোন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায় সেটাই দেখার বিষয়।,