ঢাকা ০৬:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আজ মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা: রাজশাহীতে দেবীর চরণে ভক্তের শ্রদ্ধা রাউজানে মন্ডপে মন্ডপে চলছে দূর্গাপূজা রায়গঞ্জে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ৫ জনকে কারাদন্ড টেকনাফে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় অস্ত্রদিয়ে ফাঁসানো নিরপরাধ শহিদুল্লাহর মুক্তির দাবি নেতাদের শিক্ষক উন্নয়নের জন্য ইউনেস্কো-হামদান পুরস্কার পেয়েছে ‘গুড নেইবারস বাংলাদেশ’ বেলকুচিতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ভন্ড কবিরাজের বাড়িতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অভিযান   বিশ্ব শিক্ষক দিবসে নিজ সহকর্মিদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন গুণী শিক্ষক শওকত আলী বদির ক্যাশিয়ার ফারুককে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হলেন র‍্যাব সদস্যরা কাজিপুরের চরাঞ্চলের বিদ্যুতে শুভংকরের ফাঁকি ! চাহিদা ১০ বরাদ্দ মাত্র ২ মেগাওয়াট! 

২১ আগস্ট তারেক দুবাই গেলেন কেন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪০:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০২৩ ৫০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৪, ২১ আগস্ট শনিবার। এমিরেটসের ফ্লাইট ছাড়ার কথা রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে। যাত্রীরা সব উঠে গেছে। সবাই প্রস্তুত কিন্তু প্লেন ছাড়ছে না। এ সময়ই প্লেনে একটু তাড়াহুড়ো করেই উঠলেন দুজন যাত্রী। তারা উড়োজাহাজে ওঠার পরই গেট বন্ধ হয়ে গেল। প্লেন ছাড়ল। দুজনই ছিলেন চিন্তিত, কিছুটা উদ্বিগ্ন। এরা দুজন হলেন তারেক জিয়া এবং গিয়াসউদ্দিন আল মামুন।

পুরো শহর সেদিন ছিল উত্তপ্ত, বিক্ষুব্ধ। বিকেলে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। কোনোরকমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তাঁকে ধানমণ্ডি ৫ নম্বরে সুধা সদনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পুরো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হয়ে যায় রক্তাক্ত। ২৩ জন মারা যান, আহত হন শতাধিক। হাসপাতাল গুলোতে মানুষের চেয়ে ছোটাছুটি, আর্তনাদ, কান্না। রক্ত দিতে হাজির হন স্বত:স্ফূর্ত মানুষ। পুরো শহর যেন ঘটনার বিভৎসতায় হতবাক হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। গোটা শহর এক গণবিস্ফোরণের অপেক্ষায়।’

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন তারেক জিয়া। মাত্র কয়েকজন জানতেন এই পরিকল্পনার কথা। এদের মধ্যে ছিলেন মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার, হারিছ চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও ঘটনার কিছুই জানতেন না। জনসভার সময় তিনি তাঁর বাসায় ছিলেন। দিনটাও ছিল ছুটির দিন। ঘটনার পরপরই বাবরকে ফোন করেন পুলিশের আইজি। ঘটনা শুনে কিছু করণীয় সম্পর্কে নির্দেশ দেন। এর পরই তারেক ফোন করেন বাবরকে। বাবরকে ভৎর্সনাও করেন। তারপর বলেন, ‘যা হবার হয়ে গেছে, এটাকে ম্যানেজ করতে হবে।’ তারেক বাবরকে পার্টি অফিসেও কথা বলতে বলেন। এরপর মুহুর্মুহু ফোন। চারদিক থেকে খবর আসতে থাকে। এর মধ্যেই বাবর ছুটে যান নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে। যেখানে গিয়ে পান দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে। দুজনকেই তিনি ঘটনার বিস্তারিত বলেন। তাঁদের কাছে জানতে চান, তাদের কী মনে হয়, কারা ঘটিয়েছে এই ঘটনা? উত্তরে মান্নান ভূঁইয়া বেশ রেগেই বলেন, তোমার ভাইয়া। জিয়া একটা কুলাঙ্গার জন্ম দিয়ে গেছে।’ বাবর চালাক মানুষ, বুঝতে পারেন ঘটনা কী? দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে চলে যান মন্ত্রণালয়ে, বৈঠকে বসেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে।’

তারেক অপারেশন পরিচালনা করেন হাওয়া ভবন থেকে। গ্রেনেডগুলো চার্জ হবার পর, তাঁর কাছে স্পট থেকেই প্রথম ফোনটা আসে, তারেককে জানানো হয়, শেখ হাসিনা অবিশ্বাস্য ভাবে বেঁচে গেছেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এসময়ই তারেককে ফোন করেন বেগম খালেদা জিয়া। দ্রুত তাঁকে বাসায় আসতে বলেন। বাসা পৌঁছাতে পৌঁছাতেই মামুন এবং তারেক মানুষের ক্ষুব্ধতার খবর পেতে থাকেন। মামুনই প্রস্তাব দেন, এই সময় দেশে থাকা ঠিক নয়। যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। ক্যান্টনমেন্টের বাসায় পৌঁছে, বেগম জিয়ার সঙ্গে কয়েক মিনিটের আলাপ হয় তারেক মামুনের। তারেকের প্রথম চিন্তা ছিল, এটাকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করা। দ্বিতীয় চিন্তা ছিল, কাউকে ঘটনার জন্য দায়ী করে ঘটনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করা।’

বেগম জিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়েই তারেক মামুন ছুটে যান এয়ারপোর্টের দিকে। সব ব্যবস্থা আগেই করা ছিল। কিন্তু পৌছাতেই যা একটু দেরি হয়। তারেকের পরামর্শে বেগম জিয়া, দলের মহাসচিবকে বলেন, এটা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলে একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে। এটা দিতে মান্নান ভূঁইয়া অস্বীকৃতি জানান। তিনি পরামর্শ দেন, এখন কিছু না বলাই ভালো। কিন্তু তারেকের অনুগত দুই মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান এবং রুহুল কুদ্দুস দুলু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এই ঘটনা।‘ এমন কি বেগম জিয়া বলেন ‘শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন।‘ তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে প্রথম কৌশল থেকে সরে এসে বিএনপি জজ মিয়ার নাটক সাজায়। সব কিছু ম্যানেজ হবার পর ২৮ আগস্ট তারেক জিয়া দেশে ফেরেন।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

২১ আগস্ট তারেক দুবাই গেলেন কেন

আপডেট সময় : ১১:৪০:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৪, ২১ আগস্ট শনিবার। এমিরেটসের ফ্লাইট ছাড়ার কথা রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে। যাত্রীরা সব উঠে গেছে। সবাই প্রস্তুত কিন্তু প্লেন ছাড়ছে না। এ সময়ই প্লেনে একটু তাড়াহুড়ো করেই উঠলেন দুজন যাত্রী। তারা উড়োজাহাজে ওঠার পরই গেট বন্ধ হয়ে গেল। প্লেন ছাড়ল। দুজনই ছিলেন চিন্তিত, কিছুটা উদ্বিগ্ন। এরা দুজন হলেন তারেক জিয়া এবং গিয়াসউদ্দিন আল মামুন।

পুরো শহর সেদিন ছিল উত্তপ্ত, বিক্ষুব্ধ। বিকেলে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। কোনোরকমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তাঁকে ধানমণ্ডি ৫ নম্বরে সুধা সদনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পুরো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হয়ে যায় রক্তাক্ত। ২৩ জন মারা যান, আহত হন শতাধিক। হাসপাতাল গুলোতে মানুষের চেয়ে ছোটাছুটি, আর্তনাদ, কান্না। রক্ত দিতে হাজির হন স্বত:স্ফূর্ত মানুষ। পুরো শহর যেন ঘটনার বিভৎসতায় হতবাক হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। গোটা শহর এক গণবিস্ফোরণের অপেক্ষায়।’

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন তারেক জিয়া। মাত্র কয়েকজন জানতেন এই পরিকল্পনার কথা। এদের মধ্যে ছিলেন মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার, হারিছ চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও ঘটনার কিছুই জানতেন না। জনসভার সময় তিনি তাঁর বাসায় ছিলেন। দিনটাও ছিল ছুটির দিন। ঘটনার পরপরই বাবরকে ফোন করেন পুলিশের আইজি। ঘটনা শুনে কিছু করণীয় সম্পর্কে নির্দেশ দেন। এর পরই তারেক ফোন করেন বাবরকে। বাবরকে ভৎর্সনাও করেন। তারপর বলেন, ‘যা হবার হয়ে গেছে, এটাকে ম্যানেজ করতে হবে।’ তারেক বাবরকে পার্টি অফিসেও কথা বলতে বলেন। এরপর মুহুর্মুহু ফোন। চারদিক থেকে খবর আসতে থাকে। এর মধ্যেই বাবর ছুটে যান নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে। যেখানে গিয়ে পান দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে। দুজনকেই তিনি ঘটনার বিস্তারিত বলেন। তাঁদের কাছে জানতে চান, তাদের কী মনে হয়, কারা ঘটিয়েছে এই ঘটনা? উত্তরে মান্নান ভূঁইয়া বেশ রেগেই বলেন, তোমার ভাইয়া। জিয়া একটা কুলাঙ্গার জন্ম দিয়ে গেছে।’ বাবর চালাক মানুষ, বুঝতে পারেন ঘটনা কী? দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে চলে যান মন্ত্রণালয়ে, বৈঠকে বসেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে।’

তারেক অপারেশন পরিচালনা করেন হাওয়া ভবন থেকে। গ্রেনেডগুলো চার্জ হবার পর, তাঁর কাছে স্পট থেকেই প্রথম ফোনটা আসে, তারেককে জানানো হয়, শেখ হাসিনা অবিশ্বাস্য ভাবে বেঁচে গেছেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এসময়ই তারেককে ফোন করেন বেগম খালেদা জিয়া। দ্রুত তাঁকে বাসায় আসতে বলেন। বাসা পৌঁছাতে পৌঁছাতেই মামুন এবং তারেক মানুষের ক্ষুব্ধতার খবর পেতে থাকেন। মামুনই প্রস্তাব দেন, এই সময় দেশে থাকা ঠিক নয়। যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। ক্যান্টনমেন্টের বাসায় পৌঁছে, বেগম জিয়ার সঙ্গে কয়েক মিনিটের আলাপ হয় তারেক মামুনের। তারেকের প্রথম চিন্তা ছিল, এটাকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করা। দ্বিতীয় চিন্তা ছিল, কাউকে ঘটনার জন্য দায়ী করে ঘটনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করা।’

বেগম জিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়েই তারেক মামুন ছুটে যান এয়ারপোর্টের দিকে। সব ব্যবস্থা আগেই করা ছিল। কিন্তু পৌছাতেই যা একটু দেরি হয়। তারেকের পরামর্শে বেগম জিয়া, দলের মহাসচিবকে বলেন, এটা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলে একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে। এটা দিতে মান্নান ভূঁইয়া অস্বীকৃতি জানান। তিনি পরামর্শ দেন, এখন কিছু না বলাই ভালো। কিন্তু তারেকের অনুগত দুই মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান এবং রুহুল কুদ্দুস দুলু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এই ঘটনা।‘ এমন কি বেগম জিয়া বলেন ‘শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন।‘ তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে প্রথম কৌশল থেকে সরে এসে বিএনপি জজ মিয়ার নাটক সাজায়। সব কিছু ম্যানেজ হবার পর ২৮ আগস্ট তারেক জিয়া দেশে ফেরেন।’