একটি গল্প: গৌতম বুদ্ধ ও সুজাতার পায়েশ
- আপডেট সময় : ১১:৫৫:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩ ১০৭ বার পড়া হয়েছে
কিংবদন্তি আছে সেনানী(Senani)নামক এক গ্রামের ধণিক কৃষক পরিবারের সুন্দরী কুমারী কণ্যা ছিলেন সুজাতা। সুজাতা স্বপ্ন দেখতেন উপযুক্ত স্বামী ও সন্তানের।কিন্তু তার আশা পূরণ হচ্ছিলনা। লোকজন উপদেশ দিলেন নীরঞ্জনা নদীর তীরে একটি নির্দিষ্ট বটবৃক্ষের নীচে গিয়ে বৃক্ষ দেবতার কাছে কাঙ্খিত স্বামী ও সন্তানের জন্য প্রার্থনা করতে। সে তাদের কথামত তাই করলো। শীঘ্রই তার বিয়ে হলো এবং এক সন্তান কোলে এলো। এজন্য বৃক্ষদেবতাকে প্রতিদান দিয়ে খুশী করতে চাইল।
সুজাতাদের ছিল বিশাল গো-পাল। সেখান থেকে এক হাজার গাভী বেঁছে নিল। গাভীগুলোকে কয়েকদিন মধু মিশ্রিত খড় খাওয়াল। তারপর তাদের দুধ সংগ্রহ করে ৫০০গাভী বেঁছে নিয়ে তাদের সেই দুধ পান করাল। তারপর এদের থেকে ২৫০টি বেঁছে নিয়ে দুধ পান করাল। এভাবে গাভীর সংখ্যা দাঁড়াল ৮টিতে। এমনটি করার উদ্দেশ্য ছিল ভাল স্বাদের পুষ্টিকর দুধ পাবার জন্য।
৮টি গাভীর দুধ দিয়ে সে পায়েশ রান্না করতে লাগল।লোক পাঠাল বটবৃক্ষের চারিদিকের ঘাস, জঙ্গল পরিস্কার করার জন্য। পায়েশ রান্না শেষ হবার পর লোকটি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। জানাল বটবৃক্ষের নীচে স্বয়ং বৃক্ষদেবতা ধ্যান করছেন।
উত্তেজনা নিয়ে সুজাতা একটি স্বর্ণের বাটিতে পায়েশ নিয়ে বটগাছের নীচে গেলেন। দেখলেন এক সৌম্য -শান্ত পবিত্র লোক ধ্যান করছেন। সুজাতা তাকে বৃক্ষদেবতা ভাবলেন। সুজাতা পায়েসের বাটি ধ্যান-মগ্ন তপস্বীর সামনে রেখে উপুড় হয়ে সম্মান জানিয়ে প্রার্থনা করলেন,’প্রভু আমার এই সামান্য দান গ্রহন করুন। আমি যেমন সফলতা লাভ করেছি,তেমনি আপনার মনের ইচ্ছেও নিশ্চয় পূর্ণ হবে।’
সুজাতা যাকে বৃক্ষদেবতা ভেবেছিলেন তিনি ছিলেন স্বয়ং মহারাজ গৌতম। সিদ্বার্থ গৌতম ঐ পায়েশ ৪৯ভাগে ভাগ করেন। প্রতিদিনের জন্য এক ভাগ।৪৯তম দিনে বুদ্ধের ধ্যান ভঙ্গ হলে তিনি শেষবারের পায়েশের অংশ খেয়ে উঠে দাড়ালেন। নিরঞ্জনা নদীতে গেলেন স্নান করতে। নদীর পানিতে নেমে সোনার বাটি নদীর পানিতে ছুঁড়ে ফেলে বললেন,
“যদি আজ আমি বুদ্ধ হয়ে থাকি, তবে এই বাটি স্রোতের প্রতিকুলে ভেসে যাক,আর যদি না হয়ে থাকি তবে তা অনুকুলে যাক।”
বাটিটি স্রোতের প্রতিকুলে নদীতে ভেসে গেল। গৌতম বুদ্ধের হলো বোধিলাভ।
গল্পটি লিখেছেন পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ, এমপি সুনামগঞ্জ -৫।