ঢাকা ১২:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
শিক্ষক উন্নয়নের জন্য ইউনেস্কো-হামদান পুরস্কার পেয়েছে ‘গুড নেইবারস বাংলাদেশ’ বেলকুচিতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ভন্ড কবিরাজের বাড়িতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অভিযান   বিশ্ব শিক্ষক দিবসে নিজ সহকর্মিদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন গুণী শিক্ষক শওকত আলী বদির ক্যাশিয়ার ফারুককে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হলেন র‍্যাব সদস্যরা কাজিপুরের চরাঞ্চলের বিদ্যুতে শুভংকরের ফাঁকি ! চাহিদা ১০ বরাদ্দ মাত্র ২ মেগাওয়াট!  স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ  কাজিপুরে ধর্ষণের অভিযোগে অফিস সহকারি গ্রেপ্তার বেলকুচিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত রায়গঞ্জে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উদযাপিত 

ভারত কেন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় হলো

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৫২:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৩ ২৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথম দুই বছর ভারত মোটামুটি নীরব ছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত এক বছর থেকে যখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানামুখী তৎপরতা লিপ্ত তখনও ভারতের ভূমিকা ছিল রহস্যময়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছিল ভারত আসলে কি চায়? ভারত কি এবার নীরবতা অবলম্বন করবে? এর মধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ভারতের এই নীরবতা অনেকের কাছেই অনেক রকম প্রশ্ন তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীরবতা ভেঙে ভারত সসিক্রয় হলো। শুধু সক্রিয় হলো না, আগামী নির্বাচন নিয়ে বাইরের দেশগুলোর যে তৎপরতা সেই তৎপরতায় চালকের আসন দখল করে নিয়েছে ভারত। প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে নির্বাচনের আগে গত এক মাস ধরে ভারত কেন বাংলাদেশের ব্যাপারে এত তৎপর, এত সক্রিয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া গেছে চারটি কারণ। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে;

১. ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা অবরোধ করা: ভারতের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের প্রধানতম কারণ হলো ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ভারতে নানা রকম বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বিভিন্ন সময় ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা বন্ধ হতে থাকে। এখন এটি শূন্যে নেমে এসেছে। ভারতের বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্করা মনে করেন যে, কয়েক হাজার কোটি রুপি সাশ্রয় হচ্ছে ভারতের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বন্ধ হওয়ার কারণে। অতীতে বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই এ ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নানাভাবে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা ছিল বাড়াবাড়ি পর্যায়ে। ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি নষ্ট হয়, বাংলাদেশে যদি শেখ হাসিনার বদলে অন্য কোন রাজনৈতিক দল বা অন্য কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে তাহলে আবার বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা শুরু হতে পারে। যেটা ভারতের উন্নয়নের অব্যাহত ধারার জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে ভারত মরিয়া হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এবং এই নির্বাচনে যেন কোনোভাবেই কোনো অন্য শক্তি আসতে না পারে সে ব্যাপারে ভারত কথা বলছে কোনরকম রাখঢাক ছাড়াই।

২. জঙ্গিবাদের উত্থান: ভারত মনে করে যে, এই উপমহাদেশের প্রধান শত্রু হলো জঙ্গিবাদ। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বিরোধের প্রধান কারণ হলো পাকিস্তান জঙ্গিবাদীদের লালন করে এবং জঙ্গিবাদীদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়। আর পাকিস্তানের এই আশ্রয়-প্রশ্রয় কারণে বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা ভারত সবসময় করে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ করেছে। জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাকে ভারত গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আর ভারত মনে করে যে, এমন কোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা উচিত নয়, যারা জঙ্গিবাদকে লালন করবে, আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে।

৩. বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান: ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশে আর যাই হোক কোনোভাবেই যেন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান ঘটতে না পারে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে তালেবান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর ভারত এ ব্যাপারে আরও সচেতন। আর এ কারণেই বাংলাদেশে যেন কোনোভাবেই আগামী নির্বাচনে একটি সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে চায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। ভারত মনে করে যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তির যোগসাজশ রয়েছে। আর এ কারণেই ভারত এই সমস্ত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় দেখতে চায়না।

৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাণিজ্য সহযোগিতা: ভারতের পক্ষ থেকে খোলামেলা ভাবে বলা হয় যে, গত এক যুগে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন মাত্রা উপণিত হয়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস এবং আস্থার জন্য। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক যেমন বেড়েছে তেমনি বাংলাদেশ ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে ভারতকেও একটি সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। এই পরিস্থিতি পাল্টাতে চায় না ভারত।

মূলত ভারতের নিজেদের অভ্যন্তরীণ কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচন দেশটির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কারণেই ভারত এখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক বেশি সক্রিয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ভারত কেন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় হলো

আপডেট সময় : ০৯:৫২:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথম দুই বছর ভারত মোটামুটি নীরব ছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত এক বছর থেকে যখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানামুখী তৎপরতা লিপ্ত তখনও ভারতের ভূমিকা ছিল রহস্যময়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছিল ভারত আসলে কি চায়? ভারত কি এবার নীরবতা অবলম্বন করবে? এর মধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ভারতের এই নীরবতা অনেকের কাছেই অনেক রকম প্রশ্ন তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীরবতা ভেঙে ভারত সসিক্রয় হলো। শুধু সক্রিয় হলো না, আগামী নির্বাচন নিয়ে বাইরের দেশগুলোর যে তৎপরতা সেই তৎপরতায় চালকের আসন দখল করে নিয়েছে ভারত। প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে নির্বাচনের আগে গত এক মাস ধরে ভারত কেন বাংলাদেশের ব্যাপারে এত তৎপর, এত সক্রিয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া গেছে চারটি কারণ। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে;

১. ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা অবরোধ করা: ভারতের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের প্রধানতম কারণ হলো ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ভারতে নানা রকম বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বিভিন্ন সময় ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা বন্ধ হতে থাকে। এখন এটি শূন্যে নেমে এসেছে। ভারতের বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্করা মনে করেন যে, কয়েক হাজার কোটি রুপি সাশ্রয় হচ্ছে ভারতের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বন্ধ হওয়ার কারণে। অতীতে বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই এ ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নানাভাবে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা ছিল বাড়াবাড়ি পর্যায়ে। ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি নষ্ট হয়, বাংলাদেশে যদি শেখ হাসিনার বদলে অন্য কোন রাজনৈতিক দল বা অন্য কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে তাহলে আবার বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা শুরু হতে পারে। যেটা ভারতের উন্নয়নের অব্যাহত ধারার জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে ভারত মরিয়া হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এবং এই নির্বাচনে যেন কোনোভাবেই কোনো অন্য শক্তি আসতে না পারে সে ব্যাপারে ভারত কথা বলছে কোনরকম রাখঢাক ছাড়াই।

২. জঙ্গিবাদের উত্থান: ভারত মনে করে যে, এই উপমহাদেশের প্রধান শত্রু হলো জঙ্গিবাদ। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বিরোধের প্রধান কারণ হলো পাকিস্তান জঙ্গিবাদীদের লালন করে এবং জঙ্গিবাদীদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়। আর পাকিস্তানের এই আশ্রয়-প্রশ্রয় কারণে বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা ভারত সবসময় করে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ করেছে। জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাকে ভারত গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আর ভারত মনে করে যে, এমন কোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা উচিত নয়, যারা জঙ্গিবাদকে লালন করবে, আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে।

৩. বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান: ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশে আর যাই হোক কোনোভাবেই যেন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান ঘটতে না পারে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে তালেবান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর ভারত এ ব্যাপারে আরও সচেতন। আর এ কারণেই বাংলাদেশে যেন কোনোভাবেই আগামী নির্বাচনে একটি সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে চায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। ভারত মনে করে যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তির যোগসাজশ রয়েছে। আর এ কারণেই ভারত এই সমস্ত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় দেখতে চায়না।

৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাণিজ্য সহযোগিতা: ভারতের পক্ষ থেকে খোলামেলা ভাবে বলা হয় যে, গত এক যুগে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন মাত্রা উপণিত হয়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস এবং আস্থার জন্য। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক যেমন বেড়েছে তেমনি বাংলাদেশ ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে ভারতকেও একটি সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। এই পরিস্থিতি পাল্টাতে চায় না ভারত।

মূলত ভারতের নিজেদের অভ্যন্তরীণ কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচন দেশটির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কারণেই ভারত এখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক বেশি সক্রিয়।