ঢাকা ০৪:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের নতুন সদস্য হলেন ২৫ গণমাধ্যম কর্মী রাজনৈতিক দলের সাথে মামলায় জড়িয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি না করার আহবান জোড়া কবরে শুয়ে রইলেন তারা, নিভে গেল দুই পরিবারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন সলঙ্গা থানা ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়কের নামে থানায় অভিযোগ  প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তপূর্বক অপসারণের দাবী রাজশাহীতে বৈষম্যমুক্ত নগরের দাবিতে আলোচনা সভা  বেলকুচিতে হত্যাকান্ডের বিচার ও পি আর পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গণ সমাবেশ রামেকে একসঙ্গে ৫ সন্তানের জন্ম দিলেন প্রবাসীর স্ত্রী সলঙ্গায় সাংবাদিকের উপর যুবদল নেতার হামলার অভিযোগ  খাজা মেডিকেল প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ আমজাদ হোসেনের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প 

৫ ছেলের ঘরে ঠাঁই হয়নি। কবরস্থানের পাশে বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে রেখে গেছে সন্তানেরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:০০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৩ ১৮২ বার পড়া হয়েছে

সেলিম রেজা স্টাফ রিপোর্টার: কবরস্থানের পাশে বসে বাকরুদ্ধ বৃদ্ধ দম্পত্তি। এক সময় তাদের চোখে মুখে স্বপ্ন ছিল সন্তানেরা বড় হবে। এজন্য জীবনের পুরোটা সময় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেছে। অসময়ে একটু হলেও শান্তি ও আরাম আয়েশে সময় কাটানো সহ আর কত কি, কিন্তু সেসব স্বপ্ন পুরন হলো না। যমুনা নদীর ভাঙনে বসত ভিটা হারিয়ে সন্তানেরা যার যার মত সুবিধা মত যায়গায় চলে গেলেও বাবা-মায়ের ঠাই হলো না পাঁচ ছেলের সংসারে। তাই নির্জন কবরস্থানের পাশে সড়কে ফেলে রেখে গেছে স্বজনেরা। ঘটনাটি চৌহালী উপজেলার সম্ভুদিয়া জান্নাতুল বাকি কবরস্থান এলাকায়।

জানা যায়, চৌহালী উপজেলার দুর্গম উমারপুর ইউনিয়ননের হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা হামিদ মোল্লা (৮৬) ও ও তার স্ত্রী ফজিলা খাতুনকে (৭৭) দীর্ঘদিন পাঁচ ছেলে ভাগাভাগি করে ভরপোষন করে আসছিলেন। তবে যমুনার ভাঙনে তাদের বসত ভিটা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় এক ছেলে একেক জায়গায় চলে যায়। এসময় শুরু হয় কে টানবে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে। শুরু হয় অযন্ত্র অবহেলা। এ নিয়ে চলে বেশ দেন ধরবার, পাঁচ ছেলের কার বাড়িতে থাকবে বাবা মা। কিন্তু সর্বশেষ কোথায়ও ঠাই হয়নি কর্মঅক্ষম ও বাবা-মায়ের।’

স্থানীয়রা জানান, নদী ভাঙনের কারণে প্রায় ২ মাস আগে সেজ ছেলে এর বউ মানিকগঞ্জের বাড়ি থেকে হাঁপানিয়া চরে পাঠিয়ে দেয় শশুর-শাশুড়িকে। চরে বৃদ্ধর ভাগ্নের বাড়িতে কিছু দিন আশ্রয় পেয়েছিল। তবে কিছু দিন যেতে না যেতেই তারাও অবহেলা করতে থাকে। এক পর্যায়ে কয়েকদিন আগে পাশের বাঘুটিয়া ইউনিয়ন সদর সংলগ্ন বৃদ্ধদের মেয়ের বাড়ির সংলগ্ন সম্ভুদিয়া কবরস্থানে কাউকে না জানিয়ে রেখে যায় স্বজনেরা।

পরে ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কান্নাকাটি দেখে স্থানীয়রা তাদের সাথে কথা বলে। এসময় তারা জানান, এখানে তার মেয়ের বাড়ি। খবরটি পেয়ে বৃদ্ধার মেয়ে মনোয়ারা খাতুন এসে বাড়িতে নিয়ে যায়। এদিকে বৃদ্ধর মেয়ে স্বামীহারা হয়েছেন অনেক দিন আগে। এখন স্বামী হারা মেয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে। ওই মেয়ের পক্ষে তাদের ভরণপোষণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে’।

এ বিষয়ে মেয়ে মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমি নিজেই স্বামী হারা। এখন সন্তানের সন্তানদের সংসারে থাকি । আমার পাঁচ ভাইয়ের কেউ বাবা মাকে ভরনপোষণ দিবে না। এই বৃদ্ধ বয়সে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিছে। সম্পদ যা ছিলো সব ভাইয়েরা বিক্রি করে দিছে। কয়েক দিন আগে আমার বাড়ির পাশে ভাইয়েরা কিছু না জানিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। অভাব অনটনের সংসারে বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা মাকে ভরণপোষণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোল্লা জানান, বৃদ্ধ দম্পত্তিকে দেখতে গিয়েছিলাম। কবরস্থানের পাশে তারা রয়েছে। তাদের নিজ বাড়ি উমারপুর ইউনিয়নে হলেও মেয়ের বাড়ি বাঘুটিয়া। তাদেরকে সব রকম সহায়তা করা হবে’।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান জানান, বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে রেখে গেছে সন্তানেরা এমন খবরটি পাওয়ার পর স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে তাদেরকে সবরকম সহায়তা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দ্রুতই ওই বাবা-মাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহয়তা সহ একটি সুন্দর ব্যবস্থা করা হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

৫ ছেলের ঘরে ঠাঁই হয়নি। কবরস্থানের পাশে বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে রেখে গেছে সন্তানেরা

আপডেট সময় : ০৮:০০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৩

সেলিম রেজা স্টাফ রিপোর্টার: কবরস্থানের পাশে বসে বাকরুদ্ধ বৃদ্ধ দম্পত্তি। এক সময় তাদের চোখে মুখে স্বপ্ন ছিল সন্তানেরা বড় হবে। এজন্য জীবনের পুরোটা সময় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেছে। অসময়ে একটু হলেও শান্তি ও আরাম আয়েশে সময় কাটানো সহ আর কত কি, কিন্তু সেসব স্বপ্ন পুরন হলো না। যমুনা নদীর ভাঙনে বসত ভিটা হারিয়ে সন্তানেরা যার যার মত সুবিধা মত যায়গায় চলে গেলেও বাবা-মায়ের ঠাই হলো না পাঁচ ছেলের সংসারে। তাই নির্জন কবরস্থানের পাশে সড়কে ফেলে রেখে গেছে স্বজনেরা। ঘটনাটি চৌহালী উপজেলার সম্ভুদিয়া জান্নাতুল বাকি কবরস্থান এলাকায়।

জানা যায়, চৌহালী উপজেলার দুর্গম উমারপুর ইউনিয়ননের হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা হামিদ মোল্লা (৮৬) ও ও তার স্ত্রী ফজিলা খাতুনকে (৭৭) দীর্ঘদিন পাঁচ ছেলে ভাগাভাগি করে ভরপোষন করে আসছিলেন। তবে যমুনার ভাঙনে তাদের বসত ভিটা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় এক ছেলে একেক জায়গায় চলে যায়। এসময় শুরু হয় কে টানবে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে। শুরু হয় অযন্ত্র অবহেলা। এ নিয়ে চলে বেশ দেন ধরবার, পাঁচ ছেলের কার বাড়িতে থাকবে বাবা মা। কিন্তু সর্বশেষ কোথায়ও ঠাই হয়নি কর্মঅক্ষম ও বাবা-মায়ের।’

স্থানীয়রা জানান, নদী ভাঙনের কারণে প্রায় ২ মাস আগে সেজ ছেলে এর বউ মানিকগঞ্জের বাড়ি থেকে হাঁপানিয়া চরে পাঠিয়ে দেয় শশুর-শাশুড়িকে। চরে বৃদ্ধর ভাগ্নের বাড়িতে কিছু দিন আশ্রয় পেয়েছিল। তবে কিছু দিন যেতে না যেতেই তারাও অবহেলা করতে থাকে। এক পর্যায়ে কয়েকদিন আগে পাশের বাঘুটিয়া ইউনিয়ন সদর সংলগ্ন বৃদ্ধদের মেয়ের বাড়ির সংলগ্ন সম্ভুদিয়া কবরস্থানে কাউকে না জানিয়ে রেখে যায় স্বজনেরা।

পরে ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কান্নাকাটি দেখে স্থানীয়রা তাদের সাথে কথা বলে। এসময় তারা জানান, এখানে তার মেয়ের বাড়ি। খবরটি পেয়ে বৃদ্ধার মেয়ে মনোয়ারা খাতুন এসে বাড়িতে নিয়ে যায়। এদিকে বৃদ্ধর মেয়ে স্বামীহারা হয়েছেন অনেক দিন আগে। এখন স্বামী হারা মেয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে। ওই মেয়ের পক্ষে তাদের ভরণপোষণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে’।

এ বিষয়ে মেয়ে মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমি নিজেই স্বামী হারা। এখন সন্তানের সন্তানদের সংসারে থাকি । আমার পাঁচ ভাইয়ের কেউ বাবা মাকে ভরনপোষণ দিবে না। এই বৃদ্ধ বয়সে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিছে। সম্পদ যা ছিলো সব ভাইয়েরা বিক্রি করে দিছে। কয়েক দিন আগে আমার বাড়ির পাশে ভাইয়েরা কিছু না জানিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। অভাব অনটনের সংসারে বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা মাকে ভরণপোষণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোল্লা জানান, বৃদ্ধ দম্পত্তিকে দেখতে গিয়েছিলাম। কবরস্থানের পাশে তারা রয়েছে। তাদের নিজ বাড়ি উমারপুর ইউনিয়নে হলেও মেয়ের বাড়ি বাঘুটিয়া। তাদেরকে সব রকম সহায়তা করা হবে’।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান জানান, বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে রেখে গেছে সন্তানেরা এমন খবরটি পাওয়ার পর স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে তাদেরকে সবরকম সহায়তা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দ্রুতই ওই বাবা-মাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহয়তা সহ একটি সুন্দর ব্যবস্থা করা হবে।’