রাজনীতিতে গুড বয় সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র
- আপডেট সময় : ১০:১৩:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৩ ৩১ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি তৃতীয় ধারার সৃষ্টির চেষ্টা করে। এই তৃতীয় ধারা সৃষ্টির চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের আজকের নয়। ১৯৭৫-এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র রাজনীতিতে তৃতীয় ধারার চেষ্টা করেছিল। জিয়াউর রহমানের শাসনামলেও যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট ছিল। জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন বিষয়ে সে কারণেই হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে দিয়ে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গঠনের চেষ্টা করা হয়েছিল, তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরশাদ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে শেষ পর্যন্ত রাজনীতির তৃতীয় ধারা তৈরি করতে পারেননি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর ড. কামাল হোসেনকে যুক্তরাষ্ট্র ‘গুড বয়’ বিবেচনা করে তার নেতৃত্বে একটি সুশীল প্লাটফর্ম তৈরি করার চেষ্টা করেছিল এবং রাজনীতিতে যেন একটা তৃতীয় ধারা তৈরি হয় সে লক্ষ্য থেকে গণফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ড. কামাল হোসেনের উদ্যোগও সফল হয়নি। ২০০৬ সালেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চেয়েছিল এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তিকে জড় করে একটা বিকল্প রাজনৈতিক ধারার সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফল হয়নি’।
এবার আবার রাজনীতিতে আরেকটি তৃতীয় ধারার সৃষ্টির গুঞ্জন রয়েছে। জানা গেছে, এবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে গুড বয়’দেরকে নিয়ে একটি বিকল্প ও শুদ্ধ রাজনৈতিক চর্চা কেন্দ্র তৈরি করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে এগোচ্ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনীতিকরা। এই কারণেই রেজা কিবরিয়াকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রেজা কিবরিয়া যে রাজনৈতিক নেতা হওয়ার যোগ্য না সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ভালো ভাবে অনুভব করেছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি এবং যারা বাংলাদেশে সুশীল হিসেবে পরিচিত তারা এখন স্থির বিশ্বাসে উপনীত হয়েছেন যে, বাংলাদেশে তৃতীয় ধারা এবং সুশীলদের স্বার্থরক্ষা জন্য কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম করতে গেলে এমন ব্যক্তিদের দরকার যাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিন্তু পাশাপাশি যারা গুড বয় হিসেবে পরিচিত। গুড বয় বলতে সুশীলরা বুঝাচ্ছেন এমন ব্যক্তি যাদের রাজনীতিতে কোনো নেতিবাচক ক্ষত নাই, যারা পরিচ্ছন্ন ইমেজের, দুর্নীতি বা অন্যান্য বিষয়ে যাদের কোনো নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না- এরকম ব্যক্তিদের। এরকম ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে তারা গুড বয়’দেরকে একত্রিত করে একটি তৃতীয় ধারা সৃষ্টির নীরব চেষ্টা করছে।’
বিএনপি থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টি থেকে জিএম কাদের, আওয়ামী লীগ থেকে ড. আব্দুর রাজ্জাকের মত ব্যক্তিদেরকে এক করার চেষ্টা এখন রাজনীতির মাঠে একটি বড় খবর। এরকম উদ্যোগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জিএম কাদেরের অনেকটা সায় আছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ক্রীড়াশীল সুশীল গোষ্ঠা। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাউকে এই প্ল্যাটফর্মের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সম্মত করা যায়নি।’
ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে সুশীলদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে এবং ড. আব্দুর রাজ্জাক তাদের প্রিয় বটে। কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি রাজনীতিতে যে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন সেখান থেকে সুশীল প্লাটফর্মে জায়গা নিয়ে নিজেকে বিতর্কিত করতে চান না। তাছাড়া আওয়ামী লীগের অন্যান্য যারা সুশীলদের আস্থাভাজন এবং প্রিয়ভাজন আছেন তারাও এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ছেড়ে যেতে আগ্রহী নয়। কাজেই তৃতীয় ধারা শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র জাতীয় পার্টি আর বিএনপির গুড বয় রাজনীতিবিদদের নিয়ে হবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। নাকি অন্যান্য বারের মত এবারও এই নিরীক্ষা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে।