আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ কে: ড. ইউনূস না বিএনপি
- আপডেট সময় : ০৭:২১:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৩ ৩১ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ কি-এই প্রশ্ন এখন রাজনীতির মাঠে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই যেন আওয়ামী লীগ আক্রমণের কামান ড. ইউনূসের দিকে ঘুরিয়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইউনূসের সঙ্গে সরকারের দ্বৈরথ এবং বিরোধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনাম হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠেছে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ কে? ড. ইউনূস নাকি বিএনপি?
বিএনপি এক দফা আন্দোলন করেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা সকাল-সন্ধ্যা বিএনপির সমালোচনা করছেন। বিএনপির আন্দোলনের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তুলে ধরছেন। কিন্তু বিএনপির আন্দোলনের মাঝপথে দলের মহাসচিব এবং আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতার বিদেশ যাত্রা আন্দোলনকে কাদায় আটকে দিয়েছে। আর এই সময়ে যে বিএনপিকে আওয়ামী লীগ আরও কোণঠাসা করবে তার বদলে আওয়ামী লীগ যুদ্ধক্ষেত্রের আরেকটি দরজা খুলে দিয়েছে। সেই দরজাটি হল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে লড়াই।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে দান করের মামলায় ড. ইউনূস পরাজিত হয়েছেন। ১২ কোটি টাকার বেশি তিনি দান কর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছেন। এখন ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দেওয়ানী এবং ফৌজদারি দুটি মামলাই চলছে। দুর্নীতি দমন কমিশন অর্থপাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের তদন্ত করছে। এই সবের প্রেক্ষিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস লবিস্ট ফার্ম ভাড়া করেছেন সিজিয়ন পিআর নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বিবৃতি সংগ্রহ করেছেন। ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, হিলারি ক্লিনটন ইউনূসের পক্ষে বিশ্বের নেতৃবৃন্দকে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়ে এক টুইট বার্তা দিয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে এখন ইউনূস বনাম বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধ দৃশ্যমান হচ্ছে’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এর ফলে স্পষ্ট হয়ে গেছে সরকার ইউনূসের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। সরকার যেমন বিএনপিকেও আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে দেবে না তেমনি ইউনূসের ব্যাপারেও তার অবস্থান থেকে সরে আসবে মনে হচ্ছে’।
দুই দিক থেকে সরকার কেন যুদ্ধ করছে-এরকম প্রশ্ন জনমনে উঠেছে। সরকার কি ইচ্ছে করেই যুদ্ধের সবগুলো ফ্রন্ট খুলে দিচ্ছে নাকি সরকারকে জ্বালে প্যাঁচানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এসব করছে—এই প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দু’ধরনের মতামত। কেউ কেউ মনে করছেন, ইউনূস এবং বিএনপি ইস্যুটি একটি অন্যটির পরিপূরক। দুটি আলাদা কিছু নয়। বিএনপির আন্দোলন এবং বিএনপিকে পুনর্জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, সুশাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলে বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে আবার জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসল লক্ষ্য হল বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকারকে দীর্ঘসময়ের জন্য ক্ষমতায় রাখা। আর এটি রাখার ক্ষেত্রে ড. ইউনূস তাদের বড় একজন পরামর্শ বা উপদেষ্টা কিংবা পছন্দের ব্যক্তি।’
এর আগে ২০০৭ সালে যখন এক-এগারো আনা হয়েছিল তখন ড. ইউনূসকে মাথায় রেখেই অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনা হয়েছে। কিন্তু সেই সময় ড. ইউনূস রাজি হননি এই কারণে যে একটি মাত্র দুই বছরের মেয়াদে থাকবে।’
বর্তমানে ড. ইউনূস ৮৩ বছর বয়স্ক। তিনি নিঃসন্দেহে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বা অনির্বাচিত সরকার প্রধান হবেন না। কিন্তু তিনি যে আওয়ামী লীগকে হটাতে চান তার নিজের অস্তিত্বের জন্যই, তার মামলা এবং দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তির জন্য এটি আর গোপন বিষয় নয়।ড. ইউনূস তার মামলা এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই বিরোধী দলের আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকেও প্রচ্ছন্নভাবে উস্কে দিতে চান। আর এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সরকারের সাথে একটা মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে। আসলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আর বিএনপি একই সূত্রে গাঁথা। সরকার দুই শক্রকেই একসঙ্গে টার্গেট করেছে। নাহলে এই দুই শক্রর সমঝোতা সরকারকে দুর্বল করে ফেলবে।”