ভারতীয় কূটনৈতিকদের সাথে সিঙ্গাপুরে ফখরুল-আব্বাসের বৈঠক
- আপডেট সময় : ০৮:৪৮:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩ ১২৩ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এখন সিঙ্গাপুরে গেছেন। বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন আগে থেকেই সিঙ্গাপুরে আছেন। তিনি সত্যি সত্যি শারীরিকভাবে অসুস্থ। কিন্তু অন্য দুইজনের অসুস্থতা ততটা গুরুতর নয়। তারা চিকিৎসার জন্য নয় বরং অন্য কোনো বিশেষ মিশনে সিঙ্গাপুরে গেছেন বলে বিভিন্ন মহল মনে করেন।
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, মির্জা আব্বাস এবং ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের সিঙ্গাপুর সফরকালে অন্তত তিন জন ভারতীয় কূটনৈতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে তাদের নাম পরিচয় ইত্যাদি বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। সূত্রগুলো বলছে, এদের অন্তত একজন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যক্তি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা আগামী নির্বাচন বিএনপি’র অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে’।
ভারতে না গিয়ে কেন সিঙ্গাপুরে এই ধরনের বৈঠক হলো সেই প্রশ্ন উঠেছে কূটনৈতিক মহলে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপির সঙ্গে ভারত নানা কারণেই আনুষ্ঠানিক বৈঠক করতে চায় না। আর এ কারণেই সিঙ্গাপুরে বৈঠকের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে ২০১৮ এর নির্বাচনের আগে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার র’এর প্রতিনিধিদের সাথে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠক করেছিলেন। এর পরপরই ভারত গিয়েছিলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ। সেখানে তারা স্বামী বিবেকানন্দ ইন্সটিটিউট সহ বিভিন্ন থিংক ট্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। মূলত বিএনপি ভারত বিরোধী নয়, এটা প্রমাণই ছিল সেই সময় লক্ষ্য। তবে এবার তিন কূটনৈতিকের সাথে কি বৈঠক হয়েছে ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা গেছে যে, মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল সংলগ্ন একটি শপিং মলের ক্যাফেটেরিয়াতে প্রথমে তাদের আধা ঘন্টার একটি বৈঠক হয়। পরবর্তীতে মেরিনা বে হোটেলের লবিতে তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। তৃতীয় বৈঠকটি হয়েছে একটি পাঁচতরকা হোটেল কক্ষের সুইট রুমে। তিনটি বৈঠকেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।’
বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর নির্বাচনে যাবে না। যদিও এই অবস্থান এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সমর্থন পাইনি। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা যেন সমন্বিত থাকে সে ব্যাপারেও জোর দিয়েছে।”
ভারতের পক্ষ থেকে মনে করা হয় যে বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়া উচিত অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন যেভাবে হয় সেভাবেই। অর্থাৎ সংবিধান অনুযায়ী। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি যে ভারত নাকচ করে দিচ্ছে তা মোটামুটি স্পষ্ট। তবে ভারত বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় এবং এই নির্বাচনে সকল দল অংশগ্রহণ করুক সেটিও চায়। বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল ধারণা করছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ভারতীয় কূটনৈতিকরা মূলত বিএনপি’র নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। বিএনপি কেন আগামী নির্বাচনে যেতে চায় না, কি হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে, এই বিষয়গুলোই আলোচনায় স্থান পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা মির্জা আব্বাস বিএনপি’র কোনো নীতি নির্ধারক নন। বিএনপি’র শেষ কথা হল জিয়া পরিবার, তারেক জিয়া এবং হাসপাতালে থাকা বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটিই চূড়ান্ত হবে।’
তবে একাধিক সূত্র মনে করে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হয়তো এই বৈঠকটি করেছেন তারেক জিয়ার অনুমতি নিয়েই এবং যেহেতু তিন ধাপে তাদের কথাবার্তা হয়েছে, কাজেই এর যেকোনো একটি পর্যায়ে তারক জিয়ার সঙ্গেও যে ফখরুল বৈঠকের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেননি এমনটি নয়। তাই বিএনপি নির্বাচনের ব্যাপারে তার অবস্থান পরিবর্তন করে কিনা বা কি অবস্থান গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।’