আজ প্রাণের সংগঠন বিএনপি’র ঐতিহ্য -সাফল্য সংগ্রাম,আত্নত্যাগ ও গৌরবময় প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর
- আপডেট সময় : ১০:৪৯:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩৯ বার পড়া হয়েছে
আজ ১ সেপ্টম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ঐতিহ্য -সাফল্য সংগ্রাম,আত্নত্যাগ ও গৌরবময় প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর। ১৯৭৮ সালের এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। যে দলের অনুসারীরা হবেন বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, ধর্মীয় মূল্যবোধের ধারক ও বাহক। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত সৎ ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণায় অনুপ্রাণিত। তিনি নিজেও এসব গুণের অধিকারী ছিলেন। জিয়াউর রহমানের বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে শুরু হয় উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। রাজনীতিতে আসার আগেও এই মহান নেতার একটি ঘটনাবহুল জীবন রয়েছে। রয়েছে সৈনিক জীবন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র পরিচালনা সব ক্ষেত্রেই তার একটি সমুজ্জ্বল ভূমিকা। যা জাতি কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। তখন দেশ ও জাতি এক চরম হতাশায় নিমজ্জিত, দিশেহারা,চরম সংকটে পতিত। ঠিক সেই মুহূর্তে এ দেশের সিপাহী জনতা একই বছরের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসায়। এভাবেই একজন কর্মকর্তা হিসাবে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব। তিনিই প্রথম দেশে আওয়ামী লীগের গড়া একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় রাজধানীর রমনা রেস্তোরাঁয় দলের প্রতিষ্ঠাতা সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির যাত্রা হয়। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় ২ ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র (অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অর্থে) এই ৪ মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন,গণতন্ত্রায়ন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার উত্থান ঘটানো। এগুলোর ভিত্তিতে জিয়াউর রহমান তার ১৯ দফা ঘোষণা করেন।
এখানে উল্লেখ্য, বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল সে সময়ের উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল। ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে বিএনপি গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই জাগদল বিলুপ্ত ঘোষণা এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সব সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত বিএনপিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়। গঠনের সময় থেকেই বিএনপি রাষ্ট্রপতি শাসন পদ্ধতির সরকার সমর্থন করে আসছিল।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে বিদ্রোহী সেনাদের হাতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হলে সে সময়ের উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার বিএনপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বার্ধক্যজনিত কারণে দলের চেয়ারম্যান বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩ বছর ৩ মাস ২২ দিন ওই পদে বহাল রয়েছেন তিনি।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের পাশাপাশি এনে দেন আমাদের জাতিসত্তার পরিচয় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের। জিয়াউর রহমানের উন্নয়ন, উৎপাদন ও গণতান্ত্রিক আদর্শ লালন করেই বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ পাঁচ বার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বরণের পর দলের বর্তমান চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও এক যুগসন্ধিক্ষণে দলের দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচার এরশাদের আমলে তিনি আন্দোলন করে আপোষহীন নেত্রী উপাধি পান। তার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় আসীন হয়। বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বিএনপি আজ ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে।
বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। বিএনপির দাবি সেই সময়কার সেনা সমর্থিত সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। আটক করে তার দুই ছেলেকে। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও। তারা বিএনপিকে দুইভাবে বিভক্ত করে সংস্কার ইস্যুকে কেন্দ্র করে দল প্রায় দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া।দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে।
বর্তমান আ’লীগ সরকারও বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তাই জিয়া ও খালেদা জিয়ার নামে নামকরণকৃত সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে তার ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে জোর করে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছে। তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তাদের পলাতক দেখিয়ে মামলার চার্জশীট দেয়া হয়। মামলা দেয়া হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও। এরই মধ্যে বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আরাফাত রহমান কোকো। বর্তমানে তারেক রহমানকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আর খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সরকার সাজা দিয়ে কারাগারে রেখে করোনার অজুহাতে নানা শর্তের বেরাজালে মুক্তি দিলেও তিনি আজ নিজ গৃহেবন্দী। সরকারের জুড়ে দেওয়া নানা শর্তে তার কন্ঠ আজ রুদ্ধ করা হয়েছে। তিনি নিজ গৃহে বন্দী থেকেই ঐতিহ্য,সাফল্য,সংগ্রাম,আত্নত্যাগ ও গৌরবময় বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সফলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে বিএনপির যে লক্ষ্য ও প্রচেষ্টা দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে সে লক্ষ্য ও
প্রচেষ্টা অর্জনে ত্যাগ শিকার করে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী উন্নয়ন,কৃষি,বিজ্ঞান প্রযুক্তি,গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন,যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সব সাফল্য বিএনপি সরকারের আমলেই হয়েছে। জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজনসহ ইসলামী মূল্যবোধকে জাগ্রত করেছেন।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর দলটি ৪ দফা ক্ষমতায় ছিল। ২ দফা ছিল জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়, ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদে ছিল সরকারি দল। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত সপ্তম, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদে ছিল বিরোধী দল। এ ছাড়া ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয়,১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি।
দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক,বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা,বিশ্বনন্দিত নেতা,শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উন্নয়ন এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৌহার্দ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে বিএনপি’র সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দলকে আরো গতিশীল করার ক্ষেত্রে মনেপ্রাণে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। পাশাপাশি দেশের যেকোন ক্রান্তিলগ্নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোসহ সকলকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মমতাময়ী “মা” গণতন্ত্রের জননী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
পরিশেষে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্নার মগফিরাত এবং দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে ঐতিহ্য, সাফল্য,সংগ্রাম,আত্নত্যাগ ও গৌরবময় বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সফলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
এম.দুলাল উদ্দিন আহমেদ (সাংবাদিক) তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি।সহসভাপতি,সলঙ্গা থানা বিএনপি। সাবেক এজিএস,ছাত্র সংসদ সলঙ্গা ডিগ্রী কলেজ।