জোহানেসবার্গের একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন, নিহত ৭৪
- আপডেট সময় : ০৮:১৫:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৫১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা পোর্টাল ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন লেগে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) মধ্যরাতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই ভয়াবহ আগুন থেকে যারা বেঁচে ফিরেছেন তারা সেই রাতের রোমহর্ষক ঘটনার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। পুলিশের ভয়ে বন্ধ ছিল মূল দরজা। আগুন থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়েন অনেকে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে প্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। কিন্তু ওই সময় ভবনটিতে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার একমাত্র দরজাটি তালাবদ্ধ ছিল। এ কারণে কোনো বাসিন্দাই দরজা দিয়ে বের হতে পারেননি।
ভবনটির দরজা মূলত ইচ্ছেকৃতভাবেই রাতের বেলা বন্ধ করে রাখা হতো। কারণ, ওই ভবনে মূলত অবৈধ অভিবাসী ও অস্বচ্ছলরা থাকতেন। ফলে পুলিশের অভিযানের আশঙ্কা থাকত সবসময়। ভবনটিতে প্রায় ৪০০ মানুষের বাস ছিল।’
পুলিশ যেন কোনো অভিযান চালাতে না পারে এবং চোর যেন কোনো কিছু চুরি করে নিয়ে যেতে না পারে এ কারণেই দরজা বন্ধ করে রাখা হতো।’
গার্ডিয়ান আরও জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর উদ্ধারকারীরা ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরে ফ্লোরে গিয়ে মরদেহ বা জীবিত মানুষের সন্ধানে সারাদিন কাটায়। ওই সময় দেখা যায় ভবনটির প্রায় সব জানালা ভাঙা। এগুলো কিছু আগুনের তাপে ভেঙে গেছে। আর বেশিরভাগই ভবনের বাসিন্দারা ভেঙেছেন। যারা বেঁচে গেছেন তারা মূলত জানালা ভেঙে নিচে লাফিয়ে পড়েই বেঁচেছেন।’
ওই ভবনের ভেতর যারা থাকতেন তাদের পরিচিতজনরা বৃহস্পতিবার পুলিশের তথ্যকেন্দ্রে ভীড় জমান। এমপাথো মোতানি নামের এক ব্যক্তি জানান তার বোনকে খুঁজতে এসেছেন তিনি। কিন্তু এখনো কোনো খোঁজ পাননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি। আমরা খুবই হতাশ।’
ভবনটিতে থাকতেন দক্ষিণপূর্ব আফ্রিকার মালাওইয়ের নাগরিক ওমর আরাফাত। তিনি আগুন লাগার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেছেন, “আমি রাত ১টায় প্রচণ্ড জোরে শব্দ ও মানুষের ‘আগুন আগুন’ চিৎকারে জেগে ওঠি। আমি ভবনের মূল দরজার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আগুনের কারণে সেটির কাছে যাওয়া যায়নি। কোনো উপায় না পেয়ে তিন তলার জানালা ভেঙে নিচে লাফ দেই।”
ওমর আরাফাত জানিয়েছেন, লাফ দেওয়ার পর আর তার কিছু মনে নেই। এরপর প্রায় তিন ঘণ্টা পর যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন তিনি তার আশপাশে অনেক অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দেখতে পান। এছাড়া তার আশপাশে অসংখ্য দেহ পড়ে ছিল’।
তিনি বলেছেন, ‘আমি যখন জেগে ওঠি তখন, আমি মনে করি, আমার বোন কোথায়?
ওমর জানিয়েছেন, তার বোনও ওই ভবনে থাকতেন। কিন্তু এখনো তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে তার দুই বছরে শিশু সন্তানকে জানালা দিয়ে কেউ একজন নিচে ছুড়ে মারেন। নিচে থাকা অন্যরা তখন শিশুটিকে লুফে নিতে সমর্থ হন। বর্তমানে অন্যরা তার বোনের সন্তানকে দেখভাল করছে।’
তানজানিয়ার অভিবাসী ও মুদির দোকানি মুসা জানিয়েছেন, তিনিও তিন তলা থেকে লাফ দেন। তা সত্ত্বেও আহত না হয়ে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু তার ছোট ভাইয়ের ভাগ্য এতটা ভালো ছিল না। তিন তলা থেকে লাফ দিয়ে তার ভাইয়ের কোমরের অংশ ভেঙে যায় এবং পরবর্তীতে তিনি মারা যান।’
এদিকে যে ভবনটি আগুন লেগেছিল সেটি জোহানেসবার্গ সিটি কর্তৃপক্ষের ছিল। কিন্তু প্রভাবশালী একটি মহল পরিত্যক্ত ভবনটি দখল করে সেখানে অভিবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে ভাড়া দিয়েছিল। এছাড়া সেখানে গৃহহীনরাও থাকতেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান