পদ হারাচ্ছেন বিএনপির নিষ্ক্রিয় ৫ নেতা
- আপডেট সময় : ০৯:১৪:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৫৪ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ৪৬ থেকে ৪৭ বছরে পা রাখল দলটি। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। শুধু ক্ষমতার বাইরে নয়, দলটি এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। অস্তিত্বের সংকটে থাকা দলটি এখন এক দফা দাবিতে আন্দোলনের চেষ্টা করছে। যদিও সেই আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা ঘটাতে পারেনি। বিএনপি যখন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী করছে তখন দলের তিন শীর্ষ নেতাই নিষ্ক্রিয়। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে কোনো বিবৃতি বা বক্তব্য দেননি। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার বক্তব্য বাংলাদেশে প্রচার নিষিদ্ধ রয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে। তারেক জিয়াও বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি দৃশ্যমান নন। বিএনপি পরিচালনার ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনিও এখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঘনিষ্ঠ বলছেন, আগামীকাল তিনি দেশে ফিরতে পারেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির জেষ্ঠ্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনও সিঙ্গাপুরে অসুস্থ। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ভারতে থাকার পর এখন বাংলাদেশে ফেরার অনুমতি পেলও বাংলাদেশে ফেরেনি। বরং তিনি ভারতেই নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন’।
একাধিক শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতির মধ্যে বিএনপির হাল ধরার মতো কোনো নেতাই নেই। এর মধ্যেই লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলকে সক্রিয় করার জন্য স্থায়ী কমিটিকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন।
বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, তারেক জিয়া এখন দল গুছানোর ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করছেন। যারা দলে নিষ্ক্রিয় তাদেরকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত প্রায়। ইতিমধ্যে ছাত্রদলের সভাপতিকে দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিএনপির ডজন খানেক বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকে আন্দোলন সংগ্রামে সঠিক ভূমিকা পালন না করার জন্য দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে নিষ্ক্রিয় নেতাদের। এখন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ওপর নজর দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে যে সমস্ত নেতারা নানারকম রোগে ভুগছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না তাদেরকে স্থায়ী কমিটির পদ থেকে বা নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বয়ো প্রবীন নেতা। সম্প্রতি সময় তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে খুব একটা সক্রিয় নয়। বার্ধক্যজনিত কারণে তাকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে খুব একটা পাওয়া যায় না। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে স্থায়ী কমিটি থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তাকে বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বা অন্যকোন সম্মানজনক দায়িত্ব দেয়া হতে পারে’।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন। তিনি ঠিকঠাক কথা বলতে পারেন না। মানবিক কারণে তাকে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন যখন সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে বিএনপি যাচ্ছে তখন রফিকুল ইসলাম মিয়ার বদলে দলে সক্রিয় কাজ করতে পারেন এরকম কাউকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। আর এ কারণে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াও স্থায়ী কমিটির পদ হারাতে পারেন বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।”
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু সম্প্রতি একটি মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। যে কোন সময় তাকে জেলে যেতে হতে পারে। তিনি এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। টুকুও স্থায়ী কমিটির পদ হারাতে পারেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে। বিএনপির আরেকজন প্রবীণ নেতা বেগম খালেদা জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আবদুল্লাহ আল নোমান স্থায়ী কমিটির পদ কেন পাননি সেটি একটি বিস্ময়।’ এরপর থেকে তিনি রাজনীতিতে অনেকটা নিষ্ক্রিয়। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে অনেক অসুস্থ। আব্দুল্লাহ আল নোমানকেও দলের পথ থেকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আব্দুল্লাহ আল নোমান বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ তারেক জিয়ার অনুগত নন। এটি সবচেয়ে বড় কারণ বলে কেউ কেউ মনে করেন। বিএনপির আরেকজন জনপ্রিয় নেতা মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন রাজনীতিতে সক্রিয়। তবে তার নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। বিএনপি হাইকমান্ড বিশেষ করে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া তাকে ভালো চোখে দেখে না। এজন্য মেজর (অব:) হাফিজউদ্দিনও পদ হারাতে পারেন বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন’। তবে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামের সক্রিয় থাকবেন না, যারা রাজপথে থাকবেন না তারা সবাই পদ হারাবেন, তা সে যেই পদেই হোক না কেন।”