গ্রাফটিং পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষে সফলতা পেয়েছেন দাগনভূঞা উপজেলার কৃষক
- আপডেট সময় : ০৪:৪৬:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০৭ বার পড়া হয়েছে
দাগনভূঞা (ফেনী) সংবাদদাতা: একসময় গ্রামাঞ্চলের পথে-ঘাটে, আনাচে-কানাচে ও বাঁধের রাস্তাায়
কোনো ধরনের পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে উঠতো কাঁটা বেগুন বা তিত
বেগুনের গাছ। এ গাছে অতিরিক্ত কাঁটা থাকায় একে কাঁটা গাছ বলা
হয়। এ গাছকে এক ধরনের আগাছা বলাও চলে। তবে এ গাছকে এখন
কাজে লাগিয়ে গ্রাফটিং (কাটিং কলম) পদ্ধতিতে টমেটো চাষ শুরু
করেছেন চাষিরা। সাধারণত বীজ থেকে চারা তৈরি করে টমেটো চাষ
করা হলেও বর্তমানে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ব্যাপক উৎকর্ষতার কারণে
গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা উৎপাদন করার মাধ্যমে চাষ করা
হচ্ছে। আর এই গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা উৎপাদন করে ব্যাপক
সফলতা পেয়েছেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার কৃষক কৃষক আবদুল
মোতালেব ও ছায়েদুল হক। কম খরচে ভালো আয় হওয়ায় বেশিরভাগ কৃষকই
টমেটো চাষে ঝুঁকছেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সারি সারি
বেগুনগাছের ওপরে দুলছে টমেটোগাছ। মাঠের সবুজ প্রান্তে থোকায়
থোকায় জুলছে গ্রাফটিং করা টমেটোর চারা । ফলে সারা বছর চারা
পেয়ে মালচিং শীট পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন সময়েও কৃষকরা টমেটো
চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। ক্ষেতে জৈব বালাইনাশক দেওয়া হয়েছে।
এতে একবারে বিষমুক্ত টমেটো উৎপাদন হয়। ক্ষেত থেকে এসব টমেটো
সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়
বিক্রি করছেন তারা। পাইকারি হিসেবে এসব টমেটো প্রতিকেজি
বাজারে বিক্রি করছেন ১৪০ থেকে ১৭০ টাকায়। বিষমুক্ত টমেটো চাষে
কৃষকরা যেমনটা লাভবান হচ্ছেন তেমনি ক্রেতারাও খেয়ে তৃপ্তি পাচ্ছেন।
কৃষক আবদুল মোতালেব বলেন, এই বছর জমিতে গ্রাফটিং টমেটো
জাত বারি-৮ চাষে সফলতা পেয়েছি। টমেটো চাষে আমাদেরকে
সার্বিকভাবে পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হান্নান। এভাবে লাগানো
টমেটোর চারা বড় হয়ে ঢলে পড়ে না, রোগবালাইও তেমন হয় না। ফলন হয়
প্রচুর। যেখানে সাধারণ একটি গাছে ১ থেকে ২ কেজি টমেটো
মেলে, সেখানে গ্রাফটিং করা প্রতি গাছে মেলে ৪ থেকে ৫ কেজি।
সেই সঙ্গে গ্রাফটিং করা টমেটোগাছ পানি সহনীয়। তাই ভারী
বৃষ্টিতেও এই টমেটো গাছ নষ্ট হয় না। আগামীতে আরো বেশি
পরিমাণ জমিতে এ জাতের টমেটো চাষ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।
কৃষক ছায়েদুল হক জানান, আমি একজন পল্লি চিকিৎসক।
চিকিৎসার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। এই
বছর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং উপ-সহকারী কৃষি
কর্মকর্তা শাবানা সিদ্দিকার সহযোগিতায় গ্রাফটিং পদ্ধতিতে
গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করি এবং বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন
প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি টমেটো বিক্রি করি। এখন পর্যন্ত প্রায়
হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। আগামীতে ও এই চাষ অব্যাহত
রাখবেন বলে ও তিনি জানান।
টমেটো কিনতে আসা আহম্মদ উল্যাহ বলেন, ‘বিষমুক্ত টমেটো পাওয়া
কঠিন। এখানে কৃষক আবদুল মোতালেব মিয়ার ক্ষেতের উৎপাদিত
টমেটো জেনে কিনছি। এ টমেটো খেতে সুস্বাদু।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, বেগুন ও টমেটো
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সবজি। কিন্তু দেশে বেগুন ও টমেটো চাষের প্রধান
সমস্যা হচ্ছে মাটিবাহিত বিভিন্ন রোগ। প্রধানত ঢলেপড়া রোগ ও
শিকড়ের গিট রোগ টমেটো ও বেগুন চাষের ব্যাপক ক্ষতি করে। উচ্চ
তাপমাত্রা ও মাটিতে বেশি আর্দ্রতা থাকলে এই দু’টি রোগ দ্রুত
বিস্তার লাভ করে। এ দু’টি রোগের কারণে বেগুন ও টমেটোর ফলন ৩০-৫০
ভাগ কমে যায়। গবেষণার মাধ্যমে তিত বেগুন গাছের ওপর কলমের মাধ্যমে
বেগুন ও টমেটো গাছ তৈরি করে মাটিবাহিত বিভিন্ন রোগ থেকে
রক্ষা করে উচ্চফলন নিশ্চিত করা যায়। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে ইতোমধ্যে
আগাম টমেটো চাষে ব্যাপক সাফল্য দেখা গেছে। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে
আগাম টমেটো চাষ করতে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।