চলতি মাসেই তিন হাই প্রোফাইলের গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা সফর
- আপডেট সময় : ০২:০৯:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা পোর্টাল ডেস্ক: চলতি মাসের প্রথম দিকেই ঢাকা আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক-সামরিক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেসনিক।
সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নবম নিরাপত্তা সংলাপে অংশ নিতে ৪-৫ সেপ্টেম্বর সফরে আসছেন মিরা রেসনিক। দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ৭-৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফর করবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর দিল্লির জি-২০ সম্মেলনে যোগদান শেষে ফরাসি প্রেসিডেন্টের ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসার কথা। এই তিন হাই-প্রোফাইল সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকা, ওয়াশিংটন, মস্কো ও প্যারিসের কূটনীতিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ইস্যুতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিতে পশ্চিমা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের চাপও অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন তিন হাই-প্রোফাইল সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে ওয়াশিংটন ডিসিতে দুদেশের মধ্যে অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এবার নবম সংলাপটি ঢাকায় হবে। এ সংলাপে কৌশলগত অগ্রাধিকার, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বেসামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনসহ দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্বের নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।
সংলাপে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আবারও আহ্বান জানাতে পারে বাংলাদেশ। এই সংলাপে অংশ নেওয়া ছাড়াও মার্কিন প্রতিনিধি রেসনিক সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলবেন।
সূত্র জানায়, অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপে দুই দেশ জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) ও অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (আকসা) নিয়ে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। আর ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে সামরিক বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে চাইছে বাংলাদেশ।
সমরাস্ত্র সংগ্রহে একক দেশনির্ভরতা কাটাতে অন্যান্য উৎসের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এ জন্য ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমরাস্ত্র ক্রয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশকে। তবে এজন্য দুদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় জিসোমিয়া চুক্তি স্বাক্ষর হতে হবে। সম্প্রতি দুদেশের প্রতিরক্ষা সংলাপেও বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবারও ফলোআপ হিসেবে এ বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে।’
জানা গেছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র স্থানান্তর ব্যুরোর অফিসের তত্ত্বাবধান করেন মিরা রেসনিক। তিনি বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ ছাড়াও মিরা ব্যুরোর নিরাপত্তা সহায়তা অফিসের আওতায় বছরে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়টিও দেখভাল করেন। পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগদানের আগে মিরা কে রেসনিক মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।’
ঢাকা ও মস্কো সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসবেন এবং পরদিন অর্থাৎ ৮ সেপ্টেম্বর দিল্লি যাবেন। এটিই হবে স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফর।’
জানা গেছে, এই সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ল্যাভরভের সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে। বৈঠকগুলোতে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, রোহিঙ্গা সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধ, জাহাজ জটিলতা, জাতিসংঘে সহযোগিতা, বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হবে।’
দ্বিপক্ষীয় এই সফর চলমান রাজনীতি ও নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ রাশিয়ার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসসহ নানা ইস্যুতে সরকারকে অব্যাহত চাপের মধ্যে রেখেছে। ইতোমধ্যে মার্কিন চাপকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপও বলেছে মস্কো। তাই সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা সফরের দিকে চোখ সবার’।
দিল্লি হয়ে ঢাকায় আসবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফরে আসছেন বলে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে ঢাকায় আসতে চান। ১০ সেপ্টেম্বর সম্মেলন শেষ হবে এবং মনে হয়, তারপর তিনি বাংলাদেশে আসবেন।’
সূত্র জানায়, ম্যাক্রোর সফরে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বৈধ অভিবাসনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশে স্যাটেলাইট কারখানা স্থাপন করতে চায় ফ্রান্স। সরকার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। দেশটির প্রেসিডেন্টের সফরে এ বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।