নিয়োগ পরীক্ষার পূর্বেই চুড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ফাঁসের অভিযোগ, আগ্রহ হারাচ্ছে চাকুরি প্রার্থীরা
- আপডেট সময় : ০৫:৫৫:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৫২ বার পড়া হয়েছে
পঞ্চগড় প্রতিবেদক: পঞ্চগড়ের একটি বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঁচটি পদের নিয়োগ পরীক্ষার পূর্বেই নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে নিয়োগ পরীক্ষার পূর্বেই চুড়ান্ত প্রার্থীদের নাম স্থানীয়দের মুখে মুখে রটে গেছে। নিয়োগ দেওয়ার নামে লাখ লাখ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের বিরূদ্ধে। নাম ফাঁস হওয়ার পর আবেদনকৃত প্রার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। ঘটনাটি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাষা ইউনিয়নের সাহেব বাজার এলাকার পাহাড়তলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে।
পাহাড়তলী উচ্চ বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ে পাঁচটি পদের জন্য গত ২৮ মে একটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষার ভিত্তিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক, আয়া, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে একজন করে নিয়োগ দেওয়া হবে।
চাকুরীতে আবেদনকৃত প্রার্থীর পরিবার এবং স্কুলের পার্শবর্তী লোকজন সহ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে অর্থের বিনিময়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে, ওই সহকারী শিক্ষকের স্ত্রীকে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পদে, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নুরু মিঞার ছেলেকে নিরাপত্তা কর্মী এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে রফাদফা না হওয়ায় ওই পদটিতে পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক। বিশেষ করে ল্যাব এসিসট্যান্ট পদটির প্রার্থী নিয়ে চাঞ্চল্য সৃস্টি হয়েছে। ওই পদে সহকারী শিক্ষক আতিকুরের স্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হলে স্কুলের সামনে প্রায় ১০ শতক জমি ও নগদ আট লাখ টাকা রফাদফা হয়েছে। এই পদে অন্য প্রার্থীরাও ম্যানেজিং কমিটি নগদ ১০ থেকে ১২ লাখ পর্যন্ত দিতে আগ্রহী। এদিকে নিরাপত্তা কর্মী পদে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নূরু মিঞার ছেলেকে নিয়োগ দেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
হাড়িভাষা ইউনিয়নের ইয়ারপাড়া এলাকার ল্যাব অপারেটর পদে আবেদন করা ইশা নামে প্রার্থীর বাবা ইউসুফ আলী জানান, আসলে এখানে নিয়োগ বানিজ্য হচ্ছে। ম্যানেজিং কমিটির চারজন সদস্য আমার মেয়ের চাকুরীর জন্য ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব দেয়। পরে আমি ১৫ লাখ টাকা দিতে স্বীকার করেছিলাম। এজন্যই আমার মেয়ের চাকুরী হবেনা। তিনি বলেন আয়া পদের জন্য কমিটির সদস্যরা একজন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি অন্য আরেকজন প্রার্থীকে চাকুরি দেওয়ার জন্য কথা দিয়েছেন। এদিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে হাবিবুর রহমানের কাছে প্রায় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটি।
সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করা কায়েত পাড়া এলাকার আসমা খাতুন জানান চাকরিটা আমার হবেনা। পরীক্ষা দেওয়ার আগ্রহ নেই আমার। কারণ পূর্ব থেকে কমিটি অন্য একজনের নাম সিলেক্ট করে রেখেছে বলে জেনেছি।
পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে আবেদন করা চাকুরি প্রার্থী হুমায়ুন জানান, এখানে নিয়োগ বানিজ্য হচ্ছে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনার পর আমি চার লাখ টাকা দিতে চেয়েছি কিন্তু প্রধান শিক্ষক রমজান আলীর সাথে কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের কুচিয়ামোড় এলাকার এক প্রার্থীর সাথে সম্পর্ক ভাল থাকায় সে আট লাখ টাকার বিনিময়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে তাকেই চুড়ান্ত করা হচ্ছে বলে জানকে পেরেছি। আবেদনের সময়সীমা শেষ হয়েছে তবুও অন্য প্রার্থীকে তালিকায় নাম রাখা হচ্ছে।
ফরহাদ নামে নিরাপত্তা কর্মী পদে আবেদন করা চাকুরি প্রার্থী জানান, পাহাড়তলী স্কুলে আসলে এখানে নিরব নিয়োগ ডাকাতি হচ্ছে। আমি স্কুল কমিটির এক সদস্যদের সাথে কথা বলে জেনেছি নিরাপত্তা কর্মী পদের জন্য ১২ লাখ দিতে চেয়েছেন অনেকে। এ্রকম যদি হয় তাহলে আমার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হবে না। কারণ এত টাকা তো আমি দিতে পারবোনা। আমি যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরী পেতে চাই। টাকা দিয়ে নয়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রমজান টাকা লেনদেন এমনকি প্রার্থী চূড়ান্তের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আসলে কোন নিয়োগ বানিজ্য হয়নি বা হচ্ছে না। নিয়োগ পরীক্ষার আগে চুড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ফাঁস হয়েছে কিভাবে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন আমি কমিটির সদস্যদের বলে দিয়েছি কোন প্রার্থীর সাথে যাতে চাকুরি বিষয়ে লেনদেন না করা হয়। নিয়োগ নিয়ে স্থানীয়রা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নুরু মিঞা সহ কয়েকজন কমিটির সদস্যরা জানান, প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতির সাথে নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়ে আলোচনা করেন আমরা কিছুই জানিনা।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনির হোসেন জানান এখানে কোন নিয়োগ বানিজ্যের সুযোগ নেই। এখনো নিয়োগের তারিখ ঠিক হয়নি। মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন আকতার জানান, নিয়োগের নামে বাণিজ্যর কোন সুযোগ নেই। নিয়োগের আগে যদি নাম ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।