টিপু মুনশি কি পদত্যাগ করবেন
- আপডেট সময় : ১১:০৩:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৩৯৭ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: এই মুহূর্তে সরকারের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথা হল দ্রব্যমূল্য। কিছুতেই দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিরা এই নিয়ে নানারকম কথাবার্তা বলছেন বটে তবে তা মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন করতে পারছে না। বরং দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতির কারণে সরকারের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে গত দুদিনে দু’দফা বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই সমস্ত বৈঠকে স্বীকার করা হয়েছে যে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি আসলে সহনীয় নয়। এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে এমন ধারণাও সঠিক নয়। বরং বাজারে একটি সুনির্দিষ্ট সিন্ডিকেট এবং কারসাজির কারণেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তৈরি হয়েছে এবং এটি এখন মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মানুষ ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এরকম পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, এবং পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এইসব বৈঠকেই জনগণের কাছে সরকারের বিশ্বাস এবং আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বানিজ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে এসে বাণিজ্যমন্ত্রীকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কারো কারো আপত্তি রয়েছে। এর ফলে ভুল বার্তা যাবে এবং এটি বিরোধী দলের কাছে একটি বড় ইস্যু হবে বলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করছেন।’
আবার অনেকে মনে করছেন, বাণিজ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিলে সরকার যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক এবং জনগণের সমস্যা সমাধানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এই বার্তাটি দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে জনগণের কাছে সরকারের ইমেজ বাড়বে। তবে কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন, দ্রব্যমূল্য মনিটরিং এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি আলাদা সেল গঠন করা যেতে পারে। এই সেল এর মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে আসা যেতে পারে। তবে বিভিন্ন নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এটির নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যেভাবে বাজারের সিন্ডিকেট ছড়িয়ে পড়েছে এবং যেভাবে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নেওয়ার পরও যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ইমেজ ক্ষুন্ন হবে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আগামী কয়েকদিন প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক কূটনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। এই ব্যস্ততার পর দ্রব্যমূল্য নিয়ে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠক করতে পারেন। তবে এই সরকারের নীতিনির্ধারক এর একাধিক উর্ধতন ব্যক্তি বলেছেন, সবচেয়ে ভালো হতো যদি বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য এবং কর্মকান্ড সরকারি নীতিনির্ধারকদেরকে বিস্মিত এবং হতবাক করেছে। কেউ কেউ এনিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, বাণিজ্যমন্ত্রী একাধিকবার জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, সিন্ডিকেট আছে কিন্তু সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সেটির পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। বাণিজ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অবহিত ছিলেন না। গত ২৯ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হলে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরবো।’ কিন্তু পরের দিনই বানিজ্যমন্ত্রী এমনভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রীকেই ছোট করে ফেলেছেন। এটি সরকারের অনেকেই পছন্দ করেননি। বাইজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা এবং তার লাগামহীন কর্মকান্ডকে কেউই ইতিবাচক চোখে দেখছেন না।’
সরকারের কোন কোন নীতি নির্ধারক মনে করছেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর সরে যাওয়ার এখনই সময়। এখন প্রশ্ন হল যে, সরকার কি নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে বাণিজ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে বিরোধী দলের হাতে অস্ত্র তুলে দিবেন? নাকি সরকার বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিষ্ক্রিয় করে অন্যভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করবে’।
সূত্রগুলো বলছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কারণ সরকার এই ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে যে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে পরিস্থিতি যেকোনো সময় খারাপ হয়ে যেতে পারে।