প্রশাসনে নব্য মোশতাকদের সন্ধানে সরকার
- আপডেট সময় : ০৯:৩৮:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৮ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: তৃতীয় মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সরকার নানা রকম অস্বস্তিতে ভুগছে। প্রশাসনে এবং সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এতদিন আওয়ামী লীগের জন্য জীবন দিতে পারে-এমন ব্যক্তিরা তাদের আসল চেহারা দেখাতে শুরু করেছে। সর্বশেষ প্রমাণ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানের ঘটনা। এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বর্তমান সরকার নিয়োগ দিয়েছিল’।
সাধারণত এই ধরনের আইন কর্মকর্তার নিয়োগের ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করা হয় এবং দলীয় আনুগত্য দেখা হয়। আইন মন্ত্রণালয় এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন এরকম তথ্য জানিয়েছেন। সেরকম একজন সরকারের নিযোগকৃত সরকারি কর্মকর্তা একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন যা সরকারের জন্য বিব্রতকরই শুধু নয়, দীর্ঘ মেয়াদে ড. ইউনূসের বিচারের জন্য একটি বাধা হিসেবে বিবেচিত হবে।
এমরান আহমেদ ভুঁইয়ার পারিবারিক পরিচয় অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, তার পুরো পরিবার বিএনপি ঘরনার। তার ভাই ছাত্র দল করে। কিন্তু তিনি নিজে ছাত্রলীগের একজন অনুপ্রবেশকারী ছিলেন। আইনমন্ত্রীর একজন ঘনিষ্ঠ জনের সাথে সখ্যতার ভিত্তিতে তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হয়েছিলেন। এখন তিনি ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে ফতোয়া দিয়েছেন। তার এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছে এবং সরকারের জন্য এটি একটি মারাত্মক অস্ত্র হিসেবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবহৃত হবে’।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এমরান আহমেদ ভুঁইয়া একা না, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এরকম ব্যক্তিরা রয়েছে, যারা সরকারের সাথে সময় সুযোগে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। এদেরকে বলা হয় নব্য মোশতাক। এই নব্য মোশতাকদের সংখ্যা আওয়ামী লীগে কম নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে টানা পনেরো বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের ভিতর সুবিধাবাদী হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এরা এখন সব ক্ষেত্রে ঢুকেছে’।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এরকম নব্য মোশতাকদের বিচরণ এখন লক্ষ্য করা গেছে। এরা চাটুকারিতায় পারদর্শী। এজন্য অতীতে যারা ছাত্রলীগ করেছেন, ছাত্রলীগ করে প্রশাসন এসেছেন তাদের চেয়ে নিজেদেরকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারছে। এরা সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে নিজেদেরকে ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখাতে পারছে। এই সব দেখিয়ে তারা সরকারের আস্থা অর্জন করছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করছেন।’
প্রশাসনের সচিব পদে অন্তত ১০ জন রয়েছেন যাদের প্রাক্তন পরিচয়ের রহস্যময় এবং তাদের পারিবারিক পরিচয় বিএনপি-জামাত ঘরানার। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগার সেজে এখন প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে রয়েছেন। কোনো সংকটে বা বিপদে এদের আসল চেহারা উন্মোচিত হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র উচ্চ প্রশাসন নয়, মাঠ প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেও এই ধরনের নব্য মোশতাকের সংখ্যা কম নয় বলে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন’।
আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, দিলু রাজাকার বা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর ছাত্রলীগের মধ্যে যেরকম দেুল রাজাকারের জন্য শোকার্ত কর্মী দেখা যাচ্ছে ঠিক তেমনি প্রশাসনের মধ্যেও, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এই সমস্ত ব্যক্তিরাই হলো নব্য মোশতাক। এরা সংকটের সময় কখনোই আওয়ামী লীগের পাশে থাকবে না। বরং এরা এমন কিছু কান্ড করবে যার ফলে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়।’
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, সরকার এখন শেষ সময়ে এসে এই নব্য মোশতাকদের খোঁজে নেমেছে সরকার। সরকার প্রশাসন এবং বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকা নব্য মোশতাকদের খুঁজে বের করতে চায় এবং তাদেরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে চায় কিন্তু কাজটি সহজ নয়। প্রশাসনের ভিতরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেভাবে নব্য মোশতাকরা ঢুকে আছে তাদের বিরুদ্ধে এই অল্প সময়ে কি শুদ্ধি অভিযান সম্ভব?