ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে হবে এখনই: ডিমের পর ডাব, তারপর কী?
- আপডেট সময় : ০৭:০৫:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৭৪ বার পড়া হয়েছে
ব্যবসায়ীদের অসততা নিয়ে অনেক গল্প-কাহিনি আছে। এরা সাধারণ মানুষের জীবনযাপন নিয়ে এমন গল্প-কাহিনির জন্ম দেয়, যা অত্যন্ত অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং বর্বর তো বটেই। এককথায়, কৌশলে এরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ব্যবসায়ে লাভবান হয়। ছোট থেকে বড়, সব শ্রেণির ব্যবসায়ীর সুযোগ পেলেই লাভের বন্দুকের নলটা সাধারণ মানুষের দিকে লক্ষ্যভুক্ত করে। অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক, যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে, বেপরোয়া হয়ে ওঠে অন্যান্য সময়ের তুলনায়। বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে যেমন ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ে বড়সড়ো মুনাফা লাভের একটা টার্গেট থাকে, উৎসব ছাড়া সামাজিক দুর্যোগ বা বিপর্যয়েও তার চেয়ে বেশি টার্গেট থাকে মুনাফা লাভের। তাদের এমন আমানবিক আচরণ দৃশ্যমান, আড়াল করার সুযোগ নেই।
সাধারণত দেখা যেত ধর্মীয় উৎসব, পহেলা বৈশাখ, বিজয় ও স্বাধীনতা দিবসে পোশাক ব্যবসায়ী, কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী, গরু-ছাগল ব্যবসায়ী, তেল ব্যবসায়ী ইত্যাদি ব্যবসায়ীরা সারা বছর ধরে প্রস্তুতি নিত যেন উল্লিখিত উৎসব পূর্বে লাভসহ খরচ উঠে আসে। এক ধরনের আনন্দ দেখা যেত ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। সম্পর্ক ছিল মধুর ও সৌহার্দ্যের। দিনে দিনে সেই সম্পর্ক ফিকে হয়ে আসে। রূপ নেয় দা-কুমড়োর সম্পর্কে। এক একজন ব্যবসায়ী যেন এক একজন সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ, প্রাণনাশের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। অতি মুনাফার আশায় এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে ব্যবসায়ীরা যে, স্বীকৃত খুনিকেও হার মানায়। একটা সময়ে ভেজাল মিশিয়ে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা চালাত, মুনাফা নিত। শিশু খাবার থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপণ্যে ভেজাল মেশানো হতো। এখনও ভেজাল মেশানো হয়, তবে আগের মতো সেই সংবাদ প্রকাশ্যে আসে না। এখন অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় ব্যবসা পরিচালনার ধরন ও কৌশল বদলেছে। ব্যবসায়ীরা এখন পালাক্রমে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় এবং সেটা বিভিন্ন অজুহাতে। এখন আর উৎসবের জন্য ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করে না, বরং দুর্যোগ পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করে, মুখিয়ে থাকে। যেকোনো ধরনের দুর্যোগ যেন ব্যবসায়ীদের মা লক্ষ্মী। আর সাধারণ মানুষের জীবন হয় বিপন্ন। সাধারণ মানুষ উৎসবে মনের ইচ্ছেকে দমিয়ে রেখে, উৎসব উদযাপন থেকে নিজেকে, নিজ পরিবারকে গুটিয়ে রেখে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলার প্রবণতায় আচ্ছাদিত হয়। তখন দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য, নিরাপত্তার জন্য মানুষের ভেতর প্রবল আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়, আকুতি জাগে। যেভাবেই হোক মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, বেঁচে থাকার পথ খোঁজে। মৃত্যু অনিবার্য জেনেও মানুষের এই বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। প্রতিটি ধর্মে জীবন রক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অতিমারি করোনাকালে কিন্তু ব্যবসায়ীরা বসে থাকেনি। সেই সময়ে আর্থিকভাবে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তে আর নিম্নবিত্ত দরিদ্রের খাতায় নাম লেখাতে বাধ্য হলেও ব্যবসায়ীদের কিন্তু স্থানান্তর হয়নি, বরং তাদের অবস্থার পরিবর্তন তথা উন্নয়ন হয়েছে। করোনাকালে কোটিপতি জন্মের সংখ্যাই বলে দেয়, অতিমারিতে তাদের ক্ষতির মাত্রা কম, বরং লাভ অনেক এবং অনেক। কী করে তা সম্ভব? উত্তর সহজ। মানুষকে তো খেয়ে-পরেই বাঁচতে হয়। এই সত্যকে অস্বীকার কী করে সাধারণ মানুষ। সেই সময়ে অনেক মানুষ তার চাকরি হারিয়েছে, নিঃস্ব হয়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম ব্যবসায়ীরা বাড়ালেও সাধারণ মানুষ তার প্রয়োজন মেটাতে বেশি দাম দিয়েই কিনেছে। তখন বাজার ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে কি না জানা নেই। করলে আজ ব্যবসায়ীরা এতটা বেপরোয়া হতো না বলে অনেকের ধারণা। যেভাবে রিলিফের চাল-ডাল ও নিত্যপণ্য চুরি করা হয়েছে, গুদামজাত করা হয়েছে, তা অবর্ণনীয় লজ্জার, হতাশার।
তাই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে হবে এখনই। তা না হলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্যের উধ্র্বগতির ধারাবাহিকতায় ডিমের পর ডাব, তারপর কী? এই প্রশ্নই এখন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের।
জেমস আব্দুর রহিম রানা সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী ও কলামিস্ট।