ঢাকা ১০:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
টেকনাফে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় অস্ত্রদিয়ে ফাঁসানো নিরপরাধ শহিদুল্লাহর মুক্তির দাবি নেতাদের শিক্ষক উন্নয়নের জন্য ইউনেস্কো-হামদান পুরস্কার পেয়েছে ‘গুড নেইবারস বাংলাদেশ’ বেলকুচিতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ভন্ড কবিরাজের বাড়িতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অভিযান   বিশ্ব শিক্ষক দিবসে নিজ সহকর্মিদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন গুণী শিক্ষক শওকত আলী বদির ক্যাশিয়ার ফারুককে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হলেন র‍্যাব সদস্যরা কাজিপুরের চরাঞ্চলের বিদ্যুতে শুভংকরের ফাঁকি ! চাহিদা ১০ বরাদ্দ মাত্র ২ মেগাওয়াট!  স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ  কাজিপুরে ধর্ষণের অভিযোগে অফিস সহকারি গ্রেপ্তার বেলকুচিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

উন্নয়ন পাগল একজন সাইফুর রহমান

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:৪৬:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০৩ বার পড়া হয়েছে

একবার সাইফুর রহমান গেলেন বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শনে। হাঁটতে হাঁটতে তিনি একটা রুমের ভেতরে ঢুকলেন। সুবিশাল মনোরম পরিবেশের রুমটি দেখে তিনি একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলেন এ রুমটি কার অধিনে? একজন ভদ্রলোক বললেন স্যার এটাতে আমি বসি। সাইফুর রহমান আরো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস তোমার কাজ কি? ভদ্রলোক বললেন স্যার আমি একজন ডাইরেক্টর।

সাইফুর রহমান ক্ষেপে গিয়ে বললেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডাইরেক্টর কি এমন কাজ করেন যে তার রুম প্রধানমন্ত্রীর রুমের চেয়েও বড়। তার রুমে ক্যানো বড় বড় ৪টা এসি থাকবে? এই সুবিশাল, মনোরম, ব্যায়বহুল রুমতো তার প্রয়োজন নেই। রাস্ট্রের টাকা পয়সা এমন অপরিমিতভাবে খরচ করার অধিকার কারো নেই।

মৃত্যুর ঠিক পূর্ব এক সাক্ষাৎকারে সাইফুর রহমান বলেছিলেন ” আমার জীবনে চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। সবই পেয়েছি, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, সম্মান পেয়েছি, রাস্ট্রের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পেয়েছি, দেশ বিদেশে যশ-খ্যাতি পেয়েছি। একজন মানুষের জিবনে এর চেয়ে বেশী কি আর চওয়া পাওয়ার থাকতে পারে? এখন শুধু মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে একটাই চাওয়া বাবা শাহজালালের দেশ সিলেটে জন্মেছি এই সুরমা নদীর তীরে সিলেটের পূন্যভূমিতেই যেন মরন হয়।”

অনেক মজার গল্প আছে সাইফুর রহমানকে নিয়ে।

সাইফুর রহমানকে সিলেটে একটি সম্বর্ধনা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি ডায়াসে দাঁড়িয়ে বললেন “আমি সাধারনত সম্বর্ধনা টম্বর্ধনা নেই না। কারন এ ধরনের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো যাকে সম্বর্ধনা দেয়া হয় তার সুনাম গাওয়া হয়। তার নামে অতিরিক্ত প্রসংশা করা হয় এবং সবশেষে কিছু দাবী দাওয়া উত্থাপন করা হয়। তারপর প্রশংসিত ব্যক্তিকে সেইসব দাবী দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিতে হয় তা তার সাধ্যের ভেতরে থাকুক বা না থাকুক।

সবাই কেমন জানি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কথা এক বিন্দুও মিথ্যা নয়। তারপর সবাইকে বললেন দাবী দাওয়া আপনারা আপনাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে অবশ্য আমার কাছে উত্থাপন করবেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু সেজন্য আমাকে সম্বর্ধনা দিতে হবে না।

সাইফুর রহমানের শুদ্ধভাষা বিড়ম্বনা।

সাইফুর রহমান সাধু , চলিত ও সিলেটি ভাষার মিশ্রন করতেন। আপনার যতোই মন খারাপ থাকুক না ক্যানো তার শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা শুনলে আপনি হাসতে বাধ্য হবেন। তবে সিলেটিদের কাছে ভালই লাগত।

অর্থনৈতিক সংস্কারের পথিকৃৎ ছিলেন সাইফুর রহমান। বাংলাদেশের মত দেশে অর্থনৈতিক সংস্কারে হাত দিয়েছিলেন তিনি। আমাদের মতো দেশে সংস্কার করা খুব সহজ কাজ নয়। সংস্কারের প্রথম ধাক্কা সহ্য করার সক্ষমতাও অনেকের থাকে না।

তার সাহসী দুই উদ্যোগ ১) ১৯৯১ সালে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ২) ২০০১ সালের পর মুদ্রার নমনীয় বিনিময় হার পদ্ধতি চালু করা।

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান নিয়ে কথা বলতে হলে আরেকটি ঘটনার কথা অবশ্যই বলতে হবে। যেকোনো নতুন সরকার এলেই নতুন ব্যাংক দেওয়া শুরু হয়। দলীয় লোকজনকে ব্যাংক দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অর্থনীতি নয়, বরং রাজনৈতিক বিবেচনাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে নতুন ব্যাংক নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তখন সমীক্ষা চালিয়ে বলেছিল, দেশের অর্থনীতিতে আর নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। যেসব ব্যাংক আছে, সেগুলোকেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানের নীতিমালায় এনে পরিচালিত করা কঠিন চ্যালেঞ্জ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এম সাইফুর রহমান বেসরকারি খাতে আর কোনো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাজনৈতিক চাপ থাকলেও তা তিনি প্রতিহত করেছিলেন। বিএনপি সরকারের ওই পাঁচ বছরে নতুন ব্যাংকের আর লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।

সাইফুর রহমান এত্ত উন্নয়ন পাগল ছিলেন যে সিলেট বিভাগের প্রতিটা কোনায় তার প্রমাণ। শেষ নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে যেখানেই ভাঙ্গা রাস্তা বা সরু সেতু দেখেছেন সেখানেই নেতা কর্মীদের ধমক দিয়েছেন। কেন তারা এই এলাকার কাজের জন্য তার কাছে গেলনা।

বিএনপি সরকারের আমলে বেগম খালেদা জিয়ার চেয়েও সম্ভবত সাইফুর রহমান বেশি উন্নয়ন কাজ নিজ এলাকায় করেছেন। সিলেট বিভাগের ৪টা জেলায় সমানতালে উন্নয়ন করেছেন। মৌলোভীবাজারের সব জায়গাতেই তার উন্নয়নের ছোয়া। প্রয়াণদিবসে শ্রদ্ধা সিলেটের উন্নয়নের কারিগর।

লেখক: রিপন দে, গণমাধ্যমকর্মী, মৌলভীবাজার

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

উন্নয়ন পাগল একজন সাইফুর রহমান

আপডেট সময় : ০২:৪৬:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

একবার সাইফুর রহমান গেলেন বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শনে। হাঁটতে হাঁটতে তিনি একটা রুমের ভেতরে ঢুকলেন। সুবিশাল মনোরম পরিবেশের রুমটি দেখে তিনি একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলেন এ রুমটি কার অধিনে? একজন ভদ্রলোক বললেন স্যার এটাতে আমি বসি। সাইফুর রহমান আরো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস তোমার কাজ কি? ভদ্রলোক বললেন স্যার আমি একজন ডাইরেক্টর।

সাইফুর রহমান ক্ষেপে গিয়ে বললেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডাইরেক্টর কি এমন কাজ করেন যে তার রুম প্রধানমন্ত্রীর রুমের চেয়েও বড়। তার রুমে ক্যানো বড় বড় ৪টা এসি থাকবে? এই সুবিশাল, মনোরম, ব্যায়বহুল রুমতো তার প্রয়োজন নেই। রাস্ট্রের টাকা পয়সা এমন অপরিমিতভাবে খরচ করার অধিকার কারো নেই।

মৃত্যুর ঠিক পূর্ব এক সাক্ষাৎকারে সাইফুর রহমান বলেছিলেন ” আমার জীবনে চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। সবই পেয়েছি, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, সম্মান পেয়েছি, রাস্ট্রের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পেয়েছি, দেশ বিদেশে যশ-খ্যাতি পেয়েছি। একজন মানুষের জিবনে এর চেয়ে বেশী কি আর চওয়া পাওয়ার থাকতে পারে? এখন শুধু মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে একটাই চাওয়া বাবা শাহজালালের দেশ সিলেটে জন্মেছি এই সুরমা নদীর তীরে সিলেটের পূন্যভূমিতেই যেন মরন হয়।”

অনেক মজার গল্প আছে সাইফুর রহমানকে নিয়ে।

সাইফুর রহমানকে সিলেটে একটি সম্বর্ধনা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি ডায়াসে দাঁড়িয়ে বললেন “আমি সাধারনত সম্বর্ধনা টম্বর্ধনা নেই না। কারন এ ধরনের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো যাকে সম্বর্ধনা দেয়া হয় তার সুনাম গাওয়া হয়। তার নামে অতিরিক্ত প্রসংশা করা হয় এবং সবশেষে কিছু দাবী দাওয়া উত্থাপন করা হয়। তারপর প্রশংসিত ব্যক্তিকে সেইসব দাবী দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিতে হয় তা তার সাধ্যের ভেতরে থাকুক বা না থাকুক।

সবাই কেমন জানি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কথা এক বিন্দুও মিথ্যা নয়। তারপর সবাইকে বললেন দাবী দাওয়া আপনারা আপনাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে অবশ্য আমার কাছে উত্থাপন করবেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু সেজন্য আমাকে সম্বর্ধনা দিতে হবে না।

সাইফুর রহমানের শুদ্ধভাষা বিড়ম্বনা।

সাইফুর রহমান সাধু , চলিত ও সিলেটি ভাষার মিশ্রন করতেন। আপনার যতোই মন খারাপ থাকুক না ক্যানো তার শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা শুনলে আপনি হাসতে বাধ্য হবেন। তবে সিলেটিদের কাছে ভালই লাগত।

অর্থনৈতিক সংস্কারের পথিকৃৎ ছিলেন সাইফুর রহমান। বাংলাদেশের মত দেশে অর্থনৈতিক সংস্কারে হাত দিয়েছিলেন তিনি। আমাদের মতো দেশে সংস্কার করা খুব সহজ কাজ নয়। সংস্কারের প্রথম ধাক্কা সহ্য করার সক্ষমতাও অনেকের থাকে না।

তার সাহসী দুই উদ্যোগ ১) ১৯৯১ সালে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ২) ২০০১ সালের পর মুদ্রার নমনীয় বিনিময় হার পদ্ধতি চালু করা।

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান নিয়ে কথা বলতে হলে আরেকটি ঘটনার কথা অবশ্যই বলতে হবে। যেকোনো নতুন সরকার এলেই নতুন ব্যাংক দেওয়া শুরু হয়। দলীয় লোকজনকে ব্যাংক দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অর্থনীতি নয়, বরং রাজনৈতিক বিবেচনাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে নতুন ব্যাংক নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তখন সমীক্ষা চালিয়ে বলেছিল, দেশের অর্থনীতিতে আর নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। যেসব ব্যাংক আছে, সেগুলোকেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানের নীতিমালায় এনে পরিচালিত করা কঠিন চ্যালেঞ্জ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এম সাইফুর রহমান বেসরকারি খাতে আর কোনো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাজনৈতিক চাপ থাকলেও তা তিনি প্রতিহত করেছিলেন। বিএনপি সরকারের ওই পাঁচ বছরে নতুন ব্যাংকের আর লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।

সাইফুর রহমান এত্ত উন্নয়ন পাগল ছিলেন যে সিলেট বিভাগের প্রতিটা কোনায় তার প্রমাণ। শেষ নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে যেখানেই ভাঙ্গা রাস্তা বা সরু সেতু দেখেছেন সেখানেই নেতা কর্মীদের ধমক দিয়েছেন। কেন তারা এই এলাকার কাজের জন্য তার কাছে গেলনা।

বিএনপি সরকারের আমলে বেগম খালেদা জিয়ার চেয়েও সম্ভবত সাইফুর রহমান বেশি উন্নয়ন কাজ নিজ এলাকায় করেছেন। সিলেট বিভাগের ৪টা জেলায় সমানতালে উন্নয়ন করেছেন। মৌলোভীবাজারের সব জায়গাতেই তার উন্নয়নের ছোয়া। প্রয়াণদিবসে শ্রদ্ধা সিলেটের উন্নয়নের কারিগর।

লেখক: রিপন দে, গণমাধ্যমকর্মী, মৌলভীবাজার