এবারও কি পশ্চিমারা ধোঁকা দেবে বিএনপিকে
- আপডেট সময় : ০৮:০২:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৫ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করতে চায়নি। বেগম খালেদা জিয়া আরো কিছু সময় পিছিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এর প্রধান কারণ ছিল, বিএনপি’র অধিকাংশ নেতা-কর্মী এবং নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন- এমন ব্যক্তিরা কারাগারে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা কেউ কেউ দণ্ডিত। কাজেই পুরো দল গুছিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার মতো অবস্থা বিএনপির তখনও ছিল না। কিন্তু এই সময়ে বিদেশি কূটনীতিকরা, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু সাম্প্রতিক সময়ে মানবজমিন’এ এক সাক্ষাৎকারে এমনটি বলেছেন এবং ওই নির্বাচনে গিয়ে বিএনপি ধোঁকা খায়, ঊনত্রিশ আসন পেয়ে বিএনপি তার স্মরণকালের সবচেয়ে ব্যর্থ নির্বাচনকে বরণ করে। বিএনপির অনেক নেতারাই মনে করেন, তারা সেই সময়ে ধোঁকা খেয়েছে পশ্চিমাদের কাছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে ছিল। পাঁচটি সিটিতেই বিএনপির নেতৃবৃন্দ ব্যাপক জয়লাভ করে এবং এই জয়ের ধারায় সকলে মনে করেছিল যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি ভালো করবে’।
এই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং বিএনপিকে তিনি স্বরাষ্ট্রসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো দেওয়ারও প্রস্তাব করেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিএনপি ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। সেই সময় বিএনপিকে কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্র পরামর্শ দিয়েছিল নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল থাকার জন্য। তাহলেই সরকারের পতন ঘটবে- এমন একটি ধারণা বিএনপিকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি সেবারও ধোঁকা খায়।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে কোনোরকম রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়াই বিএনপি ঘোষণা করে তাঁরা নির্বাচনে যাবে। আর নির্বাচনে যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা মুরুব্বী হিসেবে বেছে নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একান্ত অনুগত, বিশ্বস্ত ব্যক্তি ডক্টর কামাল হোসেনকে।’ সে সময়ে ডক্টর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রেসক্রিপশনেই। বলা হয়েছিল, নির্বাচনে গেলেই তারা ভালো করবে। কিন্তু ওই নির্বাচনেও বিএনপি আরেকটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এভাবে পশ্চিমাদের কথা শুনে বার বার ধোঁকা খাচ্ছে বিএনপি। এবারও বিএনপি আন্দোলন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর প্রেসক্রিপশনে। তারা বিএনপিকে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল থাকার পরামর্শ দিচ্ছে এবং এই দাবিতে অটল থেকে একটি অনির্বাচিত সরকার আনার পরিকল্পনা নিয়েছে পশ্চিমা সমর্থক একটি সুশীল গোষ্ঠী। এ এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপি কি করবে?
বিএনপি কি পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপশন শুনে আরেকবার ধোঁকা খাবে, নাকি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসবে? বিভিন্ন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিএনপির চেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে ড. ইউনূস ইস্যুতে। ড. ইউনূসই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রধান বিষয়। এরকম প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের দায়মুক্তির বিনিময়ে তারা কি বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসবে? ফলে বিএনপিকে ব্যবহার করে ড. ইউনূসকে পরিত্রান দেওয়ার কৌশল বাস্তবায়ন করবে বিএনপি। এর ফলে কি বিএনপি আবার বলির পাঠা হবে? – রাজনৈতিক অঙ্গনে এই প্রশ্নটি উঠেছে বারবার।’
বিএনপির নেতারা মনে করেন, অন্যের পরামর্শে নয়, বরং নিজের শক্তিতেই বিএনপিকে শক্তিশালী হওয়া উচিত। নিজের ভালো-মন্দ বিবেচনা করেই রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা উচিত। সেটি কি বিএনপি পারবে করতে?