শাহজাদপুরে যমুনার ভাঙ্গণে বিলিন অর্ধশত বাড়িঘর পলিথিনের ঝুপড়িতে বাস করছে ক্ষতিগ্রস্তরা
- আপডেট সময় : ১২:০০:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
সেলিম রেজা স্টাফ রিপোর্টার: যমুনা নদীতে বন্যার পানি কমতে থাকায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার
খুকনি, কৈজুরি ও জালালপুর এ ৩টি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে ভয়াবহ আকারে যমুনা
নদীর ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। গত ৩ দিনে এসব গ্রামের অন্তত অর্ধশত বাড়িঘর
নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। গ্রামগুলি হল, কৈজুরি ইউনিয়নের
পাচিল,মোনাকষা,জালালপুর ইউনিয়নের ভেকা,
উথুলি,গুচ্ছগ্রাম,হঠাৎপাড়া,পাকুরতলা,শক্তিধরপুর,বাঐখোলা,জালালপুর,পাড়া
মোহনপুর,খুকনি ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ি,আরকান্দি ও ব্রাহ্মণগ্রাম। বাড়িঘর
হারিয়ে অনেক অসহায় মানুষ মাথা গোজার ঠাই না পেয়ে ভাঙ্গণ এলাকায় পলিথিন
টানিয়ে ঝুপড়ি তুলে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে অতিকষ্টে বসবাস করছে। এসব অসহায়
মানুষের কোন খোজ নেয়নি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন। ফলে তারা পরিবার
পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এ বিষয়ে পাঁচিল গ্রামের গো-খামারি মুল্লুক চাঁন মন্ডল বলেন, ২০২২ সালের
১৫ জানুয়ারী ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে পাঁচিল পর্যস্ত সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে
প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার যমুনা নদীর তীরসংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজের
উদ্বোধন করা হয়েছে। এ কাজ উদ্বোধনের পর ঠিকাদার কিছু এলাকায় বালুর বস্তা
ডাম্পিং করার পর কাজ বন্ধ রাখায় যমুনা নদীর তীব্র ভাঙ্গণে আমাদের বাড়িঘর
নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ
নিয়ে গোরুর খামার ও বাড়িতে দোতলা বিল্ডিং দিয়ে ছিলাম। যমুনার কড়াল গ্রাসে
গরুর খামার ও একটি বিল্ডিংয়ের আংশিক বিলিন হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ভাবে চরম
লোকশানে পড়েছি। অপরদিকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। ফলে
দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
এ বিষয়ে আজিদা বেগম,আরশাদ মিয়া ও নূরুজাজামান মন্ডল বলেন, যমুনায় বাড়িঘর
বিলিন হয়ে যাওয়ায় এবং অন্যত্র মাথা গোজার ঠাই না পেয়ে ভাঙ্গণ কবলিত
এলাকায় পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি তুলে পরিবার পরিজন নিয়ে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে
না খেয়ে অতিকষ্টে বসবাস করছি। এখনও পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের
লোকজন আমাদের খোজ খবর নেয়নি। কোনোরূপ ত্রাণ সহায়তা দেয়নি। তারা বলেন, গত
৩দিনে এ গ্রামে অন্তত ২৫টি বাড়িঘর যমুনায় বিলিন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ওই গ্রামের সিদ্দিক মন্ডল,জরিনা খাতুন ও হনুফা বেগম বলেন, শুনেছি
বন্যা ও ভাঙ্গণ কবলিতদের জন্য সরকার ১০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দিয়েছে।
কিন্ত আমরা যারা প্রকৃত নদী ভাঙ্গাণে অসহায় তারা এ বরাদ্দের একমুঠ চালও
পাইনি। এ চাল কাদের মাঝে কখন কবে কোথায় বিতরণ করা হয়েছে তা আমরা জানি না।
এ বিষয়ে জালালপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য জিয়াউল হক বলেন, সঠিক সময়ে
ঠিকাদার কাজ করলে এ বছর মানুষের আর ভাঙ্গণের কবলে পড়তে হোতো না। কিন্ত
ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ না করায় বর্ষমৌসুম শুরুর পর থেকে এ ৩টি ইউনিয়নের
১৪টি গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক বাড়িঘর যমুনা নদীর ভাঙ্গণের কবলে পড়ে বিলিন
হয়ে গেছে। বাড়িঘর হাড়িয়ে শত শত অসহায় মানুষ যাওয়ার যায়গা না পেয়ে ভাঙ্গণ
এলাকায় পলিথিন টানিয়ে অতিকষ্টে বাস করছে। তাদের জন্য কোনো বরাদ্দ না
দেয়ায় এদের দিন চলছে অর্ধহারে অনাহারে। তিনি আরও বলেন গত ৩দিনে এনব
গ্রামের অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি বাড়িঘর যমুনায় বিলিন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুল্লুক চান বলেন,
তার ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দি গ্রামে সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গণ দেখা
দিয়েছে। গত ২ মাসে অন্তত দেড়শ বাড়িঘর যমুনা নদীতে বিণিস হয়ে গেছে। গত
৩দিনে অন্তত ২০টি বাড়িঘর নতুন করে বিলিন হয়েছে’।
শাহজাদপুর উপজেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম বলেন, এটা
স্বাভাবিক ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে যমুনায় ভাঙ্গণ দেখা দেয়। এতে আমাদের কিছু
করার নেই। তিনি আরও বলেন, ভাঙ্গণ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০
মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ পাওয়ার পর ৭ মেট্রিকটন চাল ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে
বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৩ মেট্রিকটন চাল গুদামে মজুদ আছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর
রহমান বলেন, বন্যার পানি কমতে থাকায় শাহজাদপুরের কিছু অংশে ভাঙ্গণ দেখা
দিয়েছে। ওই সব ভাঙ্গণ কবলিত এলাকায় অচিরেই বস্তা ফেলার কাজ শুরু করা হবে।
তখন আর এ সমস্যা থাকবে না।