স্কুল শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের চেষ্টা
- আপডেট সময় : ০৭:৪৭:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩২৮ বার পড়া হয়েছে
বাউফল (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা: পটুয়াখালীর বাউফলে দুই সন্তানের জনক স্কুল শিক্ষক কর্তৃক সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ছাত্রীর মা সেলুনা বেগম (৪১) পটুয়াখালী বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(৪)(খ) ধারার পিটিশন মামলা নং-৩৬৩/২০২৩, তারিখ: ১৬/০৮/২০২৩ ইং।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য বাউফল থানায় প্রেরণ করেন। থানা কর্তৃপক্ষ মামলাটি এসআই মোঃ রফিকুল ইসলামকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী)/২০০৩ এর ৯(৪) (খ) ধারায় ধর্ষণ চেষ্টা করার অপরাধে ভিকটিমের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। যার মামলা নং-১৫, তারিখ : ২৫/০৮/২০২৩ইং।
সরেজমিন এবং মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাউফলের ১৪ নং নওমালা ইউপির ০৪ নং ওয়ার্ডস্থ নিজ বটকাজল গ্রামের মৃত মেছের আলী সিকদারের পুত্র দুই সন্তানের জনক স্কুল শিক্ষক আঃ ছালাম বাচ্চু সিকদার (৫০), শনিবার (১২ আগস্ট, ২০২৩) বিকেল ৫টার দিকে একই গ্রামের আশুরীর হাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মোঃ আশ্রাফ মৃধার নাবালিকা মেয়ে মোসাঃ ফারজানা (১৩) কে ধর্ষণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এবং আশপাশের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়’।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, নওমালা ইউনিয়নের নিজ বটকাজল আশুরির হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আঃ ছালাম বাচ্চু একজন চিহ্নিত দুশ্চরিত্র, পরনারীলোভী, লম্পট এবং অসৎ চরিত্রের লোক বটে। তিনি বাদীনির চাচা শ্বশুর। তিনি এলাকায় নিরীহ মহিলাসহ স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের পথেঘাটে বিরক্ত ও উত্তাক্ত করে থাকে।
এ ব্যাপারে বাদীনি সেলুনা বেগম বলেন, আসামী বাচ্চু বিভিন্ন সময় পথে ঘাটে চলার পথে আমার মেয়েকে যৌন হয়রানি করার জন্য কু-প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হয়ে মেয়ে আমার স্বামী এবং আমাকে ঘটনাটি জানালে আমরা এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে তা প্রকাশ করি এবং এর প্রতিকার চাই। এতে লম্পট বাচ্চু আরো ক্ষিপ্ত হয় এবং আমাদের উপর আক্রোশ পোষণ করে ঘটনার দিন আমার মেয়েকে বসতঘরে একা পেয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তিনি আরো বলেন, লম্পট বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা করলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন ভাবে আমাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। জীবননাশের আশঙ্কায় আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাচ্চু সিকদার নওমালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল’র সেকেন্ড ইন কমান্ড। তার ইশারায় এলাকায় মুহুর্তের মধ্যে অনেককিছু ঘটে যায়। চেয়ারম্যান বাহিনীর প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করছে। তিনি কোন কিছুর তোয়াক্কা করে না। তিনি একের পর এক বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, বাচ্চুসহ তার বাহিনী নওমালা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসেম হাওলাদারের পুত্র মোঃ আরিফ হোসেন (৩৫)কে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ৭ নভেম্বর, ২০২১ ইং তারিখ রাতে হামলা করে। এতে আরিফের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম, ক্ষত এবং একটি চক্ষু নষ্টের উপক্রম দেখা দেয়। এ ব্যাপারে আরিফের ভাই মোঃ মহি উদ্দিন মলি বাদী হয়ে বাউফল থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বাচ্চু সিকদার ০১ নং আসামি। যার নং- ০৯, তারিখে : ৮/১১/২০২১ ইং, ধারা : ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৬/৩৭৯/৩০৭।
অপরদিকে, দুই বছর যাবত জোরপূর্বক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পাশের বাড়ির সোনা মিয়া হাওলাদার, আব্দুল খালেক বিডিআর, আশরাফ দারোগা, আব্দুর রউফ হাওলাদার, আব্দুস সাত্তার হাওলাদার, ইউসুফ হাওলাদার, লতিফ হাওলাদার, সাবেক সেনা সদস্য শাজাহান হাওলাদার, সুলতান হাওলাদার, মজিবর হাওলাদার গংদের ‘এক কানি’ পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। এতকিছুর পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ফাঁকি দিয়ে তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
এ ব্যাপারে নিজ বটকাজল আশুরির হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোমিন গাজীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান কামাল বিশ্বাস বলেন, পারিবারিক শত্রুতা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এঘটনার সত্যতা নেই, এমনকি ঘটনার ঐ মেয়ে ঢাকায় ছিলেন।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া যায়নি, তবে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’