ঢাকা ০৪:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের নতুন সদস্য হলেন ২৫ গণমাধ্যম কর্মী রাজনৈতিক দলের সাথে মামলায় জড়িয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি না করার আহবান জোড়া কবরে শুয়ে রইলেন তারা, নিভে গেল দুই পরিবারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন সলঙ্গা থানা ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়কের নামে থানায় অভিযোগ  প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তপূর্বক অপসারণের দাবী রাজশাহীতে বৈষম্যমুক্ত নগরের দাবিতে আলোচনা সভা  বেলকুচিতে হত্যাকান্ডের বিচার ও পি আর পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গণ সমাবেশ রামেকে একসঙ্গে ৫ সন্তানের জন্ম দিলেন প্রবাসীর স্ত্রী সলঙ্গায় সাংবাদিকের উপর যুবদল নেতার হামলার অভিযোগ  খাজা মেডিকেল প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ আমজাদ হোসেনের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প 

ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের কবলে বাংলাদেশ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:২৬:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৬৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের কবলে পড়েছে বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ পরিস্থিতির জন্য সংস্থাটি জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছে। বুধবার অনলাইন সম্মেলনে সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এ তথ্য জানান।

এদিকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবকে ‘বিশ্বের ইতিহাসের ভয়াবহতম ডেঙ্গু সংক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে সংস্থাটি বুধবার জানিয়েছে, গত সাড়ে চার মাসে এই দেশে ১ লক্ষ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে মারা গিয়েছেন ৬৫০ জনের বেশি মানুষ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে গত বছরের মতো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বেশ কিছু অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়ানো শুরু হয়। আগস্টে তার প্রাদুর্ভাব ছিল সব চেয়ে বেশি’। শুধু গত আগস্ট মাসেই ৩০০’র বেশি মানুষ এই রোগে প্রাণ হারিয়েছেন। এখন ঢাকায় সংক্রমণের হার সামান্য কমলেও বাংলাদেশের অন্যান্য শহর এবং গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। এই ধরনের পতঙ্গবাহিত অসুখের এমন ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবকে ‘আসন্ন জলবায়ু সঙ্কটের অশনিসঙ্কেত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। গত বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হলেও এবার গোড়া থেকেই হাসপাতালে ভর্তির হার অনেক বেশি ছিল। মশার বংশবৃদ্ধির জন্য ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছে। আর অন্যদিকে বাসিন্দারা দায়ী করেছেন কর্পোরেশনের গাফিলতি ও উদাসীনতাকে।

অন্যদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে সময়ে-অসময়ে বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতা বাড়ছে। এ ধরনের আবহাওয়া ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার বংশ বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই এই অবস্থা থাকতে পারে। এমন বাস্তবতায় এবার ডেঙ্গুর বিস্তার আরও দীর্ঘায়িত করবে।”

কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদরা জানান, এতদিন তারা বলে আসছেন পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ুর পরিবর্তনে মশার বিস্তার বাড়ছে। বিশেষ করে এডিস মশা বিরূপ আবহওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে।’

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ২০ জন। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৬৮৯ জন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১১ জন, বাকি ৯ জন ঢাকার বাইরের। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯১ জনে।’

গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ১৯৯ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ হাজার ৭৯০ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৭১১ জনে। বর্তমানে ৯ হাজার ৭১১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪ হাজার ১৫১ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ৫ হাজার ৫৬০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।’

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এপ্রিলে সংক্রমণ শুরুর পর পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল দেশ বাংলাদেশে ১ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৬৫০ জন মারা গেছেন। ডব্লিউএইচও প্রধান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে শুধু গত মাসেই ৩০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই সংক্রমণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমে এলেও দেশের অন্যান্য অংশে এতে আক্রান্তের হার বাড়ছে।

সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে মাঠপর্যায়ে তারা বিশেষজ্ঞ মোতায়েন করেছে। তারা সার্বিকভাবে নজরদারি জোরদারে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছেন। সেই সঙ্গে তারা গবেষণাগারের সক্ষমতা ও আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেও সহায়তা করছেন।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে দেখা দেওয়া ডেঙ্গু মূলত একটি সংক্রামক রোগ। এর কারণে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি করা, পেশিতে ব্যথা এবং সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে রক্তপাত ঘটতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, পীতজ্বর ও জাইকার মতো মশাবাহিত রোগ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খুব দ্রুত এবং দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ছে।’

ডব্লিউএইচও’র অ্যালার্ট অ্যান্ড রেসপন্স বিভাগের পরিচালক আবদি মাহামুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ ধরনের সংক্রমণের ঘটনাগুলো ‘আসন্ন জলবায়ু সংকটের অশনি সংকেত’ দিচ্ছে’।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও এ বছরের বাড়তি উষ্ণতা সৃষ্টিকারী এল নিনোর মতো কিছু আবহাওয়াগত নিয়ামক বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ বেশকিছু অঞ্চলে ভয়াবহ পর্যায়ের ডেঙ্গু সংক্রমণ সৃষ্টি করেছে।’

জানতে চাইলে সরকারের জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. গোলাম ছারোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত প্রভৃতি পরিবেশের উপাদানগুলো এডিস মশার প্রজনন সক্ষমতা অর্থাৎ তাদের মিলনের ফ্রিকুয়েন্সি বৃদ্ধি করে। মিলনের পরপরই স্ত্রী মশা রক্ত পান করার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে যায়। তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি যে শুধু মশার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক তা নয়, ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াতেও মুখ্য ভূমিকা রাখে।’

যত বেশি পুরুষ আর স্ত্রী মশা মিলিত হবে তত বেশি স্ত্রী মশার ডিম পাড়ার ফ্রিকুয়েন্সিও বেড়ে যাবে। অর্থাৎ একক মশার ডিম পাড়ার ক্লাস্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। পরিবেশের এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ডিম ফুটে লার্ভা বের হওয়ার জন্য যেমন অনুকূল, তেমনি তাদের খাবারও পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। কারণ সবগুলো উপাদানই লার্ভার প্রাকৃতিক খাবার ব্যাকটেরিয়ার রেপ্লিকেশনের অত্যন্ত অনুকূল’।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকায় পানি সরবরাহের সমস্যা রয়েছে। বাসিন্দারা তাদের টয়লেট বা বাড়ির অন্যান্য জায়গায় বালতি বা প্লাস্টিকের পাত্রে পানি ধরে রাখেন। সেখানে সারা বছরই মশা থাকতে পারে। গত বছর ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল অক্টোবর মাসে। এবার অক্টোবর আসার আগেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি চলে গেলেই গরম বাড়ছে। সঙ্গে আর্দ্রতাও বেশি। এই আবহাওয়া এডিস মশার বংশ বিস্তার আরও বাড়াবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের কবলে বাংলাদেশ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আপডেট সময় : ০১:২৬:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের কবলে পড়েছে বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ পরিস্থিতির জন্য সংস্থাটি জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছে। বুধবার অনলাইন সম্মেলনে সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এ তথ্য জানান।

এদিকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবকে ‘বিশ্বের ইতিহাসের ভয়াবহতম ডেঙ্গু সংক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে সংস্থাটি বুধবার জানিয়েছে, গত সাড়ে চার মাসে এই দেশে ১ লক্ষ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে মারা গিয়েছেন ৬৫০ জনের বেশি মানুষ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে গত বছরের মতো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বেশ কিছু অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়ানো শুরু হয়। আগস্টে তার প্রাদুর্ভাব ছিল সব চেয়ে বেশি’। শুধু গত আগস্ট মাসেই ৩০০’র বেশি মানুষ এই রোগে প্রাণ হারিয়েছেন। এখন ঢাকায় সংক্রমণের হার সামান্য কমলেও বাংলাদেশের অন্যান্য শহর এবং গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। এই ধরনের পতঙ্গবাহিত অসুখের এমন ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবকে ‘আসন্ন জলবায়ু সঙ্কটের অশনিসঙ্কেত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। গত বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হলেও এবার গোড়া থেকেই হাসপাতালে ভর্তির হার অনেক বেশি ছিল। মশার বংশবৃদ্ধির জন্য ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছে। আর অন্যদিকে বাসিন্দারা দায়ী করেছেন কর্পোরেশনের গাফিলতি ও উদাসীনতাকে।

অন্যদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে সময়ে-অসময়ে বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতা বাড়ছে। এ ধরনের আবহাওয়া ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার বংশ বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই এই অবস্থা থাকতে পারে। এমন বাস্তবতায় এবার ডেঙ্গুর বিস্তার আরও দীর্ঘায়িত করবে।”

কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদরা জানান, এতদিন তারা বলে আসছেন পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ুর পরিবর্তনে মশার বিস্তার বাড়ছে। বিশেষ করে এডিস মশা বিরূপ আবহওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে।’

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ২০ জন। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৬৮৯ জন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১১ জন, বাকি ৯ জন ঢাকার বাইরের। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯১ জনে।’

গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ১৯৯ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ হাজার ৭৯০ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৭১১ জনে। বর্তমানে ৯ হাজার ৭১১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪ হাজার ১৫১ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ৫ হাজার ৫৬০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।’

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এপ্রিলে সংক্রমণ শুরুর পর পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল দেশ বাংলাদেশে ১ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৬৫০ জন মারা গেছেন। ডব্লিউএইচও প্রধান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে শুধু গত মাসেই ৩০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই সংক্রমণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমে এলেও দেশের অন্যান্য অংশে এতে আক্রান্তের হার বাড়ছে।

সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে মাঠপর্যায়ে তারা বিশেষজ্ঞ মোতায়েন করেছে। তারা সার্বিকভাবে নজরদারি জোরদারে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছেন। সেই সঙ্গে তারা গবেষণাগারের সক্ষমতা ও আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেও সহায়তা করছেন।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে দেখা দেওয়া ডেঙ্গু মূলত একটি সংক্রামক রোগ। এর কারণে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি করা, পেশিতে ব্যথা এবং সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে রক্তপাত ঘটতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, পীতজ্বর ও জাইকার মতো মশাবাহিত রোগ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খুব দ্রুত এবং দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ছে।’

ডব্লিউএইচও’র অ্যালার্ট অ্যান্ড রেসপন্স বিভাগের পরিচালক আবদি মাহামুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ ধরনের সংক্রমণের ঘটনাগুলো ‘আসন্ন জলবায়ু সংকটের অশনি সংকেত’ দিচ্ছে’।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও এ বছরের বাড়তি উষ্ণতা সৃষ্টিকারী এল নিনোর মতো কিছু আবহাওয়াগত নিয়ামক বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ বেশকিছু অঞ্চলে ভয়াবহ পর্যায়ের ডেঙ্গু সংক্রমণ সৃষ্টি করেছে।’

জানতে চাইলে সরকারের জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. গোলাম ছারোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত প্রভৃতি পরিবেশের উপাদানগুলো এডিস মশার প্রজনন সক্ষমতা অর্থাৎ তাদের মিলনের ফ্রিকুয়েন্সি বৃদ্ধি করে। মিলনের পরপরই স্ত্রী মশা রক্ত পান করার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে যায়। তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি যে শুধু মশার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক তা নয়, ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াতেও মুখ্য ভূমিকা রাখে।’

যত বেশি পুরুষ আর স্ত্রী মশা মিলিত হবে তত বেশি স্ত্রী মশার ডিম পাড়ার ফ্রিকুয়েন্সিও বেড়ে যাবে। অর্থাৎ একক মশার ডিম পাড়ার ক্লাস্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। পরিবেশের এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ডিম ফুটে লার্ভা বের হওয়ার জন্য যেমন অনুকূল, তেমনি তাদের খাবারও পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। কারণ সবগুলো উপাদানই লার্ভার প্রাকৃতিক খাবার ব্যাকটেরিয়ার রেপ্লিকেশনের অত্যন্ত অনুকূল’।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকায় পানি সরবরাহের সমস্যা রয়েছে। বাসিন্দারা তাদের টয়লেট বা বাড়ির অন্যান্য জায়গায় বালতি বা প্লাস্টিকের পাত্রে পানি ধরে রাখেন। সেখানে সারা বছরই মশা থাকতে পারে। গত বছর ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল অক্টোবর মাসে। এবার অক্টোবর আসার আগেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি চলে গেলেই গরম বাড়ছে। সঙ্গে আর্দ্রতাও বেশি। এই আবহাওয়া এডিস মশার বংশ বিস্তার আরও বাড়াবে।