মাঝেমধ্যে দুই চারটা হক কথাও বলা উচিত
- আপডেট সময় : ০৭:৩১:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩৪৬ বার পড়া হয়েছে
বলছি না-আমাদের সমাজের চোখ অন্ধ এবং বিবেক মরে গেছে। কিন্তু চোখ যে দেখেও দেখেনা,বিবেক বুঝেও বোঝে না,এটি তো সত্যি!এ সত্য লুকিয়ে চুবিয়ে নেই।দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ সর্বত্র।সবাই দেখে,দেখছে সবকিছু।কিন্তু দেখে কী হয়!কী হচ্ছে!কেউ কেউ কিছুটা বলছেনও হয়তো।তবে কণ্ঠটি খুবই ক্ষীণ!
সবকিছু চেয়ে চেয়ে দেখার এবং দেখে চুপটি করে থাকার এক অদ্ভুত ঘোর আমাদের পেয়ে বসেছে।আমরা ধরেই নিয়েছি,এখন সমাজ এভাবেই চলার কথা।এভাবেই চলবে!চলছেও!এখানে যে যার খুশি কাজ করবে-এটি মানুষের স্বাধীনতা!এটি হয়!হওয়া উচিৎ!
এ স্বাধীনতার অর্থ,অন্যের অধিকার লুণ্ঠন করে নিজের ইচ্ছেকে তুঙ্গে তোলা নয়!এর অর্থ এ-ও নয়,একজন দশজনের সুযোগ ভোগ করবে!দশজনের জিনিস কুড়িয়ে নেবে একজন!
বলার স্বাধীনতা থাকবে সবার।চলার স্বাধীনতাও। তার মানে এই নয়,একজন যা ইচ্ছে বলবে।অন্যরা চুপচুপ হয়ে শুনবে আর শুনবে,মানবে আর মানবে!যাকে ইচ্ছে হেয়,অপমান কিংবা জুলুম করবে।মানবিক অধিকার বলে কিছু থাকবে না।ন্যায় অন্যায় ভাবার কিছু নেই।
একদা সমাজের দুষ্ট লোকদের ভীষণ অপছন্দ করত মানুষ!সুদখোর ঘুষখোরদের ঘৃণা করত।অন্যায়ভাবে সম্পদ আহরণ করে বড়লোকগিরি ফলানোর সাহসই ছিল না কারো।এরা বেশ জড়োসড়ো হয়ে চলত।সমাজের আর দশজনের সাথে মেশামেশির পর্বে তাদের খুব একটা দেখা যেত না।সমাজের মানুষও এদের খুব বাঁকা চোখেই দেখত।
মানুষের আচরণ দেখে মনে হয়,ন্যায় আবার কী জিনিস?এটি খায় না মাথায় দেয়!এমনই একটি ভয়ঙ্কর অবস্থানে পৌঁছেছে আমাদের সমাজ।
যদি প্রশ্ন করি,এসব সিঁদেল চোরেরা কেন চুরি করে?এর জবাবে সবাই বলবেন-এরা চুরি করে পেটের দায়ে।তিনবেলার আহার ঠিকঠাক জোটে না বলেই চুরি করে এ শ্রেণীটি।কারো কারো শিশু বাচ্চাটিও অনাহারে দিন কাটায়।মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেবার মতো খাদ্যও থাকে না তাদের সংসারে।অনেকটা নিরুপায় হয়ে চুরির মতো একটি গর্হিত কাজে জড়িয়ে যায়।ধরা পড়লে মৃত্যুও হতে পারে সে জানে।জেনেও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সিঁদ কাটে বা গরু ছাগল ভেড়া চুরির কাজ করে।
আমাদের বর্তমান সামাজিক অবস্থা কি-একটি ছোট চোরের কথা বলি।ধরুন একটি গরু চোর।কিংবা ছাগল চোরের কথা ধরা যাক।অথবা গ্রামে গরিব দুঃখীর ঘরে সিঁদকাটা চোরের দিকে তাকাই-কী ভয়ঙ্কর তাদের পরিণতি!এ ধরনের চোর ধরা পড়লে তাদের পরিণতি কী হয় আমরা সবাই জানি।ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় তারা।কখনো কখনো নির্যাতনের মাত্রা এতই প্রবল হয়,চোরটি প্রাণও হারায়!
সিদেল চুরিটা নেহায়েতই জঠরের জ্বালা থেকে।সামান্য আহার পেটে নেয়ার তাগিদেই এবং কোথাও কোনো কাজ মিলাতে না পেরে।
তবুও সমাজে এদের অবস্থান কী?কেউ কি ভালো চোখে দেখে এদের?কেউ সম্পর্ক রাখে এদের সাথে?মেশামিশি করে?ঘৃণার মাত্রাও বেহিসেবী।সামাজিক কোনো কাজে রাখা হয় না এদের।এদের সঙ্গে আত্মীয়তা করার কোনো কল্পনাও করে কেউ!এরা সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট অংশ।
কিন্তু আমরা আমাদের সমাজের শরীরে দৃষ্টি দিলে কী দেখি?এ জিজ্ঞাসারও জবাব বোধকরি দরকার হবে না।
আমরা অপরাধকে ঘৃণা করতেও ভুলে গেছি? অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে যারা,যারা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে,করেছে,এদের প্রতি সম্মান দেখানোর মনোভাবও কি অপরাধ নয়?যারা এদের ফুলের মালা পরিয়ে জয়গান গায় তারা কি কম অপরাধী?
সম্প্রতি আমার সাংবাদিকতার প্রায়োগিক শিক্ষক সিনিয়র সাংবাদিক হৃদি মোতালেব (গুরুজি) খুব আক্ষেপ করে তার এক লেখায় বলেছিলেন”আল্লাহ জিহ্বাটাকে কেবল চাটাচাটির জন্যই দেয় নাই,মাঝেমধ্যে দুই চারটা হক কথাও বলা উচিত”
অপরাধ ঘৃণা করার মতো সামাজিক মূল্যবোধটুকুও হারিয়েছে আমাদের সমাজ!না,শুধু আফসোস করে ছেড়ে দিতে চাই না আমরা।এখান থেকে বের হতে হবে আমাদের। এ ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে প্রত্যেক বিবেকবান মানুষকে। রুখে দিতে হবে সব অবিচার!সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে সততার মূল্য।সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।বুঝতে হবে- সত্য-ই সুন্দর!তবেই আমাদের সমাজটা হয়ে উঠবে মানবিক।
লেখক: মো: গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিএমএসএফ, ফুলপুর, ময়মনসিংহ।