কুষ্টিয়ায় ২ মাসে ৭ শ’র উপরে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ! মারা গিয়েছে ৫ জন
- আপডেট সময় : ০১:২৪:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৬৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা পোর্টাল: কুষ্টিয়ায় দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে আত্মঘাতী ডেঙ্গু। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এদিকে মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির খবর শুনে কুষ্টিয়ার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল কুষ্টিয়া জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে ৬৬ জন কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালেই ৩২ জন। কুষ্টিয়ায় ২ মাসে ৭ শত উপরে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে মারা গিয়েছে ৫ জন। গত ৭ দিনে মারা গিয়েছে ৩ জন। এদের মধ্যে গতকাল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে তানহা (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটির মৃত্যু হয়। তানহা দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের ছাতারপাড়া গ্রামের মোকলেস উদ্দিনের শিশু কন্যা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ঘরেই এখন জ্বর হচ্ছে। এবং জ্বরে খুব কষ্ট হচ্ছে। চারিদিকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা শুনে তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। তারা আরো বলেন, মশার উপদ্রব এত পরিমানে বেড়েছে যে সন্ধ্যার পর কোথাও এক মিনিট স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। শুধু সন্ধ্যার পরেই নয় দিনের বেলাতেও মশা কামড়াচ্ছে। চায়ের দোকান, রাস্তার উপর, খোলা মাঠে, নদীর ধারে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, অফিসে এমনকি বাসা বাড়িতেও মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। মশার কামড়ে গা হাত পা ফুলে যাচ্ছে। কয়েল ও এরোসলে মশার কিছুই হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর আবার মশা কামড়ানো শুরু করছে। এ সময়ে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে শীতের মধ্যে মশা নিধনের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দরকার ছিল। যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা নেয়নি। দিনে রাতে ২৪ ঘন্টায় বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে মশার অত্যাচারে ভীত হয়ে দিন কাটাচ্ছি। এখন মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে তারা মনে করেন। সেই সাথে ডেঙ্গু যেন মহামারীতে রূপ নিতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেদেরকে এখনই জরুরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার কঞ্জারভেন্সি ইন্সপেক্টর মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, এখন প্রতিদিন ২১ টি ওয়ার্ডেই নিয়মিত ঔষধ ছিটানো হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরা একজন করে নিয়োগ দিয়েছে। এবং জঙ্গল পরিষ্কারের জন্য তিনজন করে নিয়োগ দেওয়া আছে। যাদের বেতন প্রতিদিন ৪৫০/- টাকা করে কুষ্টিয়া পৌরসভা দিচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিনের ঔষধ প্রতিটি ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তারাই প্রতিটি ওয়ার্ডে ছিটিয়ে দিচ্ছে এবং জঙ্গল পরিষ্কার করছেন।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার বলেন, এই মুহূর্তে ৩০ জনের মত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। গত এক মাসে তিনশোর উপরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জন মারা গিয়েছে। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছে। যারা এখন ভর্তি আছে তাদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আজকে কুষ্টিয়া মিরপুরে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আর কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ৪ জন মারা গেছে। এই সিজনে মোট ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। জানুয়ারি থেকে ৭২৭ জনের মত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। আর আজকে কুষ্টিয়া জেলাযর সদর হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ ৬৬ জন ভর্তি রয়েছে। এদের মধ্যে শুধু কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৩২ জন। কুষ্টিয়া শহরসহ আশেপাশের গ্রামগঞ্জে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের ম্যাক্সিমাম মানুষই আমাদের কাছে আসছে না । তারা বাসায় চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে যাচ্ছে। যাদের অবস্থা অতিরিক্ত খারাপ হয়ে যাচ্ছে তারাই হাসপাতালে এসে ভর্তি হচ্ছে। আমরা নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছি এবং জনসচেতনার জন্য মাইকিং করছি। আসলে ডেঙ্গু হওয়াটা স্বাস্থের জন্য তো ভালো বিষয় না। এখন দিনে রাতে সব সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। বাসার আঙ্গিনা ও আশেপাশের জঙ্গল পরিষ্কার রাখতে হবে। আমরা তো চিকিৎসা দিচ্ছে কিন্তু বেশি লোক আক্রান্ত হলে আমাদেরও সেবা দিতে হচ্ছে। আসলে আমাদেরও তো কিছু করার নাই।