পাতি নেতা জিন্দাবাদ।
- আপডেট সময় : ০৫:৩১:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩০৫ বার পড়া হয়েছে
দেশে যে পাতি নেতার বাম্পার ফলন হয়েছে আজ একটি টিকটক ভিডিও ক্লিপ দেখলাম ফেসবুকে।এক ছেলে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে,আর একে ওকে বলছে,আমি নেতা হইছি।
আমাকে সবাই নেতা মানবা।সঙ্গী মোসাহেবরা কখনো মাথা নেড়ে,কখনো নেতার কথা পুনরাবৃত্তি করে সায় দিচ্ছে।ওই নেতা একজনকে বলছে,এই তো দশ মিনিট আগে আমার মোবাইলে মেসেজ পাঠাইছে,আমি কমিটি পাইছি।এখন থেকে আমারে সালাম দিবা। উঠতে-বসতে সালাম দিবা।হুদাহুদি সালাম দিবা।
আর এখন থিকা আমারে ডরাইবা।আমারে আইতে দেখলে মনে করবা বাঘ আইতাছে, বোঝছ?ভিডিও চিত্রটিতে আমাদের দেশের বর্তমান রাজনীতির একটি বাস্তব চিত্র যে তুলে ধরা হয়েছে,তা অস্বীকার করা যাবে না।
কিন্তু কেন এদের মধ্যে নেতা হওয়ার এমন প্রবণতা?কারণ,নেতা হওয়ার অনেক সুবিধা।দল ক্ষমতায় থাকলে তো কথাই নেই।না থাকলেও ‘সামনে ক্ষমতায় আসছি’ এই কবজ ঝুলিয়ে মানুষের কাছ থেকে সমীহ আদায় করা যায়।
নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করার আরেকটি পদ্ধতি অধুনা খুব বাজার পেয়েছে।নিজের বড় সাইজের ছবি সংবলিত রংবেরঙের ফেস্টুন-ব্যানার গাছের ডাল ল্যাম্পপোস্ট কিংবা কোনো স্থাপনার পিলার বা দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়ে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া যায় সে কত বড় নেতা।ফলে আজকাল অনেকেই কর্মী না হয়েই নেতার কুরসিতে বসতে চান।ভাবখানা এই,যেন নেতা হওয়ার জন্যই তাঁরা এই ধরাধামে তাশরিফ এনেছেন।
এবং সমাজের জন্য ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত হলো যে বর্তমানে কতিপয় ব্যক্তির কাছে তোষামদি একটা স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে।অনেকেই এটাকে আঞ্চলিকভাবে চামচামীও বলে থাকে।এমন কিছু নেতা আছে তারা শুধু ওইসব চামচা নিয়ে ঘুরতে ভালোবাসে।
আর চামচারাও কতিপয় ওইসব নেতাদের সুখ দিতে নিরালশ খেটে খায়।তাদের পরিশ্রমের অন্যতম উদাহরণই হলো জ্বি হুজুর,জ্বি হুজুর সম্বোধন করা।আর পাতি নেতার নামে জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ করা এতে নেতা খুশি হলেই তো স্বার্থ হাসিলে এগিয়ে যাবে তারা।এসব কর্মী বাহিনীরা মিছিল-মিটিং,সভা-সমাবেশেও বেশ সক্রিয় থাকে।আর বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তারা এতটাই সরব।
যেখানে নেতাকে নিয়ে একটি গঠনমূলক আলোচনা হলেও যেন নেতাকে ডিঙ্গিয়ে চামচাদের মন্তব্যের হিড়িক শুরু হয়।কে কার আগে মন্তব্য করে নেতাকে খুশি করাতে পারে।এবং ফেসবুকেও সেলফী ছবি দিয়ে ভাই কিংবা বোন নামক নেতা-নেত্রীকে নিয়ে বেশ সুনাম গায়।যেখানে তাদেরকে কেউ কেউ পিতৃতুল্য কিংবা মাতৃতুল্য সম্মাননাও দিয়ে থাকেন।
তবে তাদের মুল টার্গেট থাকে এলাকায় প্রভাব খাটানো।নেতার সাথে ছবি তোলে এলাকায় অমুকের লোক দেখিয়ে দাপট দেখানো।অথবা বিভিন্ন সেক্টর থেকে টুপাইস হাতানো।
এ তৈল মর্দন কিংবা চামচামি এতটাই নীচে নিয়ে যায় তাদের।যে,কেউ কেউ বাপজান থেকে আব্বা,বাজান,আম্মা বলেও সম্বোধন করেন। তবে সত্যিকার অর্থে এদের অনেকেই অন্তর থেকে সেই সম্মান নিজ মা-বাবাকেও দেয় কিনা তা চামচাগুলোর বাড়িতে খোঁজ নিলেই জানা যায়।
কাউকে অভিভাবকের স্থানে রেখে সম্মান দেয়াটা দোষের নয়,তবে তা যদি উদ্দেশ্যমূলক হয়, সেখানেই প্রশ্ন উঠে।প্রকৃতপক্ষে তাদের স্বার্থের জন্যই এই ভন্ড কান্ডে লিপ্ত থাকে চামচা নামক কতিপয় মানবরা।
এবার মহামান্য নেতাদের কথা বলি।নেতারা বেজায় ক্ষমতাধর।তাদের বয়ান ও বয়নে নানা কিসিমের প্রতিশ্রুতি লুকিয়ে থাকে।তারা লোক পটাতে পটু।নেতাদের কথা অগ্রাহ্য করে এমন মানুষ বিশ্বে এখনো পয়দা হয়নি।
তারা কেবল সব্যসাচী নয়,সবজান্তা শমসেরও বটে।আবার নেতা মানেই অভিনেতা।অভিনয় না জানলে তার পক্ষে নেতা হওয়া মুশকিল বইকি।লাজলজ্জা থাকলেও নেতা হওয়া কঠিন।চিবিয়ে চিবিয়ে জ্ঞানের কথা বলবেন,কিন্তু আদতে একটাও মানে না।
তবে এরা মৌসুমে খুব হম্বিতম্বি দেখালেও দুর্দিন দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে বটে।কারন এরা পটাপট পলটি খান,মানে বিপদ বুঝে লেজমুড়ো একখানে করে ফেলেন।কিন্তু মহাশয়,ঝড় কি সব সময় বলেকয়ে আসে!যদি এমন হয়,আপনি দিক-দিশে খুঁজে পাবার আগেই সুনামি এসে গেল,তখন কী করবেন!ছাতা ধরবেন,নাকি তল্পিতল্পা গোটাবেন!ভাবুন,মন দিয়ে ভাবুন,তারপর না হয় পলিটিকসে নামবেন।
তবে মোদ্দাকথা হলো চরিত্রের গাছপাথর নেই বলে।প্রয়োজন বুঝে হালের নেতারা সব বেশ বদল করেন এবং চিত্রবিচিত্র ভেক ধরে নিজের চামড়া বাঁচান।পাবলিক এসব যে একেবারেই বোঝে না,তা তো নয়।কিন্তু কী করবেন বলুন?পলটিবাজ নেতাদের নিয়েই তো বর্তমান পলিটিকস বেঁচে আছে।তাই আসুন একেবারে নাড়ীর ভিতর থেকে সর্বষ জোর গলায় আমরা আওয়াজ তুলি পাতি নেতা জিন্দাবাদ?
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
আমার লেখাটি কোন পাতি নেতা,আধলি নেতা,সিকি নেতা আতকা নেতা,হুদাই নেতা,বা গোঁফ গজায়নি ঘরে গেলে চাল চুলাও নাই তবুও বিরাট এলার্জি নেতা।এমন কারো কাছে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের তো আজ বিরাট প্রশংসা করলাম মিয়া!লজ্জা ভুলে বিকাশ নাম্বার চেয়ে নিবেন।
লেখক: গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক,বিএমএসএফ, ফুলপুর, ময়মনসিংহ।