ঢাকা ০৮:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
টেকনাফে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় অস্ত্রদিয়ে ফাঁসানো নিরপরাধ শহিদুল্লাহর মুক্তির দাবি নেতাদের শিক্ষক উন্নয়নের জন্য ইউনেস্কো-হামদান পুরস্কার পেয়েছে ‘গুড নেইবারস বাংলাদেশ’ বেলকুচিতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ভন্ড কবিরাজের বাড়িতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অভিযান   বিশ্ব শিক্ষক দিবসে নিজ সহকর্মিদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন গুণী শিক্ষক শওকত আলী বদির ক্যাশিয়ার ফারুককে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হলেন র‍্যাব সদস্যরা কাজিপুরের চরাঞ্চলের বিদ্যুতে শুভংকরের ফাঁকি ! চাহিদা ১০ বরাদ্দ মাত্র ২ মেগাওয়াট!  স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ  কাজিপুরে ধর্ষণের অভিযোগে অফিস সহকারি গ্রেপ্তার বেলকুচিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

ইউনূসের বিচার কি সরকার দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছে?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪০:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৪২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত এই স্বাক্ষ্য গ্রহণের পর আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছেন। ড. ইউনূসের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং অন্যদিকে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন খুরশিদ আলম খান। এই মামলায় এখন তিন জন সাক্ষ্য বাকি রয়েছে। আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যেতে পারে। আইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে মামলার দ্রুত তারিখ পড়ছে, তাতে অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে’।

চলতি বছরের ৬ই জুন ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চারজনের নামে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম মেরিনা সুলতানা। পরে ১৯শে মে শ্রম আদালতের আদেশটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। কিন্তু হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২৩ জুলাই শ্রম আদালতের মামলার অভিযোগ আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল নিশি করেছিলেন। রুলের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ২৫শে জুলাই চেম্বার আদালতে স্থগিত না দিয়ে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত মামলাটি স্থিতাবস্থায় রেখে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় ৩ আগস্ট মামলাটির রুল শুনানির জন্য হাইকোর্টে নতুন বেঞ্চ গঠন করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। শুনানি শেষে ৮ আগস্ট রুল খারিজ করে দেওয়া হয় এবং এই মামলা শ্রম আদালতে বিচারের জন্য পাঠানো হয়। এখন এই বিচার নিষ্পত্তির পর্যায়ে।

আদালতে যেভাবে এই বিচার প্রক্রিয়া গড়াচ্ছে তাতে আইনজীবীরা বলছেন, মামলার বিষয়বস্তু ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আজ তথ্য বিকৃত করা এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে সাত জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূসের আইনজীবী। অন্যদিকে শ্রম পরিদর্শন দপ্তরের পক্ষ থেকেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়। আদালত এই দুটির একটির ব্যাপারেও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেননি।

ড. ইউনূসের জামিন বাতিলের আবেদন কেন করা হয়েছে, এ নিয়েও কলকারখানা প্রতিষ্ঠানের আইনজীবী খুরশিদ আলম বলেছেন, তিনি বাইরে থেকে মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন’। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রকম চাপ সৃষ্টি করছেন এবং তিনি মামলায় উপস্থিত না হয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। অথচ সাক্ষ্য গ্রহণের সময় তার উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন। এটা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, আদালতে বাদীপক্ষ দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে চাইছেন। সাধারণত যে কোনো মামলায় দেখা যায় যে, একটি তারিখ থেকে আরেকটি তারিখের ব্যবধান বেশি হয়। কিন্তু এখানে এক সপ্তাহের ব্যাবধানেই আরেকটি তারিখ দেওয়া হচ্ছে। ফলে এই মামলা যে দ্রুত নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা রকম কথাবার্তা শুরু হয়েছে। একশ’ ষাট জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. ইউনূসের বিচার স্থগিত চেয়ে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সেই খোলা চিঠির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বাংলাদেশে এসে বিচার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন’। ড. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবী বলেছিলেন, এই আমন্ত্রণ তারা গ্রহণ করতে রাজি আছেন। কিন্তু এরপর তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। প্রশ্ন হলো যে, সরকারের কৌশল কি? সরকার কি ড. ইউনূসের ইস্যুটিকে দ্রুত নিষ্পত্তি করে নির্বাচনের আগেই একটি ফয়সালা করতে চাইছেন? অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই মামলাটি তাদের নয়, এটি শ্রমিকদের করা মামলা, এখানে সরকারের কিছু করার নেই’।

কিন্তু যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউনূসকে নিয়ে বাড়তি চাপ দিচ্ছে, সেই সময় এই মামলার কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে হওয়ার ফলে প্রশ্ন ওঠেছে সরকার কি তাহলে ড. ইউনূসের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসেননি এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়টিকে নিয়ে যে আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান, সেটিকে সরকার খুব একটা বেশি আমলে নিচ্ছে না? অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। আইন সকলের জন্য সমান। নোবেল জয় করলেই যে তিনি আইনের উর্ধ্বে উঠবেন-এমন কোনো বিধি-বিধান বাংলাদেশের আইনে নেই।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ইউনূসের বিচার কি সরকার দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছে?

আপডেট সময় : ১০:৪০:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত এই স্বাক্ষ্য গ্রহণের পর আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছেন। ড. ইউনূসের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং অন্যদিকে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন খুরশিদ আলম খান। এই মামলায় এখন তিন জন সাক্ষ্য বাকি রয়েছে। আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যেতে পারে। আইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে মামলার দ্রুত তারিখ পড়ছে, তাতে অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে’।

চলতি বছরের ৬ই জুন ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চারজনের নামে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম মেরিনা সুলতানা। পরে ১৯শে মে শ্রম আদালতের আদেশটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। কিন্তু হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২৩ জুলাই শ্রম আদালতের মামলার অভিযোগ আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল নিশি করেছিলেন। রুলের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ২৫শে জুলাই চেম্বার আদালতে স্থগিত না দিয়ে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত মামলাটি স্থিতাবস্থায় রেখে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় ৩ আগস্ট মামলাটির রুল শুনানির জন্য হাইকোর্টে নতুন বেঞ্চ গঠন করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। শুনানি শেষে ৮ আগস্ট রুল খারিজ করে দেওয়া হয় এবং এই মামলা শ্রম আদালতে বিচারের জন্য পাঠানো হয়। এখন এই বিচার নিষ্পত্তির পর্যায়ে।

আদালতে যেভাবে এই বিচার প্রক্রিয়া গড়াচ্ছে তাতে আইনজীবীরা বলছেন, মামলার বিষয়বস্তু ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আজ তথ্য বিকৃত করা এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে সাত জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূসের আইনজীবী। অন্যদিকে শ্রম পরিদর্শন দপ্তরের পক্ষ থেকেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়। আদালত এই দুটির একটির ব্যাপারেও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেননি।

ড. ইউনূসের জামিন বাতিলের আবেদন কেন করা হয়েছে, এ নিয়েও কলকারখানা প্রতিষ্ঠানের আইনজীবী খুরশিদ আলম বলেছেন, তিনি বাইরে থেকে মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন’। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রকম চাপ সৃষ্টি করছেন এবং তিনি মামলায় উপস্থিত না হয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। অথচ সাক্ষ্য গ্রহণের সময় তার উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন। এটা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, আদালতে বাদীপক্ষ দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে চাইছেন। সাধারণত যে কোনো মামলায় দেখা যায় যে, একটি তারিখ থেকে আরেকটি তারিখের ব্যবধান বেশি হয়। কিন্তু এখানে এক সপ্তাহের ব্যাবধানেই আরেকটি তারিখ দেওয়া হচ্ছে। ফলে এই মামলা যে দ্রুত নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা রকম কথাবার্তা শুরু হয়েছে। একশ’ ষাট জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. ইউনূসের বিচার স্থগিত চেয়ে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সেই খোলা চিঠির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বাংলাদেশে এসে বিচার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন’। ড. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবী বলেছিলেন, এই আমন্ত্রণ তারা গ্রহণ করতে রাজি আছেন। কিন্তু এরপর তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। প্রশ্ন হলো যে, সরকারের কৌশল কি? সরকার কি ড. ইউনূসের ইস্যুটিকে দ্রুত নিষ্পত্তি করে নির্বাচনের আগেই একটি ফয়সালা করতে চাইছেন? অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই মামলাটি তাদের নয়, এটি শ্রমিকদের করা মামলা, এখানে সরকারের কিছু করার নেই’।

কিন্তু যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউনূসকে নিয়ে বাড়তি চাপ দিচ্ছে, সেই সময় এই মামলার কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে হওয়ার ফলে প্রশ্ন ওঠেছে সরকার কি তাহলে ড. ইউনূসের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসেননি এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়টিকে নিয়ে যে আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান, সেটিকে সরকার খুব একটা বেশি আমলে নিচ্ছে না? অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। আইন সকলের জন্য সমান। নোবেল জয় করলেই যে তিনি আইনের উর্ধ্বে উঠবেন-এমন কোনো বিধি-বিধান বাংলাদেশের আইনে নেই।’