বাণিজ্যমন্ত্রী, এবার আপনি কি বললেন?
- আপডেট সময় : ১০:১৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৯১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে আজকের জনজীবন দুঃখ ও হাহাকারে পূর্ণ’। জীবন ধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ে বিত্তশালীদের এখন নাভিশ্বাস উঠেছে। অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জন্যই সাধারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী পুরো পরিস্থিতিকে অস্বীকার করছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ে বিভিন্ন সময় দেয়া তার বক্তব্যগুলো একজন মাতালকেও হার মানাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে তিনি একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য রাখছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুই রকম উত্তর দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি দাবি করেছেন, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি আমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত মনিটরিং (তদারকি’) করছে। এর এক দিন পর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো তিনটি কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪-৬৫ টাকা। কিন্তু বাজারে এর কোন প্রভাব পাল্টায়নি, দ্রব্যমূল্যের চিত্রও বদলায়নি। বরং মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আর ঘনীভূত হয়েছে। পুরো বাজার ব্যবস্থাকে একটা সার্কাসের সাথে তুলনা করেছেন সাধারণ মানুষ।
তিনটি বেঁধে দেওয়া দাম ঘোষণা করার দিন সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, ‘কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে।’ অর্থাৎ বাজারের ওপর তার যে কোন নিয়ন্ত্রণই নাই সেটি তার কথা স্পষ্ট। জনসাধারণের প্রশ্ন তাহলে তিনি কি করছেন। কাঁচা বাজারগুলোতে বাণিজ্যমন্ত্রী এখন এক গালিতে পরিণত হয়েছেন। শুধু কাঁচা বাজারগুলোতে নয়, সংসদেও বাণিজ্যমন্ত্রীকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে যেন মন্ত্রীর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই’।
বিশ্লেষকরা বলছেন বর্তমানে বাজারে দ্রব্যমূল্য যেভাবে লাগামহীন ভাবে বেড়েছে তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান কোন তৎপরতাই নেই। বরং দ্রব্যমূল্য নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন কথাবার্তা মানুষের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ তাকে এলার্জি বলতেও দ্বিধারোধ করছেন না।
এর আগেও বাণিজ্যমন্ত্রী একাধিকবার সাধারণ মানুষের বিরক্তির কারণ হয়েছে। ২০২০ সালের শুরুর দিকে যখন বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন ভাবে বাড়তে থাকে তখন মন্ত্রী বিভিন্ন রকম বক্তব্য দিয়ে দায় এড়িয়েছিলেন। এরপর এ বছর যখন আবার কাঁচা মরিচ নিয়ে বাজার অস্থির হয়ে উঠেছিল তখন মন্ত্রী ছিলেন বেশ উদাসীন। বার বার বাজার সিন্ডিকেটকে দায়ী করলেও দিন শেষ সিন্ডিকেটের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন তিনি’। এ ব্যাপারে কোন কার্যকরি ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারেননি বাণিজ্যমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি করে বাজারকে স্থিতিশীল করেছে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ছিল নিষ্ক্রিয়।
এরপর আগস্টে হঠাৎ করেই বাজারে লাগামহীন ভাবে ডিমের দামও বেড়ে গিয়েছিল। তখন বাণিজ্যমন্ত্রী ডিমের দাম কমানোর ক্ষেত্রে তার কারিশমা দেখা পারেনি। বরং আমদানি করে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হবে, এটি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে ইত্যাদি কথা বলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। বাজারে একটার পর আরেকটার দাম বাড়লেও মন্ত্রীর ছিলেন ভূমিকাহীন। বরং ২৬ জুন সংসদে দেওয়া বক্তব্যে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে না বলে তিনি পুরো বাজার পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে সিন্ডিকেটকে সরাসরি সমর্থন করা হয়েছে জানিয়ে ছিলেন। এটি নিয়ে যখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী গত ২৯ আগস্টে কথা বলেছেন পরের দিন ৩০ আগস্ট বাণিজ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকেই বিতর্কিত করার নির্লজ্জ চেষ্টা করেছেন। এখন আলুর দাম নিয়ে বাজার পরিস্থিতি আবার অস্থির হয়ে উঠেছে। আলুর দাম বেঁধে দিলেও বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না কাঁচা বাজারগুলোতে’। ফলে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এখন বাণিজ্যমন্ত্রী আবার কি বললেন?
















