মিথ্যা তথ্যে অশ্রদ্ধা ও সুসাংবাদিকতা
- আপডেট সময় : ০২:০৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭৩ বার পড়া হয়েছে

নায়িকা পপির ঢাকার সিনেমায় শুরুটা মনতাজুর রহমান আকবরের ‘কুলি’ (বলিউডের গোবিন্দ, কারিশমার ‘কুলি নাম্বার ওয়ানের’ নকল) দিয়ে। ওমর সানির সঙ্গে। শ্বশুরবাড়ির সূত্রে পপি আত্মীয়া হন ওমর সানির। কুলির ‘আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটারে’, ‘জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি, মন চায় প্রেমে পড়ি’ গান দুটি সাড়া ফেলে, সিনেমা ব্যবসাসফল হয়। এরপর সোহানুর রহমান সোহানের পরিচালনায় শাকিল খানের সঙ্গে পপির ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ (কপিরাইটসহ বলিউডের ‘দিল’) মুক্তি পায়। অভিনেত্রী মৌসুমির ছোট বোন ইরিন জামানের অভিনয় করা সিনেমার নাম ‘অনন্ত ভালোবাসা’। যা সোহানুর রহমানের পরিচালনায় শাকিব খানেরও প্রথম সিনেমা ছিলো। তখন শাকিব চলচ্চিত্রপাড়ায় একেবারে নতুন হলেও ইরিন তা ছিলেন না। এর আগেই ইরিন তার বোন মৌসুুমি, ভগ্নিপতি ওমর সানির অভিনীত ‘গরিবের রাণী’ সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়ে দর্শক, শ্রোতার কাছে পরিচিতি পান।
মনোয়ার খোকন পরিচালিত ওই সিনেমায় ইরিনের কণ্ঠে গানটি ছিলো, ‘অ চাঁদ তুমি সরে যাও, অ রাত তুমি দূরে যাও, মনের মানুষ আজ এসেছে কাছে’। অভিনেত্রী হওয়ার আগে থেকে ইরিন গান গাইতেন, উপস্থাপনা করতেন। সোহানুর রহমানের হাত ধরে পপির সিনেমাপাড়ায় যাত্রা হয়নি, তেমনই ইরিনও সোহানের আবিষ্কার নন ঠিক শাকিব, শাকিল খানের মতো। পপি, ইরিনের চলচ্চিত্র যাত্রা সম্পর্কে সোহানুর রহমানের মৃত্যুর পর যেভাবে লেখা হয়েছে, সেসব অর্ধসত্য। মিথ্যা। বানোয়াট, ভুলভাল তথ্যে কাউকে স্মরণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গেলে সেখানে অজ্ঞতার অশ্রদ্ধা প্রকট হয়ে ওঠে। ‘আশ্চর্যের’ বিষয় হচ্ছে, সুসাংবাদিকতার শ্লোগান দেয়া প্রচারমাধ্যমগুলোতেও ভুলেভরা তথ্য প্রচারিত, প্রকাশিত হয়। সেগুলোর মধ্যে একটি প্রচারমাধ্যমের ‘বিনোদন সুসাংবাদিকতার’ সাম্প্রতিক তিনটি উদাহরণ বলে দেয়, আমাদের সাংবাদিকতার মান কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে!
ইউরোপে বাসরত অভিনেত্রী শাবনূরের সঙ্গে সম্প্রতি সেখানে বেড়াতে গেলে দেখা হয় সঙ্গীতশিল্পী কনকচাঁপার। এ নিয়ে শাবনূর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তাঁর স্ট্যাটাস কেন্দ্র করে ওই পত্রিকার ওয়েবসাইটে ‘বিরাট প্রতিবেদন’ প্রচারিত হয়। এতে দাবি করা হয়, কনকচাঁপার গাওয়া ‘তুমি আমার এমনই একজন, যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন’ গানে পর্দায় ঠোঁট মেলান শাবনূর। সত্য হচ্ছে, ‘আনন্দ অশ্রু’ সিনেমায় গানটি গীত হয় অভিনেত্রী কাঞ্চির ঠোঁটে। প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহর এবারের মৃত্যুমাস সেপ্টেম্বরে ওই পত্রিকা লেখে, ‘জীবন সঙ্গী’ সিনেমায় সালমানের নায়িকা ছিলেন শ্যামা। অথচ সালমান নন, ওই সিনেমায় নাট্যাভিনেতা জাহিদ হাসানের সঙ্গে পর্দায় ছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রয়াত আরেক অভিনেত্রী শ্যামা। ‘গানে গানে সালমান শাহ’ শিরোনামের এক ভিডিও প্রতিবেদনে ওই পত্রিকা দাবি করে, ‘তুমি আমায় করতে সুখী জীবনে অনেক বেদনাই সয়েছো’ গানটি প্রয়াত গীতিকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লেখা।
এমন দাবি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের আত্মাকে নিঃসন্দেহে লজ্জিত করবে। মতিন রহমানের পরিচালনায় সালমান-শাবনূরের ‘তোমাকে চাই’ সিনেমায় ‘তুমি আমায় করতে সুখী জীবনে’ গানটি কলকাতার ‘জীবন সঙ্গী’ থেকে অনুমতি ছাড়াই সংযোজিত হয়। একইভাবে ‘জীবন সঙ্গী’র আরেকটি গান ‘আমি তোমায় ভালো যে বেসেছি, ভালোবাসবো, যেখানেই যাবে, আমাকেই পাবে’ মতিন রহমানের ‘মন মানে না’য় (শাবনূর, রিয়াজ) সংযোজিত হয়। দুটি গানই কলকাতার গীতিকারের লেখা। ‘তুমি আমায় করতে সুখী জীবনে’ পুলক বন্দোপাধ্যায়ের লেখা। ভুলভাল তথ্যে পাঠকের সঙ্গে আঁতলামি করে ‘সুসাংবাদিকতার শ্লোগান’ দেয়ার বদলে কথিত বিনোদন সাংবাদিকতা বন্ধ রাখাই যৌক্তিক।
লেখক: হাসান শান্তনু,সিনিয়র সাংবাদিক।

















