বাংলাদেশের নির্বাচন: ভারত কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে
- আপডেট সময় : ০৮:২৩:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৪৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ক্রমশ অনিশ্চয়তার কালো মেঘ দানা বেঁধে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে আগামী ৭ অক্টোবর। এই পর্যবেক্ষক দলের ওপর নির্ভর করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের অনেক কিছু। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তারা পর্যবেক্ষণ করবে না। যদিও তারা বাজেটের কথা বলেছে কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে যে, গত জুলাই মাসে তাদের যে প্রাক পর্যবেক্ষক দল এসেছিল তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করছে, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক নাও হতে পারে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। ফলে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা অর্থহীন। কূটনীতিকরা মনে করছেন, এই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানো পরোক্ষভাবে নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিতে অনীহারই নামান্তর। এরকম একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা কিভাবে রক্ষা করবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করে দেশে কিভাবে একটা নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটি এখন বড় চ্যালেঞ্জ এবং দেখার বিষয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে ভারতের একটি ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূল রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সকল দলের অংশগ্রহণ না হলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। অর্থাৎ সুস্পষ্ট ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুঝাতে চাইছে, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিএনপির নাম না বললেও বোঝা যায় যে বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনে করছে, নির্বাচনে যদি ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকে তাহলে সেটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলে বিবেচিত হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের এমন অবস্থানের পক্ষে ভারত। ইতিমধ্যে ভারত বাংলাদেশে নির্বাচন ইস্যু নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু সেই কথাবার্তা কতটা সফল হয়েছে সেটি এখন দেখার বিষয়।
বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে চীন বা রাশিয়ার অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বরং এই অবস্থান বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে নেতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে পারে। চীন এবং রাশিয়া যত বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিবে বা বর্তমান সরকারকে সমর্থন করবে ততই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করতে পারে এমনটি মনে করছেন কূটনীতিকরা। আর এখানে এখন একটাই উপায় তা হল ভারত যদি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সফল হয় এবং নির্বাচন নিয়ে একটি মেরুকরণ করতে চায়।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান এখন প্রকাশ্য। ভারত বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। এই নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করলো না করলো সেটি বড় কথা নয়। বরং ভারত মনে করে, যে সমস্ত রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে তাদের মধ্যে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক নির্বাচন হলেই সেটি সঠিক নির্বাচন হিসেবে বিচিত হবে। এই যুক্তি নিয়ে ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলছে। এখন দেখার বিষয় যে, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে কিনা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি প্রকাশ্য বিরোধ তৈরি হয়
ভারতের।
তবে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে ভারত প্রকাশ্য অবস্থা নেবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিকরা। ভারতের স্বার্থেই এই অবস্থান নেবে। কারণ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ব্যাহত হলে বা অন্য কোনো অপশক্তি ক্ষমতায় এলে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বিশেষ করে কানাডার সঙ্গে যখন ভারত একটা বিরোধে জড়িয়ে আছে তখন বাংলাদেশে আবার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভয়ারণ্য হোক এটা ভারত কখনোই চাইবে না। আর এ কারণেই ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আরও আগ্রাসী ভূমিকায় সামনের দিনগুলোতে আসবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সেক্ষেত্রে তারা কতটা সফল হবে সেটাই দেখার বিষয়।
















