ভিসা নিষেধাজ্ঞা: শেখ হাসিনার হাতেই “ট্রাম্পকার্ড”
- আপডেট সময় : ০৯:৩৫:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৫৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে’। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, বিরোধী দলের নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসন ওপর এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যখন এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করা হয় তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেখার পর তাৎক্ষণিকভাবে তিনি যে প্রতিক্রিয়া দেন তা ছিল সাহসী এবং দীপ্ত। তিনি এই ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে পাত্তা দেননি। বরং নির্বাচনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তাই দিয়েছেন। ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলে তিনি অভয় দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যতই সাহসী হোক না কেন আওয়ামী লীগের মধ্যে ভিসা নীতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে’। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন’। তারা মনে করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে এবং এই অবস্থান সরকারের বিরুদ্ধে। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেবে কিনা তা নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার মধ্যে সংশয় রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা এখনো প্রকাশ্যে বলছেন, ভিসা নীতি সরকারের পক্ষেই আছে’। বিশেষ করে যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে অর্থাৎ বিএনপির জন্য ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে। কিন্তু এই কথা আওয়ামী লীগের কর্মীরা খুব একটা আমলে নিতে চাইছেন না। তবে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন, ভিসা নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অবস্থান দিয়েছেন সেটি সঠিক এবং তার কাছে একাধিক অস্ত্র রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী এই ট্রাম্পকার্ডগুলো ব্যবহার করে সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারবেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রধানমন্ত্রী কেন ভিসা নীতি নিয়ে ভীত নন এবং তিনি কেন এটিকে আমলে নিচ্ছেন না এর ব্যাখ্যা হিসেবে কূটনীতিকরা একাধিক কারণ বলেছেন’। এর মধ্যে রয়েছে-
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দরকার: প্রধানমন্ত্রী জানেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি চায়। এটি আসলে বাংলাদেশের নির্বাচনের ইস্যু নয়। এটি আসলে দেনা পাওনার ইস্যু এবং এই দেনা পাওনার ইস্যুটা প্রধানমন্ত্রী যদি নির্বাচনের আগে ফয়সালা করতে পারেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা চাচ্ছে তার কতটুকু বাংলাদেশ দেবে। এই দর কষাকষির যদি সমাধান হয় তাহলে পরে নির্বাচন নিয়ে আর কোন অনিশ্চয়তা থাকবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপও কমে যাবে।’
২. বিএনপিকে নির্বাচনে আনা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশের কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে একাধিক ট্রাম্পকার্ড আছে’। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিনিময়ে বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে এমন গুঞ্জন বাজারে রয়েছে। এছাড়া তারেক জিয়া যেহেতু একজন দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ এবং আর্থিক বিষয়কে প্রাধান্য দেন এই জন্য তার সাথে যেকোনো সময় সরকারের সমঝোতা করা সম্ভব বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। এর আগেও তারেক জিয়া সরকারের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়ে ছিলেন। যে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেননি। কাজেই নির্বাচনের আগে এই অস্ত্রটিও প্রধানমন্ত্রী প্রয়োগ করতে পারেন।
৩. নির্বাচন করে ফেলা: অতীতে বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে যে, নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানা রকম শর্ত দিয়েছে, নানা রকম অজুহাত দেখিয়েছে, অনেক বিষয় নিয়ে নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়েছে কিন্তু নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে’। সর্বশেষ কম্বোডিয়া এবং নাইজেরিয়া তার বড় প্রমাণ।
এই দেশগুলোতে নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান ছিল নির্বাচনের পর আস্তে আস্তে অবস্থা নমনীয় হতে শুরু করেছে’। দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে। নির্বাচন যদি শেষ পর্যন্ত যেকোনো মূল্যে সরকার করে ফেলতে পারে তাহলেই আস্তে আস্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারা সম্ভব বলে কূটনীতিকরা মনে করছেন। আর এটি সরকারের বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সবচেয়ে বড় ট্রাম্পকার্ড। তিনি মনে করছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে নির্বাচন করে ফেলতে হবে। আর নির্বাচন যদি করা যায় তাহলে পরেই সব সমস্যার সমাধান হবে।
















