পিটার ডি হাস কি বাড়াবাড়ি করছেন
- আপডেট সময় : ০২:১২:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৭২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ২০২২ সালের মার্চে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই তিনি নানা আলোচনা, সমালোচনা এবং বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশে যারা সাধারণত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তারা এক ধরনের সম্মান এবং শ্রদ্ধা আদায় করেন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু বিশ্বের একটি প্রভাবশালী দেশ, সে জন্য দেশটির রাষ্ট্রদূত আলাদা মর্যাদা পান। তাদেরকে সকলে সমীহ করে দেখেন। অনেক রাষ্ট্রদূতই বাংলাদেশে এসেছেন এবং জনগণের হৃদয় জয় করেছেন’।
তাদের মধ্যে মার্সিয়া বার্নিক্যাটের কথা উল্লেখ্য। তিনি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মিশেছিলেন এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি কৃষ্টির সঙ্গে নিজেকে মিলিয়েছিলেন। আর এর ফলে তিনি উঠেছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়। মার্সিয়া বার্নিক্যাটের বিদায়ের সময় বাঙালিদের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। বার্নিক্যাট কখনো বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেননি বরং আমাদের কৃষ্টি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে চেয়েছিলেন।
অন্যান্য রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন, বিশেষ করে ২০০৯ এর পর থেকে, তারা সকলেই রাষ্ট্রদূত হিসাবে একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ কারণেই তাদেরকে সকলেই শ্রদ্ধার চোখে দেখতো। কিন্তু পিটার ডি হাসের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যরকম।’
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে একটি বিতর্কে জড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন যে গণমাধ্যমও এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে। চ্যানেল ২৪ এর সঙ্গে প্রদত্য এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। তার এই মন্তব্যের পর বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হচ্ছে’। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সমর্থন করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি কূটনৈতিক শিষ্টাচারের এক উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করে এই প্রশ্নটিকে কূটনীতি-সুলভ ভাবে উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা যারা ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আসতে পারে তাদের পেশাগত পরিচয়ে উল্লেখ করেছেন। যার মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীরা নেই। মূলত তার এই বক্তব্যটি ছিল কূটনৈতিক পরিভাষা ব্যবহারের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কি করা উচিত তা বাংলাদেশের কূটনীতিকরা ম্যাথু মিলারের চৌকুস এবং তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে শিখতে পারেন।
কিন্তু ম্যাথু মিলারের এই অবস্থান পিটার ডি হাসকে কিছুটা হলেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে বলে অনেক কূটনীতিক মনে করেন। বিশেষ করে পররাষ্ট্র দপ্তর যেখানে তার বক্তব্য সমর্থন করছেন না, তখন পিটার ডি হাস কি বাড়াবাড়ি করছেন? এই প্রশ্নটি এখন কূটনৈতিক অঙ্গনে বেশি করে চাউর হয়েছে। কারণ পিটার ডি হাস গত দেড় বছর সময়ে নিরপেক্ষতার আবরণ ঝেড়ে ফেলেছেন। তাকে অনেকটাই আওয়ামী বিরোধী বা সরকারের বিরোধী হিসেবেই দেখা যাচ্ছে। এমন সব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সক্ষতা তৈরি করছেন যারা সরকার বিরোধী হিসেবে বিভিন্নভাবে পরিচিত’। অন্যদিকে যারা সরকারের সমর্থক হিসাবে পরিচিত তাদের সাথে পিডার ডি হাসের একটা দূরত্ব ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে।
যেমন তিনি বিএনপি সমর্থিত মায়ের ডাকের একজন সংগঠকের বাসায় গিয়েছিলেন এবং এটিতে নিরাপত্তার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এছাড়াও তৃতীয় মাত্রার বিতর্কিত উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়েও বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আসে। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি অনেকটাই বেপরোয়া বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেন। যদিও অনেক কূটনীতিক বলেন যে এটি মার্কিন অবস্থান।’ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে। আর এই কারণেই রাষ্ট্রদূত তাদের পররাষ্ট্র দফতরের নির্দেশেই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করছেন। এটি তার ব্যক্তিগত অভিপ্রায় নয়। কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্যটি এই ধরনের যুক্তির পক্ষে যায় না। ফলে প্রশ্ন উঠেছে যে পিটার ডি হাস কি বাড়াবাড়ি করছেন? বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ যে সম্পর্ক সেই সম্পর্ক নষ্ট করার ক্ষেত্রে কি তিনি ভূমিকা পালন করছেন?
সরকার একটি প্রতিষ্ঠান, আর জনগণই সরকার গঠন করে। কিন্তু পিটার ডি হাসের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব এবং এক ধরনের দম্ভক্তি কিংবা তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনেক সময় মনে করিয়ে দেয় যে বাংলাদেশ বোধহয় পরাধীন কোনো রাষ্ট্র এবং মার্কিন করতালগত রাষ্ট্র। পিটার ডি হাস এখানে গভর্নর বা ভাইস রয়।
এমন একটি ভাবধারা যদি তৈরি হয় তাহলে জনগণের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে’। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। আবেগের বশে তারা অনেক কিছুই করে। কাজেই পিটার ডি হাস যদি সত্যিই বাড়াবাড়ি করেন তাহলে সেই বিষয়টি কি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দেখবে?
















