সংবাদ শিরোনাম ::
শাহজাদপুরে আওয়ামীলীগের সাবেক দুই এমপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা বেলকুচিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ  শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ জন আটক ৭ নভেম্বর না আসলে বাংলাদেশ বিলীন হয়ে যেত: বাউবি উপাচার্য বেলকুচির সেন ভাঙ্গাবাড়ী বাজার মসজিদের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন “জয় বাংলা” স্লোগান দেওয়ায় সাবেক পিপি-কে গণপিটুনি, পুলিশে সোপর্দ উলিপুরে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ভোট কেন্দ্র মেরামতের টাকা আত্নসাতের অভিযোগ খাজা শাহ্ এনায়েতপুরী (রহ:) এর ১১০ তম ওরছ শরীফের দাওয়াত পত্র বিতরণ  রাজশাহীর মাঠে স্পীড স্কেটিংয়ে বগুড়ার স্কেটারদের ৩টি স্বর্ণপদক সহ ৮ পদক অর্জন এনায়েতপুরে ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি উপলক্ষে আলোচনা সভা

নারীর প্রতি সহিংসতা সভ্যতার অভিশাপ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৫৫:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০৭ বার পড়া হয়েছে

দৈনিক প্রথম আলো আজকে এই হৃদয়বিদারক খবরটি দিয়েছে। গেল ৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় মাদ্রাসাপড়ুয়া ১৬ বা ১৭ বছর বয়সী মেয়েটি বাড়িতে একা ছিল। বাবা মা কাজে বাইরে ছিলেন। দাদি মসজিদে গিয়েছিলেন জুম্মা নামাজ পড়তে। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে এক দুর্বৃত্ত কোনোভাবে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। মেয়েটির গলায় চাপ দিয়ে ধরেন। সে অজ্ঞান হয়ে গেলে মরে গেছে ভেবে আশপাশে থাকা চটের বস্তা ও কাপড় দিয়ে তার শরীর ঢেকে আগুন ধরিয়ে দেন। দাউ দাউ করা আগুনের আঁচে মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে দৌড়ে পাশের বাড়িতে এক আত্মীয়ের কাছে গিয়ে আসামির নাম উল্লেখ করে ঘটনার কথা জানায়। নিমিষে মেয়েটির শরীরের ২৪ শতাংশ পুড়ে যায়।

মেয়েটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আশিকুর রহমান জানান, মেয়েটির অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তার ডান হাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বুক, পিঠ, স্তন, পাসহ শরীরের যেসব জায়গা পুড়েছে, সব জায়গায়ই গভীর ক্ষত হয়েছে। আপাতত তার পুরো ডান হাত কেটে ফেলতে হবে না। ডান হাতের বুড়ো আঙুল ও তর্জনী কেটে ফেলতে হবে।

ঘটনার পর এলাকাবাসী আসামিকে ধরে পুলিশে খবর দিলে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

আসামি স্বীকারোক্তিতে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন। মেয়েটি ধর্ষণের কথা অন্যদের বলে দিতে পারে, এই ভয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়েটির বাবা বলেন, ‘মা–বাবা হইয়া মেয়েটার কষ্ট আর আর দেখতে পারতেছি না। কইলজাটা ফাইট্যা যায় মেয়ের কষ্ট দেখলে। সারাটা শরীর পোড়া। ওহ! খালি কষ্ট আর কষ্ট। আসামির ফাঁসি চাই, আর কোনো ছেলে যাতে কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন কাজ করতে না পারে।’

পুরুষ কর্তৃক নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিরুদ্ধে কেন আমরা গলা চড়াই? এই যে এজন্যই। মেয়েটি ঘরেই ছিল, মাদ্রাসায় পড়ে, তার শালীন পোশাক নিয়েও কোনো সংশয় নেই। এর কোনো কিছুই পুরুষের হিংস্রতা থেকে মেয়েটিকে বাঁচাতে পারল না।

যতক্ষণ না নারীর ক্ষমতায়ন করা যাবে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা যাবে, লেখাপড়া শিখিয়ে বিদ্যাবুদ্ধিতে পুরুষের সমান্তরালে রাখা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরুষের বর্বরতা থেকে নারীর মুক্তি নেই।

এই মুহূর্তে হাজারেরো অধিক মৌলভি জেলে আছেন, যাদের বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় ছেলে শিশু ধর্ষণের প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে। ওই শিশু ছেলেদের তো পর্দার সমস্যা ছিল না। তারপরও তথাকথিত ওস্তাদের ঘৃণ্য লালসা থেকে শিশুরা নিষ্কৃতি পায়নি। নির্যাতন করতে করতে কোমলমতি শিশুদেরকে শারীরিক ও নৈতিক মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। নারীর নিকাব-হিজাব নিয়ে কথা বলার অনেক অনেক আগে আমাদেরকে এইসব জালিম কাপুরুষের অ্যাটিচ্যুড নিয়ে কথা বলতে হবে। শেখাতে হবে পুরাণের আদি বাণী ‘পুরুষ তোমার নজর সামলাও সবার আগে।’

পুরুষ নারীকে নানাভাবে নির্যাতন করে। বাল্যবিবাহের দাবিতে একটা গ্রুপ ব্যানার হাতে রাস্তায় দাঁড়ায়। নারীর পোশাক নিয়ে সেমিনার বসায়। নারীকে চাকরি ও লেখাপড়া করতে দেয়া যাবে না বলে দাবি করে। যারা এসবের দাবিদার প্রত্যেকেই একেকজন পোটেনশিয়াল ধর্ষক। বিচিত্র ও বিস্ময়কর কারণে আমাদের রাষ্ট্রও এসব ধর্ষকের পক্ষে থাকে। কোনো ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনে দণ্ডিত হতে দেখলাম না।

আমরা আমাদের মেয়েদের নিয়ে ভীষণ শংকিত। যে দেশের পুরুষেরা একজোট হয়ে দাবি করে নারীকে কালো কাপড়ে মুড়িয়ে ঘরে বসে থাকতে হবে। নারী শুধু সন্তান উৎপাদনের মেশিন আর পতিধনের সেবক ছাড়া আর কিছুই নয়!পুরুষের মতো করে কোনো স্বাধীন অধিকার নারী পাবে না! তাদের মগজ বিকৃতির জিঘাংসা থেকে কোনো নারীরই আসলে রক্ষা নেই।

বগুড়ার এই কন্যাটির এমন ভয়াল নির্যাতনের কোনো সান্ত্বনা নেই। আমরা শুধু বলতে পারি নারীর প্রতি সহিংসতায় সভ্যতার অভিশাপ ডেকে এনো না। পুরুষ তুমি মানুষ হও।

ফারদিন ফেরদৌস, লেখক ও সাংবাদিক। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

নারীর প্রতি সহিংসতা সভ্যতার অভিশাপ

আপডেট সময় : ১২:৫৫:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দৈনিক প্রথম আলো আজকে এই হৃদয়বিদারক খবরটি দিয়েছে। গেল ৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় মাদ্রাসাপড়ুয়া ১৬ বা ১৭ বছর বয়সী মেয়েটি বাড়িতে একা ছিল। বাবা মা কাজে বাইরে ছিলেন। দাদি মসজিদে গিয়েছিলেন জুম্মা নামাজ পড়তে। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে এক দুর্বৃত্ত কোনোভাবে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। মেয়েটির গলায় চাপ দিয়ে ধরেন। সে অজ্ঞান হয়ে গেলে মরে গেছে ভেবে আশপাশে থাকা চটের বস্তা ও কাপড় দিয়ে তার শরীর ঢেকে আগুন ধরিয়ে দেন। দাউ দাউ করা আগুনের আঁচে মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে দৌড়ে পাশের বাড়িতে এক আত্মীয়ের কাছে গিয়ে আসামির নাম উল্লেখ করে ঘটনার কথা জানায়। নিমিষে মেয়েটির শরীরের ২৪ শতাংশ পুড়ে যায়।

মেয়েটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আশিকুর রহমান জানান, মেয়েটির অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তার ডান হাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বুক, পিঠ, স্তন, পাসহ শরীরের যেসব জায়গা পুড়েছে, সব জায়গায়ই গভীর ক্ষত হয়েছে। আপাতত তার পুরো ডান হাত কেটে ফেলতে হবে না। ডান হাতের বুড়ো আঙুল ও তর্জনী কেটে ফেলতে হবে।

ঘটনার পর এলাকাবাসী আসামিকে ধরে পুলিশে খবর দিলে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

আসামি স্বীকারোক্তিতে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন। মেয়েটি ধর্ষণের কথা অন্যদের বলে দিতে পারে, এই ভয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়েটির বাবা বলেন, ‘মা–বাবা হইয়া মেয়েটার কষ্ট আর আর দেখতে পারতেছি না। কইলজাটা ফাইট্যা যায় মেয়ের কষ্ট দেখলে। সারাটা শরীর পোড়া। ওহ! খালি কষ্ট আর কষ্ট। আসামির ফাঁসি চাই, আর কোনো ছেলে যাতে কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন কাজ করতে না পারে।’

পুরুষ কর্তৃক নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিরুদ্ধে কেন আমরা গলা চড়াই? এই যে এজন্যই। মেয়েটি ঘরেই ছিল, মাদ্রাসায় পড়ে, তার শালীন পোশাক নিয়েও কোনো সংশয় নেই। এর কোনো কিছুই পুরুষের হিংস্রতা থেকে মেয়েটিকে বাঁচাতে পারল না।

যতক্ষণ না নারীর ক্ষমতায়ন করা যাবে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা যাবে, লেখাপড়া শিখিয়ে বিদ্যাবুদ্ধিতে পুরুষের সমান্তরালে রাখা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরুষের বর্বরতা থেকে নারীর মুক্তি নেই।

এই মুহূর্তে হাজারেরো অধিক মৌলভি জেলে আছেন, যাদের বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় ছেলে শিশু ধর্ষণের প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে। ওই শিশু ছেলেদের তো পর্দার সমস্যা ছিল না। তারপরও তথাকথিত ওস্তাদের ঘৃণ্য লালসা থেকে শিশুরা নিষ্কৃতি পায়নি। নির্যাতন করতে করতে কোমলমতি শিশুদেরকে শারীরিক ও নৈতিক মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। নারীর নিকাব-হিজাব নিয়ে কথা বলার অনেক অনেক আগে আমাদেরকে এইসব জালিম কাপুরুষের অ্যাটিচ্যুড নিয়ে কথা বলতে হবে। শেখাতে হবে পুরাণের আদি বাণী ‘পুরুষ তোমার নজর সামলাও সবার আগে।’

পুরুষ নারীকে নানাভাবে নির্যাতন করে। বাল্যবিবাহের দাবিতে একটা গ্রুপ ব্যানার হাতে রাস্তায় দাঁড়ায়। নারীর পোশাক নিয়ে সেমিনার বসায়। নারীকে চাকরি ও লেখাপড়া করতে দেয়া যাবে না বলে দাবি করে। যারা এসবের দাবিদার প্রত্যেকেই একেকজন পোটেনশিয়াল ধর্ষক। বিচিত্র ও বিস্ময়কর কারণে আমাদের রাষ্ট্রও এসব ধর্ষকের পক্ষে থাকে। কোনো ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনে দণ্ডিত হতে দেখলাম না।

আমরা আমাদের মেয়েদের নিয়ে ভীষণ শংকিত। যে দেশের পুরুষেরা একজোট হয়ে দাবি করে নারীকে কালো কাপড়ে মুড়িয়ে ঘরে বসে থাকতে হবে। নারী শুধু সন্তান উৎপাদনের মেশিন আর পতিধনের সেবক ছাড়া আর কিছুই নয়!পুরুষের মতো করে কোনো স্বাধীন অধিকার নারী পাবে না! তাদের মগজ বিকৃতির জিঘাংসা থেকে কোনো নারীরই আসলে রক্ষা নেই।

বগুড়ার এই কন্যাটির এমন ভয়াল নির্যাতনের কোনো সান্ত্বনা নেই। আমরা শুধু বলতে পারি নারীর প্রতি সহিংসতায় সভ্যতার অভিশাপ ডেকে এনো না। পুরুষ তুমি মানুষ হও।

ফারদিন ফেরদৌস, লেখক ও সাংবাদিক। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩।