সংবাদ শিরোনাম ::
শাহজাদপুরে আওয়ামীলীগের সাবেক দুই এমপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা বেলকুচিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ  শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ জন আটক ৭ নভেম্বর না আসলে বাংলাদেশ বিলীন হয়ে যেত: বাউবি উপাচার্য বেলকুচির সেন ভাঙ্গাবাড়ী বাজার মসজিদের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন “জয় বাংলা” স্লোগান দেওয়ায় সাবেক পিপি-কে গণপিটুনি, পুলিশে সোপর্দ উলিপুরে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ভোট কেন্দ্র মেরামতের টাকা আত্নসাতের অভিযোগ খাজা শাহ্ এনায়েতপুরী (রহ:) এর ১১০ তম ওরছ শরীফের দাওয়াত পত্র বিতরণ  রাজশাহীর মাঠে স্পীড স্কেটিংয়ে বগুড়ার স্কেটারদের ৩টি স্বর্ণপদক সহ ৮ পদক অর্জন এনায়েতপুরে ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি উপলক্ষে আলোচনা সভা

পঞ্চগড়ে বাকীর হাট নিয়ে দুঃস্থদের কাছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:২৭:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ১১০ বার পড়া হয়েছে

পঞ্চগড় সংবাদদাতা: “বাকী চাহিয়া লজ্জা দেবেন না” এমন একটি সাধারণ বাক্য প্রায় দোকানে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। বাকী খোরদের কাছ থেকে মুক্তি পেতে সাধারণত এমন কাজ করে থাকেন দোকানীরা। তবে এমন লেখা দেখে বাকী খোরদের থামানো না গেলেও নিম্ন আয়ের মানুষ কিছুটা অস্বস্থিতে ভোগেন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন বিপন্ন। আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে অনেকের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় কিছুটা ধার দেনা করে দোকান থেকে পণ্য না পেলে অভূক্ত থাকতে হয় তাদের। সাধারণ দোকানদাররা বাকীতে পণ্য দিতে না চাইলেও এবার এক ব্যাক্তিক্রমী কাজটি করছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। গরীব ও দুঃস্থদের বাকীতে পণ্য দিতে এবার তারা আয়োজন করেছে ‘বাকীর হাট’।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) পঞ্চগড় চেম্বার কনভেনশন হলে আয়োজিত বাকীর হাটে পণ্য কেনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: রিয়াজ উদ্দিন। এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ফরহাদ আহমেদ, বিদ্যানন্দের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুখ আহমেদ, পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, সাধারণ সম্পাদক জামিল চৌধুরী ডলার সহ জেলার গণমাধ্যেম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দিন ব্যাপী এই কর্মসূচীতে প্রায় ২৫০ পরিবার বাকীতে পণ্য কেনার সুযোগ পান। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, লবণ, শাক সবজি, মাছ, মুরগী, বাচ্চাদের শিক্ষা উপকরণ, কাপড় সহ প্রায় ২৫ টি পণ্য নিয়ে বসেছে এই বাকীর হাট।
বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘বাকী চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’ এই শ্লোগানের পরিবর্তে ‘বাকী চাইতে লজ্জা পাবেন না’ এই শ্লোগানটি তারা প্রচার করছেন হত দরিদ্র মানুষের জন্য। এই পরিবারগুলোর হয়তো বর্তমানে টাকা নেই, কিন্তু একদিন তাদের টাকা হবে। সেদিন তারা এই টাকা পরিশোধ করবে। তবে বিদ্যানন্দকে নয়, সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে অন্য কোন অভাবীকে। এমন একটি শর্ত দিয়েই টাকার পণ্য দেওয়া হচ্ছে। বাজার শেষে প্রতিটি ক্রেতার নাম ও বাকীর পরিমাণ লিখে একটি আঙ্গুলের ছাপ নিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা যা দিয়ে প্রতীকীভাবে এই বাকীর কথা খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। পরে বাজারকারীদের দুপুরের খাবার দেয়া হচ্ছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুখ আহমেদ বলেন, প্রতিটি সেবামূলক কাজের পেছনে একটি বার্তা থাকে। বাকীর হাটের মাধ্যমে তারা সমাজের মানুষ যেন আরেকজন মানুষকে সাহায্য করে। এমনই একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। একই সাথে সাহায্য চাওয়া কোন লজ্জার বিষয় না। বরং সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করা মানবিক একটি দায়িত্ব। আর এই দায়িত্বের কথাই বিদ্যানন্দ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এমন উদ্যোগের মাধ্যমে। বিদ্যানন্দের সদস্যরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জরিপের মাধ্যমে অভাবী পরিবার চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট কার্ড প্রদান করেন। পরে সে কার্ড দেখিয়ে পরিবারগুলো ‘বাকীর হাট’ থেকে কেনাকাটার সুযোগ পান নি¤œ আয়ের মানুষেরা।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রিয়াজ উদ্দীন বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এমন ব্যাক্তিক্রমী উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এতে করে নি¤œ আয়ের মানুষেরা স্বাচ্ছন্দে বাজার করে অন্তত একদিন পরিবার নিয়ে আনন্দে খেতে পারবে। সরকারও নি¤œ আয়ের মানুষদের বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করে থাকে। সমাজের যারা বিত্তশালী আছেন তারা যদি এভাবে এগিয়ে আসেন তাহলে নি¤œ আয়ের মানুষেরা অনেক উপকৃত হবেন।
উল্লেখ্য, দেশ বিদেশে ভিন্নতর ও অভিনব সব আইডিয়া নিয়ে সেবামূলক কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদ্যানন্দ। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কেউ যখন ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা সেসময় জীবনবাজি রেখে করোনা মহামারী মোকাবেলায় সম্মুখ সমরে সাধারণ মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবায় তাদের অসামান্য সব অবদানের জন্য ২০২৩ সালে সরকার তাদের একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও ২০২২ সালে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় কতৃক জাতীয় মানবকল্যান পদক ও ২০২১ সালে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কতৃক “কমনওয়েলথ পয়েন্টস অফ লাইট” পদকে ভূষিত হয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পঞ্চগড়ে বাকীর হাট নিয়ে দুঃস্থদের কাছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন

আপডেট সময় : ০৫:২৭:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

পঞ্চগড় সংবাদদাতা: “বাকী চাহিয়া লজ্জা দেবেন না” এমন একটি সাধারণ বাক্য প্রায় দোকানে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। বাকী খোরদের কাছ থেকে মুক্তি পেতে সাধারণত এমন কাজ করে থাকেন দোকানীরা। তবে এমন লেখা দেখে বাকী খোরদের থামানো না গেলেও নিম্ন আয়ের মানুষ কিছুটা অস্বস্থিতে ভোগেন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন বিপন্ন। আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে অনেকের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় কিছুটা ধার দেনা করে দোকান থেকে পণ্য না পেলে অভূক্ত থাকতে হয় তাদের। সাধারণ দোকানদাররা বাকীতে পণ্য দিতে না চাইলেও এবার এক ব্যাক্তিক্রমী কাজটি করছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। গরীব ও দুঃস্থদের বাকীতে পণ্য দিতে এবার তারা আয়োজন করেছে ‘বাকীর হাট’।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) পঞ্চগড় চেম্বার কনভেনশন হলে আয়োজিত বাকীর হাটে পণ্য কেনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: রিয়াজ উদ্দিন। এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ফরহাদ আহমেদ, বিদ্যানন্দের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুখ আহমেদ, পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, সাধারণ সম্পাদক জামিল চৌধুরী ডলার সহ জেলার গণমাধ্যেম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দিন ব্যাপী এই কর্মসূচীতে প্রায় ২৫০ পরিবার বাকীতে পণ্য কেনার সুযোগ পান। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, লবণ, শাক সবজি, মাছ, মুরগী, বাচ্চাদের শিক্ষা উপকরণ, কাপড় সহ প্রায় ২৫ টি পণ্য নিয়ে বসেছে এই বাকীর হাট।
বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘বাকী চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’ এই শ্লোগানের পরিবর্তে ‘বাকী চাইতে লজ্জা পাবেন না’ এই শ্লোগানটি তারা প্রচার করছেন হত দরিদ্র মানুষের জন্য। এই পরিবারগুলোর হয়তো বর্তমানে টাকা নেই, কিন্তু একদিন তাদের টাকা হবে। সেদিন তারা এই টাকা পরিশোধ করবে। তবে বিদ্যানন্দকে নয়, সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে অন্য কোন অভাবীকে। এমন একটি শর্ত দিয়েই টাকার পণ্য দেওয়া হচ্ছে। বাজার শেষে প্রতিটি ক্রেতার নাম ও বাকীর পরিমাণ লিখে একটি আঙ্গুলের ছাপ নিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা যা দিয়ে প্রতীকীভাবে এই বাকীর কথা খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। পরে বাজারকারীদের দুপুরের খাবার দেয়া হচ্ছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুখ আহমেদ বলেন, প্রতিটি সেবামূলক কাজের পেছনে একটি বার্তা থাকে। বাকীর হাটের মাধ্যমে তারা সমাজের মানুষ যেন আরেকজন মানুষকে সাহায্য করে। এমনই একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। একই সাথে সাহায্য চাওয়া কোন লজ্জার বিষয় না। বরং সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করা মানবিক একটি দায়িত্ব। আর এই দায়িত্বের কথাই বিদ্যানন্দ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এমন উদ্যোগের মাধ্যমে। বিদ্যানন্দের সদস্যরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জরিপের মাধ্যমে অভাবী পরিবার চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট কার্ড প্রদান করেন। পরে সে কার্ড দেখিয়ে পরিবারগুলো ‘বাকীর হাট’ থেকে কেনাকাটার সুযোগ পান নি¤œ আয়ের মানুষেরা।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রিয়াজ উদ্দীন বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এমন ব্যাক্তিক্রমী উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এতে করে নি¤œ আয়ের মানুষেরা স্বাচ্ছন্দে বাজার করে অন্তত একদিন পরিবার নিয়ে আনন্দে খেতে পারবে। সরকারও নি¤œ আয়ের মানুষদের বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করে থাকে। সমাজের যারা বিত্তশালী আছেন তারা যদি এভাবে এগিয়ে আসেন তাহলে নি¤œ আয়ের মানুষেরা অনেক উপকৃত হবেন।
উল্লেখ্য, দেশ বিদেশে ভিন্নতর ও অভিনব সব আইডিয়া নিয়ে সেবামূলক কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদ্যানন্দ। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কেউ যখন ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা সেসময় জীবনবাজি রেখে করোনা মহামারী মোকাবেলায় সম্মুখ সমরে সাধারণ মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবায় তাদের অসামান্য সব অবদানের জন্য ২০২৩ সালে সরকার তাদের একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও ২০২২ সালে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় কতৃক জাতীয় মানবকল্যান পদক ও ২০২১ সালে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কতৃক “কমনওয়েলথ পয়েন্টস অফ লাইট” পদকে ভূষিত হয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।