সংবাদ শিরোনাম ::
শাহজাদপুরে আওয়ামীলীগের সাবেক দুই এমপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা বেলকুচিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ  শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ জন আটক ৭ নভেম্বর না আসলে বাংলাদেশ বিলীন হয়ে যেত: বাউবি উপাচার্য বেলকুচির সেন ভাঙ্গাবাড়ী বাজার মসজিদের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন “জয় বাংলা” স্লোগান দেওয়ায় সাবেক পিপি-কে গণপিটুনি, পুলিশে সোপর্দ উলিপুরে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ভোট কেন্দ্র মেরামতের টাকা আত্নসাতের অভিযোগ খাজা শাহ্ এনায়েতপুরী (রহ:) এর ১১০ তম ওরছ শরীফের দাওয়াত পত্র বিতরণ  রাজশাহীর মাঠে স্পীড স্কেটিংয়ে বগুড়ার স্কেটারদের ৩টি স্বর্ণপদক সহ ৮ পদক অর্জন এনায়েতপুরে ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি উপলক্ষে আলোচনা সভা

ঠাকুরগাঁওয়ে পারিবারিক পুষ্টি বাগানে বাৎসরিক আয় ২ কোটি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৮:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ৭০৪ বার পড়া হয়েছে

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নের জরিনা খাতুন । নিজের কোন জায়গা জমি না থাকায়, সরকারী আশ্রয় প্রকল্পে ঘর পান তিনি। সেই ঘরের পাশে অল্প জমিতে করেছেন পারিবারিক পুষ্টি বাগান। সেই বাগানের উৎপাদিত সবজি থেকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে কিছু শাক-সবজি বিক্রি করেন বাজারে। এতে প্রতিমাসে তার আয় হয় প্রায় ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা।

তিনি আরো বলেন, বরর্তমানে সকল শাকসবজি, দাম চড়া। তবে সে আঁচ লাগেনি আমার ঘরে। বরং আমি বাড়ির আঙিনায় লাগানো শাকসবজি খেয়ে ভালোভাবে দিন পার করছি। সঙ্গে প্রতিবেশীদের প্রয়োজন মেটাচ্ছি।

জরিনার মত পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছেন একই আশ্রয় প্রকল্পের খাদেমুল ইসলাম। সেখান থেকে উৎপাদিত সবজি দিয়ে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি প্রতিবেশীদেরও দেন তিনি।আগে প্রতি মাসে বাজার থেকে শাক সবজি কিনতে যে টাকা খরচ হতো তা পুরোটাই এখন সঞ্চয় হয় খাদেমুল ইসলামের ।

শুধু জরিনা বা খাদেমুলের নয়, ঠাকুরগাঁও জেলায় কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এমন অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন পুষ্টি বাগান করেছেন জেলার প্রায় দশ হাজার পরিবার।এসব পুষ্টি বাগান থেকে প্রতিবছর উৎপাদিত হচ্ছে কোটি টাকার সবজি।ফলে পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পরিবারগুলোতে বাড়ছে স্বনির্ভরতা।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর লক্ষে ২০২০ সালে দেশব্যাপী এ রকম পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও আদা, হলুদ চাষের একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সারাদেশে ৫ লাখ পুষ্টি বাগান তৈরির লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। ফলে সারাদেশের কমপক্ষে ৫ লাখ পরিবার নিরাপদ সবজি খেতে পারবে।পাশাপাশি পরিবারগুলোর সাশ্রয় হবে মোটা অঙ্কের অর্থ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারিবারিক এসব বাগানে চাষ হচ্ছে শিম, মরিচ,শাক, লাউ, কুমড়া, মিষ্টি আলুসহ আদা ও হলুদ।সুভিধাভোগীরা বলছেন প্রতিটি বাগান থেকে বছরে প্রায় ২০০ কেজির বেশি শাক সবজি উৎপাদন সম্ভব।

কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এসব পুষ্টি বাগান থেকে ৪-৫০ শতাংশ পুষ্টি ও ৫-৩০ শতাংশ প্রোটিন চাহিদা মেটানো সম্ভব। আর দেড় শতাংশ জমির সবজি বাগানে বছরে ৩০০ কেজি সবজি উৎপাদন হলে জেলায় দুই হাজার ৭০০ টি সবজি বাগানের উৎপাদিত সবজির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ ৪৯হাজার ৭০০ কেজি। প্রতিকেজি সবজি গড়ে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে এর বাজার মূল্য ২কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ফলে সরকারের পুষ্টি বাগানের আওতায় থাকা পরিবারগুলোর সাশ্রয় হচ্ছে বৃহৎ অংকের টাকা।

জরিনা বলেন, বাগানে লাল শাক, পুঁই শাক, কচু শাক আছে। এগুলা নিজে খাই, প্রতিবেশিদের দেই আবারও বিক্রিও করি। বেগুন, কাচা মরিচ বিক্রি করেছি। মাসে ১ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারি।

একই এলাকার খাদেমুল বলেন, আগে মাসে ২-৩ হাজার টাকার শাক-সবজি কেনা লাগতো, এখন লাগে না। এখন সেটা বাগান থেকে পাচ্ছি এবং টাটকা খাবার খাচ্ছি। তাতে আমরা ভালো আছি।

মালেকা নামের আরেকজন বলেন, পুষ্টি বাগানে এখন ডাটা শাক, কলমি শাক, লাল শাক, শিম ও বেগুন আছে।বাগান থেকে উৎপাদিত শাক-সবজি আমরা খাই, প্রতিবেশিদের দেই।

এখানে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না।অল্প জমিতে অনেক সবজি চাষ করা যায়। অনুরোধ করবো এমন একটি নিরাপদ সবজি বাগান যেন সবাই করে।

মালেকা বেগম বলেন, ‘আমার বাগানে এখন আছে ঢ্যাঁড়স, বরবটি, করলা, ঝিঙে, ধুন্দুল ও মরিচ। সামান্য জায়গায় কত ফসল, না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ছয় মাস ধরে আমরা কোনো সবজি কিনে খাইনি। বাগান থেকে যা পাই তা–ই অনেক। শুধু তা–ই নয়, এক হাজার টাকার সবজিও বিক্রি করেছি আমি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ এই আলোকে প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উপকরণ সহায়তা দিয়ে পুষ্টি বাগানের মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। বসত বাড়ির আঙিনায় এ পারিবারিক পুষ্টি বাগান করে সহজেই পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি পূরণ হওয়ায় এ বাগানে করার দিকে ঝুকছে পরিবার গুলো।

আমাদের নিজস্ব প্রকল্পের আওতায় জেলায় ২ হাজার ৭ টি বেশি পুষ্টি বাগান আছে। এসব বাগান থেকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে এক থেকে দেড় মণ শাক সবজি বিক্রিও করছেন অনেকে।ফলে তারা আর্থিকভাবেও লাভোবান হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আগে যে জমিগুলো পতিত থাকতো, সেটা কিন্তু পুষ্টি বাগানের মাধ্যমে চাষের আওতায় আসছে।পুষ্টির চাহিদা পুরণেই আমরা এই ধরনের প্রকল্প করি ।বিভিন্ন বীজ কোম্পানী এবং ব্যক্তি যারা সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আহ্বানে বীজ সহায়তা প্রদান করে এ কার্যক্রমকে গতিশীল করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ঠাকুরগাঁওয়ে পারিবারিক পুষ্টি বাগানে বাৎসরিক আয় ২ কোটি

আপডেট সময় : ০৭:৪৮:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৩

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নের জরিনা খাতুন । নিজের কোন জায়গা জমি না থাকায়, সরকারী আশ্রয় প্রকল্পে ঘর পান তিনি। সেই ঘরের পাশে অল্প জমিতে করেছেন পারিবারিক পুষ্টি বাগান। সেই বাগানের উৎপাদিত সবজি থেকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে কিছু শাক-সবজি বিক্রি করেন বাজারে। এতে প্রতিমাসে তার আয় হয় প্রায় ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা।

তিনি আরো বলেন, বরর্তমানে সকল শাকসবজি, দাম চড়া। তবে সে আঁচ লাগেনি আমার ঘরে। বরং আমি বাড়ির আঙিনায় লাগানো শাকসবজি খেয়ে ভালোভাবে দিন পার করছি। সঙ্গে প্রতিবেশীদের প্রয়োজন মেটাচ্ছি।

জরিনার মত পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছেন একই আশ্রয় প্রকল্পের খাদেমুল ইসলাম। সেখান থেকে উৎপাদিত সবজি দিয়ে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি প্রতিবেশীদেরও দেন তিনি।আগে প্রতি মাসে বাজার থেকে শাক সবজি কিনতে যে টাকা খরচ হতো তা পুরোটাই এখন সঞ্চয় হয় খাদেমুল ইসলামের ।

শুধু জরিনা বা খাদেমুলের নয়, ঠাকুরগাঁও জেলায় কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এমন অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন পুষ্টি বাগান করেছেন জেলার প্রায় দশ হাজার পরিবার।এসব পুষ্টি বাগান থেকে প্রতিবছর উৎপাদিত হচ্ছে কোটি টাকার সবজি।ফলে পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পরিবারগুলোতে বাড়ছে স্বনির্ভরতা।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর লক্ষে ২০২০ সালে দেশব্যাপী এ রকম পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও আদা, হলুদ চাষের একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সারাদেশে ৫ লাখ পুষ্টি বাগান তৈরির লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। ফলে সারাদেশের কমপক্ষে ৫ লাখ পরিবার নিরাপদ সবজি খেতে পারবে।পাশাপাশি পরিবারগুলোর সাশ্রয় হবে মোটা অঙ্কের অর্থ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারিবারিক এসব বাগানে চাষ হচ্ছে শিম, মরিচ,শাক, লাউ, কুমড়া, মিষ্টি আলুসহ আদা ও হলুদ।সুভিধাভোগীরা বলছেন প্রতিটি বাগান থেকে বছরে প্রায় ২০০ কেজির বেশি শাক সবজি উৎপাদন সম্ভব।

কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এসব পুষ্টি বাগান থেকে ৪-৫০ শতাংশ পুষ্টি ও ৫-৩০ শতাংশ প্রোটিন চাহিদা মেটানো সম্ভব। আর দেড় শতাংশ জমির সবজি বাগানে বছরে ৩০০ কেজি সবজি উৎপাদন হলে জেলায় দুই হাজার ৭০০ টি সবজি বাগানের উৎপাদিত সবজির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ ৪৯হাজার ৭০০ কেজি। প্রতিকেজি সবজি গড়ে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে এর বাজার মূল্য ২কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ফলে সরকারের পুষ্টি বাগানের আওতায় থাকা পরিবারগুলোর সাশ্রয় হচ্ছে বৃহৎ অংকের টাকা।

জরিনা বলেন, বাগানে লাল শাক, পুঁই শাক, কচু শাক আছে। এগুলা নিজে খাই, প্রতিবেশিদের দেই আবারও বিক্রিও করি। বেগুন, কাচা মরিচ বিক্রি করেছি। মাসে ১ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারি।

একই এলাকার খাদেমুল বলেন, আগে মাসে ২-৩ হাজার টাকার শাক-সবজি কেনা লাগতো, এখন লাগে না। এখন সেটা বাগান থেকে পাচ্ছি এবং টাটকা খাবার খাচ্ছি। তাতে আমরা ভালো আছি।

মালেকা নামের আরেকজন বলেন, পুষ্টি বাগানে এখন ডাটা শাক, কলমি শাক, লাল শাক, শিম ও বেগুন আছে।বাগান থেকে উৎপাদিত শাক-সবজি আমরা খাই, প্রতিবেশিদের দেই।

এখানে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না।অল্প জমিতে অনেক সবজি চাষ করা যায়। অনুরোধ করবো এমন একটি নিরাপদ সবজি বাগান যেন সবাই করে।

মালেকা বেগম বলেন, ‘আমার বাগানে এখন আছে ঢ্যাঁড়স, বরবটি, করলা, ঝিঙে, ধুন্দুল ও মরিচ। সামান্য জায়গায় কত ফসল, না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ছয় মাস ধরে আমরা কোনো সবজি কিনে খাইনি। বাগান থেকে যা পাই তা–ই অনেক। শুধু তা–ই নয়, এক হাজার টাকার সবজিও বিক্রি করেছি আমি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ এই আলোকে প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উপকরণ সহায়তা দিয়ে পুষ্টি বাগানের মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। বসত বাড়ির আঙিনায় এ পারিবারিক পুষ্টি বাগান করে সহজেই পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি পূরণ হওয়ায় এ বাগানে করার দিকে ঝুকছে পরিবার গুলো।

আমাদের নিজস্ব প্রকল্পের আওতায় জেলায় ২ হাজার ৭ টি বেশি পুষ্টি বাগান আছে। এসব বাগান থেকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে এক থেকে দেড় মণ শাক সবজি বিক্রিও করছেন অনেকে।ফলে তারা আর্থিকভাবেও লাভোবান হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আগে যে জমিগুলো পতিত থাকতো, সেটা কিন্তু পুষ্টি বাগানের মাধ্যমে চাষের আওতায় আসছে।পুষ্টির চাহিদা পুরণেই আমরা এই ধরনের প্রকল্প করি ।বিভিন্ন বীজ কোম্পানী এবং ব্যক্তি যারা সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আহ্বানে বীজ সহায়তা প্রদান করে এ কার্যক্রমকে গতিশীল করেছেন।