মন্ত্রীরা কেন রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন না’
- আপডেট সময় : ০৯:৪৮:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ৯০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রায় অর্ধেক মন্ত্রী নীরবে নিভৃতে দিন যাপন করছেন। সরকারের শেষ সময়ে এসে যখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো, যে মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নানামুখী চাপ, নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার সুস্পষ্ট কিছু তৎপরতা, ঠিক সেই সময় মন্ত্রিসভার সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে দলীয় মন্ত্রীসভার মন্ত্রীরা অনেক সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন। তারা একজন জনসংযোগ কর্মকর্তা পান এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁরা আমন্ত্রিত হন। এই সমস্ত অনুষ্ঠানে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড, অতীত সরকারগুলোর দুঃশাসন এবং অপকর্ম ইত্যাদি প্রচার করাটা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে তারা যে বক্তব্য গুলো দেন সেগুলো গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়। একজন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যের চেয়ে মূল ধারার গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্ত্রীদের বক্তব্য গুরুত্ব পায়। কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার হলো বর্তমান মন্ত্রিসভার অর্ধেক মন্ত্রীর কোনো রকম বক্তব্যই নেই।
বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হলেন আ ফ ম মোস্তফা কামাল। তিনি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীও বটে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নীরবতা পালন করেন এবং হঠাৎ হঠাৎ করে তিনি যে সমস্ত বক্তব্য দেন সেই সমস্ত বক্তব্যগুলো বিতর্কিত এবং নানারকম সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আ ফ ম মোস্তাফা কামালকে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বক্তব্য রাখতে দেখা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সকল নেতা কর্মীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বিএনপি জামাতের দুঃশাসন এবং তাদের সময়ের যে দুর্নীতি তা প্রচার করার জন্য। কিন্তু আ ফ ম মোস্তাফা কামালের গত ছয় মাসের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কোথাও তিনি এ ধরনের বক্তব্য রাখেননি।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তার নিজের এলাকাতেই নানারকম সংকটে। কিন্তু বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি কেতাবী ঢংয়ের আমলাদের মত কিংবা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের মধ্যেই বক্তব্য দেন। তার ৬ মাসের ঠিকুজি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি দলীয় বক্তব্য তেমন রাখেননি।
ইয়াফেস ওসমান তিন মেয়াদেই মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিরল এই ভাগ্যবান মন্ত্রী যেন সত্যি সত্যি টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। তাকে গত ছয় মাসে বিএনপি জামাতের বিরুদ্ধে একটি বক্তব্যও রাখতে দেখা যায়নি।
গাজী গোলাম দস্তগীর পাঠ ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়য়ের দায়িত্বে রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে তিনি নির্বাচিত এমপি। কিন্তু তাকেও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বা বিএনপির সমালোচনা করতে তেমন একটা দেখা যায় না।
মোস্তাফা জব্বার আওয়ামী লীগের আমলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হয়েছেন টেকনোক্রেট কোটায়। তিনি টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপি জামাতের কঠোর সমালোচনা তার মুখ থেকে আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছে নুরুজ্জামান। তিনি মাঝে মাঝে বক্তব্য রাখেন বটে। তবে সেই বক্তব্যগুলোতে ধার নেই। তিনি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিএনপি জামাতের সমালোচনা করেন না।
বীর বাহাদুর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী। তাকেও খুব একটা বিরোধী দলের সমালোচনায় দেখা যায় না।
সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সবচাইতে সরব। তার পরপরই সরব হচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। এই দুইজনই মূলত মন্ত্রিসভার সদস্য যারা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসাবে কথা বলছেন। এছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে ড. মো আব্দুর রাজ্জাক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিকে কথা বলতে দেখা যায়। এরা সবাই কেন্দ্রীয় নেতা। কেন্দ্রীয় নেতাদের বাইরেও কয়েকজন মন্ত্রী কথা বলেন। তবে অর্ধেক মন্ত্রীর এই নীরবতা এই সরকারের দুর্বলতারই একটি প্রকাশ বলে অনেকে মনে করেন।’
















