দুমকীতে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে আমনের সবুজ সমারোহ,বাম্পার ফলনের স্বপ্ন
- আপডেট সময় : ০১:০৫:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০২৩ ২১৫ বার পড়া হয়েছে

দুমকি (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা: পটুয়াখালীর দুমকীতে যেদিকেই চোখ যায় শুধুই আমনের বিস্তীর্ণ মাঠে সবুজের সমারোহ। আর এ সবুজ ধানের পাতায় দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। আর ক’দিন পরেই সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পরে মাঠ। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষাণীর শূন্য গোলা এবং মুখে ফুটে উঠবে হাসির ঝিলিক।
কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, যথাসময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে আমনের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর ৬ হাজার ৬শ ৪১ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ২০৫ মেট্রিক টন। এছাড়াও উপজেলার পাতাবুনিয়া এলাকায় ট্রে পদ্ধতিতে আগাম জাতের ব্রি-৮৭ ধান চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ১ হাজার জন কৃষককে প্রনোদণা স্বরুপ সার ও ধান বীজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ ও বালাইনাশক দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুরাদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মুরাদিয়া এলাকায় আমন ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। ধানের প্রতিটি ক্ষেতে শীষ উঁকি দিচ্ছে। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।
উপজেলার আলগী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক রফিক হাওলাদার তার আট বিঘা জমিতে এবার আমন চাষ করেছেন। সুষ্ঠু সবল সবুজ ধানের চারাগুলো হাতড়াচ্ছিলেন তিনি। এমন সুন্দর চারা দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে তার।
নিজ জমিতে বালাইনাশক দিতে দিতে উপজেলার উত্তর রাজাখালি গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম সিকদার অভিযোগ করে বলেন, মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি অফিসারদের ঠিকমত পরামর্শ পাওয়া যায় না। স্থানীয় কীটনাশকের দোকানদারদের পরামর্শক্রমে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করে ফসলের রোগ বালাই দমন রাখার চেষ্টা করছি। আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। ফসলে খরচ একটু বেশিই হচ্ছে।
উপজেলার আঙ্গারিয়া বন্দর এলাকার প্রান্তিক কৃষক নিরব খান, ঝাটরা গ্রামের আব্দুস সালাম, দক্ষিণ রাজাখালী গ্রামের সোবাহান সিকদার, চরগরবদী গ্রামের কালাচাঁদ দাস, দুমকী গ্রামের মোঃ রাসেল খাঁনসহ অনেকেই বলেন, সর্বশেষ বৃষ্টির কারণে ফসলের চেহারা অনেক সুন্দর হয়েছে। সবল-সতেজ চারাগুলো দেখে মনে হয় ধানের ব্যাপক ফলন হবে।
কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ভালোভাবে আমন ফসল ঘরে তুলতে পারলে তাদের সারা বছরের চাহিদা পূরণ হয়। এ অঞ্চলের নিচু জমিগুলো আমন চাষের ওপর নির্ভরশীল। অপর দিকে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে দিশা ইরি, মালা ইরি, টেপু ইরি, কালা কোড়াসহ বিভিন্ন জাতের ধান আগাম উঠে গেলে রবি ফসলের চাষ হয় ওই জমিতে। তবে বাজারে ধানের পর্যাপ্ত মূল্য না থাকায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন চাষিরা। কৃষকদের দাবি, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে যে পরিশ্রম আর ব্যয় করা হয়, সে তুলনায় ধানের মূল্য পাচ্ছেন না তারা। ফলে ধান চাষের আগ্রহও হারিয়ে ফেলছেন অনেক কৃষক। কৃষি বান্ধব সরকারের কাছে তাদের দাবি- যেমন করে সার-বীজ ও কীটনাশকের ঘাটতি মিটিয়েছে, তেমনই ধানের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করলে প্রান্তিক চাষিদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচে যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে এ উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ধানের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগবালাই সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বাংলা পোর্টালকে বলেন, সাধারনত মাজরা পোকা ও বাদামী ফড়িং এবং গোড়াপচা রোগসহ ধানে পোকা মাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়।
রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়ে কৃষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে সঠিক মাত্রা নিশ্চিত করতে হবে।

















