ঢাকা ০৪:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের নতুন সদস্য হলেন ২৫ গণমাধ্যম কর্মী রাজনৈতিক দলের সাথে মামলায় জড়িয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি না করার আহবান জোড়া কবরে শুয়ে রইলেন তারা, নিভে গেল দুই পরিবারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন সলঙ্গা থানা ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়কের নামে থানায় অভিযোগ  প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তপূর্বক অপসারণের দাবী রাজশাহীতে বৈষম্যমুক্ত নগরের দাবিতে আলোচনা সভা  বেলকুচিতে হত্যাকান্ডের বিচার ও পি আর পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গণ সমাবেশ রামেকে একসঙ্গে ৫ সন্তানের জন্ম দিলেন প্রবাসীর স্ত্রী সলঙ্গায় সাংবাদিকের উপর যুবদল নেতার হামলার অভিযোগ  খাজা মেডিকেল প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ আমজাদ হোসেনের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প 

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নতুন হিসেব নিকেশ’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:০৭:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ৭৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ওআইসি ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠক করেছেন, যখন ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নৃশংস হামলা বর্বরতার জন্য একদিনের শোক পালন করেছেন, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেছেন তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং পরীক্ষিত বন্ধু ভারত ইসরায়েলের প্রতি সহযোগিতা এবং সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির এই বৈপরীত্য অবস্থান কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে? বাংলাদেশ নিয়ে কি ভারত নতুন হিসেব নিকেশ করবে? এই প্রশ্নটি এখন সামনে এসেছে। বিশেষ করে মধ্য প্রাচ্য সমস্যা নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়ার পর বিশ্ব রাজনীতিতে আবার নতুন ধরনের মেরুকরণ ঘটছে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ভারত এবং বাংলাদেশ অভিন্ন অবস্থানে ছিল। দুইটি রাষ্ট্রই রাশিয়ার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান অটুট রেখেছিল। রাশিয়া ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু। বিশেষ করে যতক্ষণ পর্যন্ত ভারত মুক্ত বাজারের অর্থনীতিতে না গেছে ততক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়াই ছিল তাদের প্রধান মিত্র। অন্যদিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের পর সবচেয়ে বেশি সহায়তাকারী দেশটির নাম তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়া। এই কারণেই দুটি দেশই একটি নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর অনেকটাই নাখোশ। ভারত এই সময় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে তেল সহ বিভিন্ন আমদানি রপ্তানির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ভারতের মতো বড় শক্তিকে চোখ রাঙানোর মতো ক্ষমতা বিশ্বে এখন কারও নেই। আর এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকগুলো দেশ তা নীরবে হজম করেছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের চেয়ে আলাদা অবস্থানে আছে তার একটি বড় কারণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। কারণ ওই সময় রাশিয়ার পক্ষে ভারতের সহানুভূতিশীল অবস্থানের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দায়িত্ব ভারতের ওপর ছেড়ে দিতে রাজি হয়নি বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু মধ্য প্রাচ্য ইস্যুতে পুরো ঘটনা এবং দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্রে পরিণত হয়েছে ভারত। কারণ ইউরোপের দেশগুলো গাজার ওপর যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড এবং মানবিক বিপর্যয় তা মেনে নিতে পারছে না। তাদের দেশগুলো এর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অনেকে গাজায় সাহায্য দিচ্ছে’। সেখানে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে শর্তহীন সমর্থন জানাচ্ছে। এই সমর্থনের ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দুটি ঘটনা ঘটছে। প্রথম ঘটনাটি হলো যে ভারতের প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও বাড়বে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক রাজনীতির কৌশলগত কারণেই আবার ভারতকে কাছে টানতে চাইবে এবং মধ্য প্রাচ্য যেহেতু বাংলাদেশের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সেই জন্য মধ্যপ্রাচ্যের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে একটা আপস সমঝোতা করবে। সেই আপস সমঝোতার বিষয় বস্তু বাংলাদেশও হতে পারে।

দ্বিতীয়ত এই ঘটনার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে ভারত নতুন করে প্রশ্ন তুলতে পারে। এমনিতেই ভারত গত কিছুদিন ধরেই চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিশেষ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কিছু খোলামেলা বক্তব্য নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করে আসছে। এখন মধ্য প্রাচ্যের ইস্যুতে যদি বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দা নতুন করে বাড়ে, তেলের দাম বাড়ে তখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় যদি চীনের প্রতি বেশি ঝুঁকে যায় তার প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটি ভারত হিসেবে নিকেশ করবে। আর এই সমস্ত হিসেবে নিকেশের ফলে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নতুন হিসেবে নিকেশ হবে কিনা তা অনেকে ভাবছেন। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ভারতের বাংলাদেশ নীতি এক এবং অভিন্ন। ভারতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, বাংলাদেশ নীতি তাদের পাল্টাবে না। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি রাজনৈতিক শক্তি, যারা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে মদদ দেয় না, যারা বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে তার বিকল্প ভারত ভাবে না, ভাবতে চায় না। কারণ ভারত জানে যে প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। আর প্রতিবেশী যদি বৈরী হয় তাহলে যে কি সমস্যা হয় তা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ভারত ভালোভাবেই বুঝেছে। তাই বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান আপাতত পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা’।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নতুন হিসেব নিকেশ’

আপডেট সময় : ০৮:০৭:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ওআইসি ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠক করেছেন, যখন ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নৃশংস হামলা বর্বরতার জন্য একদিনের শোক পালন করেছেন, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেছেন তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং পরীক্ষিত বন্ধু ভারত ইসরায়েলের প্রতি সহযোগিতা এবং সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির এই বৈপরীত্য অবস্থান কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে? বাংলাদেশ নিয়ে কি ভারত নতুন হিসেব নিকেশ করবে? এই প্রশ্নটি এখন সামনে এসেছে। বিশেষ করে মধ্য প্রাচ্য সমস্যা নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়ার পর বিশ্ব রাজনীতিতে আবার নতুন ধরনের মেরুকরণ ঘটছে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ভারত এবং বাংলাদেশ অভিন্ন অবস্থানে ছিল। দুইটি রাষ্ট্রই রাশিয়ার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান অটুট রেখেছিল। রাশিয়া ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু। বিশেষ করে যতক্ষণ পর্যন্ত ভারত মুক্ত বাজারের অর্থনীতিতে না গেছে ততক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়াই ছিল তাদের প্রধান মিত্র। অন্যদিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের পর সবচেয়ে বেশি সহায়তাকারী দেশটির নাম তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়া। এই কারণেই দুটি দেশই একটি নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর অনেকটাই নাখোশ। ভারত এই সময় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে তেল সহ বিভিন্ন আমদানি রপ্তানির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ভারতের মতো বড় শক্তিকে চোখ রাঙানোর মতো ক্ষমতা বিশ্বে এখন কারও নেই। আর এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকগুলো দেশ তা নীরবে হজম করেছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের চেয়ে আলাদা অবস্থানে আছে তার একটি বড় কারণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। কারণ ওই সময় রাশিয়ার পক্ষে ভারতের সহানুভূতিশীল অবস্থানের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দায়িত্ব ভারতের ওপর ছেড়ে দিতে রাজি হয়নি বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু মধ্য প্রাচ্য ইস্যুতে পুরো ঘটনা এবং দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্রে পরিণত হয়েছে ভারত। কারণ ইউরোপের দেশগুলো গাজার ওপর যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড এবং মানবিক বিপর্যয় তা মেনে নিতে পারছে না। তাদের দেশগুলো এর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অনেকে গাজায় সাহায্য দিচ্ছে’। সেখানে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে শর্তহীন সমর্থন জানাচ্ছে। এই সমর্থনের ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দুটি ঘটনা ঘটছে। প্রথম ঘটনাটি হলো যে ভারতের প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও বাড়বে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক রাজনীতির কৌশলগত কারণেই আবার ভারতকে কাছে টানতে চাইবে এবং মধ্য প্রাচ্য যেহেতু বাংলাদেশের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সেই জন্য মধ্যপ্রাচ্যের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে একটা আপস সমঝোতা করবে। সেই আপস সমঝোতার বিষয় বস্তু বাংলাদেশও হতে পারে।

দ্বিতীয়ত এই ঘটনার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে ভারত নতুন করে প্রশ্ন তুলতে পারে। এমনিতেই ভারত গত কিছুদিন ধরেই চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিশেষ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কিছু খোলামেলা বক্তব্য নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করে আসছে। এখন মধ্য প্রাচ্যের ইস্যুতে যদি বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দা নতুন করে বাড়ে, তেলের দাম বাড়ে তখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় যদি চীনের প্রতি বেশি ঝুঁকে যায় তার প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটি ভারত হিসেবে নিকেশ করবে। আর এই সমস্ত হিসেবে নিকেশের ফলে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নতুন হিসেবে নিকেশ হবে কিনা তা অনেকে ভাবছেন। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ভারতের বাংলাদেশ নীতি এক এবং অভিন্ন। ভারতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, বাংলাদেশ নীতি তাদের পাল্টাবে না। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি রাজনৈতিক শক্তি, যারা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে মদদ দেয় না, যারা বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে তার বিকল্প ভারত ভাবে না, ভাবতে চায় না। কারণ ভারত জানে যে প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। আর প্রতিবেশী যদি বৈরী হয় তাহলে যে কি সমস্যা হয় তা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ভারত ভালোভাবেই বুঝেছে। তাই বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান আপাতত পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা’।