সংবাদ শিরোনাম ::
শাহজাদপুরে আওয়ামীলীগের সাবেক দুই এমপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা বেলকুচিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ  শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ জন আটক ৭ নভেম্বর না আসলে বাংলাদেশ বিলীন হয়ে যেত: বাউবি উপাচার্য বেলকুচির সেন ভাঙ্গাবাড়ী বাজার মসজিদের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন “জয় বাংলা” স্লোগান দেওয়ায় সাবেক পিপি-কে গণপিটুনি, পুলিশে সোপর্দ উলিপুরে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ভোট কেন্দ্র মেরামতের টাকা আত্নসাতের অভিযোগ খাজা শাহ্ এনায়েতপুরী (রহ:) এর ১১০ তম ওরছ শরীফের দাওয়াত পত্র বিতরণ  রাজশাহীর মাঠে স্পীড স্কেটিংয়ে বগুড়ার স্কেটারদের ৩টি স্বর্ণপদক সহ ৮ পদক অর্জন এনায়েতপুরে ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি উপলক্ষে আলোচনা সভা

মহাবিশ্বের ১০টি সুন্দর গ্যালাক্সি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:২৩:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪ ১১০ বার পড়া হয়েছে

বাংলা পোর্টাল: মহাবিশ্ব অসীম, রহস্যময় এবং অবিশ্বাস্য সুন্দর। এ বিশালতার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য গ্যালাক্সি, যার প্রতিটিতে আবার বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহ, ধূলিকণা, গ্যাস ও কৃষ্ণগহ্বরের সমাহার। এরকম অসংখ্য গ্যালাক্সির মধ্যে আমাদের মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা কেবল একটি।

আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা মহাবিশ্বের গভীরে আরও ভালোভাবে চোখ বুলাতে পারি। হাবল টেলিস্কোপ বা স্পিৎজার থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো উন্নত প্রযুক্তি আমাদের মহাবিশ্বের বর্ণিল অতীত দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। পাওয়া গেছে অতীতের অনেক গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণের সুযোগ। ফলে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ধারণা পাচ্ছি আমরা।

মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রগুলো মহাকাশ সম্পর্কে জানাতে, ছবিতে মহাবিশ্বের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে নানা ধরনের ছবি প্রকাশ করে প্রায়ই। সেসব ছবি থেকে বাছাইকৃত ১০টি অনিন্দ্য সুন্দর গ্যালাক্সির ছবি নিয়ে আজকের এ আয়োজন।

১) এম১০৪: সোমব্রেরো গ্যালাক্সি
ক্যাটালগের নাম এম১০৪ বা মেসিয়ার অবজেক্ট ১০৪। এটি সোমব্রেরো গ্যালাক্সি নামেও পরিচিত। এখানে যে ছবিটি রয়েছে, তা হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা সবচেয়ে বিস্তৃত ছবি।

এ ছায়াপথের কেন্দ্রে রয়েছে একটি উজ্জ্বল সাদা বাল্বস কোর। গ্যালাক্সিটি দেখতে সর্পিলাকার। চারপাশে রয়েছে ধুলিকণার পুরু স্তর। কেন্দ্রে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল বা অতি ভারী কৃষ্ণগহ্বর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আসলে, সবরকম প্রমাণ কৃষ্ণগহ্বরের দিকে ইঙ্গিত করছে ঠিকই, তবে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনো।

গ্যালাক্সিটির অবস্থান আকাশগঙ্গা থেকে ২৮ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। প্রায় পঞ্চাশ হাজার আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত। এতে ৮০০ বিলিয়নেরও বেশি নক্ষত্র রয়েছে। পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপের সাহায্যে সহজেই দেখা যায়। মে মাসের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছায়াপথগুলোর একটি এই এম১০৪ গ্যালাক্সি। ১৭৮১ সালে ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী পিয়ের মেক্যাইন এটি আবিষ্কার করেন।

২) জোড়া গ্যালাক্সি এনজিসি ৩৩১৪
দুটি গ্যালাক্সি মিলে তৈরি হয়েছে এনজিসি ৩৩১৪। এর অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ১৪০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে সর্পিলাকার গ্যালাক্সিটির এই ছবি তোলা হয়েছে। ছবিতে দুটি গ্যালাক্সি একসঙ্গে মিলে আছে মনে হলেও আসলে একটির চেয়ে অন্যটি বেশ দূরে। একটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে পিনহুইল আকারের এক উজ্জ্বল নীল নক্ষত্র। এনজিসি ৩৩১৪ গ্যালাক্সিটি প্রায় ৭০ হাজার আলোকবর্ষজুড়ে বিস্তৃত।

৩) এম৬৪: কালো চোখের ছায়াপথ
এই ছায়াপথের কেন্দ্রে আলো শোষণকারী একটি কালো রিং রয়েছে। এই রিং ধূলিকণা দিয়ে তৈরি। এ কারণে এটি ‘কালো চোখের ছায়াপথ’ নামে পরিচিত। ক্যাটালগের নাম মেসিয়ার ৬৪। গ্যালাক্সিটি সর্পিলাকার। এর দুটি ডিস্ক বা বলয় রয়েছে, যা পরস্পরের বিপরীতে ঘোরে। বাইরের বলয়টি প্রায় ৫২ হাজার আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত। ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ এডওয়ার্ড পিগট এ ছায়াপথ আবিষ্কার করেন। গ্যালাক্সিটি পৃথিবী থেকে ১৭ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। এর আপাত উজ্জ্বলতা বা অ্যাপারেন্ট ম্যাগনিচ্যুডের মান ৯.৮। তাই সাধারণ বা একটু ভালো মানের টেলিস্কোপ দিয়ে মে মাসে গ্যালাক্সিটি দেখা যায়।

৪) মেসিয়ার ১০৬
মেসিয়ার ১০৬ গ্যালাক্সিটি ‘এনজিসি ৪২৫৮’ নামেও পরিচিত। ১৭৮১ সালে পিয়ের মেক্যাইন সর্পিলাকার এ গ্যালাক্সি আবিষ্কার করেন। তিনি ছিলেন ফরাসি জ্যোতির্বিদ চার্লস মেসিয়ারের সহকারী। এই চার্লস মেসিয়ারের নামেই মেসিয়ার বস্তু-তালিকা বা মেসিয়ার অবজেক্ট ক্যাটালগ করা হয়েছে।’

গ্যালাক্সিটির অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ২৪ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। এর কেন্দ্রে একটি বিশালাকার কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে। রেডিও তরঙ্গের সাহায্যে এর নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে।

৫) মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি
বাংলা নাম আকাশগঙ্গা। হ্যাঁ, এ গ্যালাক্সিতেই আমাদের বাস। সর্পিলাকার এ গ্যালাক্সি প্রায় ১৩.৬ বিলিয়ন বছর পুরানো। চ্যাপ্টা চাকতির মতো দেখতে গ্যালাক্সিটিতে ঘূর্ণায়মান অসংখ্য নক্ষত্র, গ্রহ, ধুলোবালু, গ্যাস ইত্যাদি রয়েছে। এই চ্যাপ্টা চাকতিটি প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষজুড়ে বিস্তৃত। কেন্দ্র থেকে অনেকটা দূরে, এর একটি সর্পিল বাহুতে আমাদের সৌরজগতের অবস্থান। আমাদের এই সৌরজগৎ প্রতি সেকেন্ডে ৮ লাখ ২৮ হাজার কিলোমিটার বেগে মিল্কিওয়ের কেন্দ্রকে ঘিরে ঘুরছে। একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর। এ নিয়ে আরও জানতে গ্যালাক্সির মধ্যে সূর্যের গতিপথ

৬) গ্যালাক্সি এনজিসি ৬৭৫৩
এটিও একটি সর্পিলাকার গ্যালাক্সি। ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ জন হার্শেল ১৮৩৬ সালের ৫ জুলাই এটি আবিষ্কার করেন। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি থেকে এটি রয়েছে ১৪২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। এখন পর্যন্ত নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা শেষ ছবি এটি। এই গ্যালাক্সির সর্পিলাকার বাহুতে অসংখ্য নক্ষত্র রয়েছে। নীল রঙের নক্ষত্রগুলো নতুন, আর হলুদ নক্ষত্রগুলো পুরোনো।

৭) অ্যান্টেনা গ্যালাক্সি
কয়েক শ মিলিয়ন বছর আগে দুটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষ থেকে তৈরি হয় একটি নতুন গ্যালাক্সি। ক্যাটালগের নাম এনজিসি ৪০৩৮-৪০৩৯। গ্যালাক্সিটির ভালো নাম, অ্যান্টেনা গ্যালাক্সি। নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ছবি থেকে বিজ্ঞানীরা এর ব্যাপারে জানতে পেরেছেন।

ছবিতে এ নক্ষত্র জন্মের সময়কার অঞ্চলগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। একে সুপার স্টার ক্লাস্টার বলে। এর দীর্ঘ বাহুর কারণে নাম রাখা হয়েছে অ্যান্টেনা গ্যালাক্সি। টেলিস্কোপের সাহায্যে এই বাহুগুলো পৃথিবী থেকে দেখা যায়। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৭০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৮) ট্যাডপোল গ্যালাক্সি
এর আরেক নাম ইউজিসি ১০২১৪। সর্পিলাকার এ গ্যালাক্সির আকৃতি বিকৃত। এ জন্যই এটি দেখতে এত সুন্দর। অন্য একটি গ্যালাক্সির সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে এর আকৃতি এমন বিকৃত হয়ে গেছে। পৃথিবী থেকে প্রায় ৪২০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে এর অবস্থান। আকৃতি বিকৃতির ফলে এর মূল অংশে বাহুর পাশাপাশি রয়েছে দীর্ঘ লেজ। গ্যালাক্সির মূল অংশের কেন্দ্রে রয়েছে বিশালাকার একটি কৃষ্ণগহ্বর। আর প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার আলোকবর্ষ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লেজটিতে রয়েছে বিপুল সংখ্যক নক্ষত্র ও গ্যাস। বিজ্ঞানীদের মতে, লেজের উজ্জ্বল নীল নক্ষত্রগুলো তৈরি হয়েছে মহাজাগতিক ক্যালেন্ডারের হিসেবে ‘সাম্প্রতিক’ সংঘর্ষের ফলে।

৯) এআরপি ২৭৩
সবচেয়ে সুন্দর ছায়াপথগুলোর মধ্যে এএরপি ২৭৩ অন্যতম। এটি পৃথিবী থেকে ৩০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। সর্পিলাকার এ গ্যালাক্সি ইউজিসি ১৮১০ নামেও পরিচিত। এখানে আসলে দুটি গ্যালাক্সি রয়েছে। একটা বড়, অন্যটি ছোট। ছোটটির নাম ইউজিসি ১৮১৩। এটির তুলনায় অন্যটি প্রায় পাঁচ গুণ বড়। গ্যালাক্সি দুটি বর্তমানে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। ফলে ধুলো, গ্যাস ও নক্ষত্র মিলে তৈরি হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর নকশা। অনেকে একে ‘গোলাপের মতো’ বলেও উল্লেখ করেছেন। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ২০১০ সালে এই নিখুঁত ছবিটি তুলেছে।

১০) মেসিয়ার ৮২
মেসিয়ার ৮২ বা এম৮২ গ্যালাক্সিতে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে নতুন শিশু নক্ষত্র। এর আরেক নাম সিগার গ্যালাক্সি। সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি হারে নক্ষত্র জন্মাচ্ছে এ গ্যালাক্সিতে। বলা চলে, নক্ষত্রজন্মের বিস্ফোরণ হচ্ছে! বর্তমানে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চেয়ে প্রায় দশ গুণ বেশি নক্ষত্র আছে এতে!

১৭৭৪ সালে জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান এলার্ট বোর্ড মেসিয়ার ৮২ গ্যালাক্সি আবিষ্কার করেন। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। আজও নতুন নক্ষত্র জন্মাচ্ছে বলেই গ্যালাক্সিটি এখনো পূর্ণাঙ্গ আকৃতি পায়নি। ধীরে ধীরে আকৃতি নিচ্ছে। এর আপাত উজ্জ্বলতা ৮.৪। একটু বড় ধরনের টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এপ্রিলে গ্যালাক্সিটি ভালোভাবে দেখা সম্ভব।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মহাবিশ্বের ১০টি সুন্দর গ্যালাক্সি

আপডেট সময় : ০৮:২৩:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

বাংলা পোর্টাল: মহাবিশ্ব অসীম, রহস্যময় এবং অবিশ্বাস্য সুন্দর। এ বিশালতার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য গ্যালাক্সি, যার প্রতিটিতে আবার বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহ, ধূলিকণা, গ্যাস ও কৃষ্ণগহ্বরের সমাহার। এরকম অসংখ্য গ্যালাক্সির মধ্যে আমাদের মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা কেবল একটি।

আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা মহাবিশ্বের গভীরে আরও ভালোভাবে চোখ বুলাতে পারি। হাবল টেলিস্কোপ বা স্পিৎজার থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো উন্নত প্রযুক্তি আমাদের মহাবিশ্বের বর্ণিল অতীত দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। পাওয়া গেছে অতীতের অনেক গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণের সুযোগ। ফলে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ধারণা পাচ্ছি আমরা।

মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রগুলো মহাকাশ সম্পর্কে জানাতে, ছবিতে মহাবিশ্বের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে নানা ধরনের ছবি প্রকাশ করে প্রায়ই। সেসব ছবি থেকে বাছাইকৃত ১০টি অনিন্দ্য সুন্দর গ্যালাক্সির ছবি নিয়ে আজকের এ আয়োজন।

১) এম১০৪: সোমব্রেরো গ্যালাক্সি
ক্যাটালগের নাম এম১০৪ বা মেসিয়ার অবজেক্ট ১০৪। এটি সোমব্রেরো গ্যালাক্সি নামেও পরিচিত। এখানে যে ছবিটি রয়েছে, তা হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা সবচেয়ে বিস্তৃত ছবি।

এ ছায়াপথের কেন্দ্রে রয়েছে একটি উজ্জ্বল সাদা বাল্বস কোর। গ্যালাক্সিটি দেখতে সর্পিলাকার। চারপাশে রয়েছে ধুলিকণার পুরু স্তর। কেন্দ্রে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল বা অতি ভারী কৃষ্ণগহ্বর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আসলে, সবরকম প্রমাণ কৃষ্ণগহ্বরের দিকে ইঙ্গিত করছে ঠিকই, তবে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনো।

গ্যালাক্সিটির অবস্থান আকাশগঙ্গা থেকে ২৮ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। প্রায় পঞ্চাশ হাজার আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত। এতে ৮০০ বিলিয়নেরও বেশি নক্ষত্র রয়েছে। পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপের সাহায্যে সহজেই দেখা যায়। মে মাসের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছায়াপথগুলোর একটি এই এম১০৪ গ্যালাক্সি। ১৭৮১ সালে ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী পিয়ের মেক্যাইন এটি আবিষ্কার করেন।

২) জোড়া গ্যালাক্সি এনজিসি ৩৩১৪
দুটি গ্যালাক্সি মিলে তৈরি হয়েছে এনজিসি ৩৩১৪। এর অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ১৪০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে সর্পিলাকার গ্যালাক্সিটির এই ছবি তোলা হয়েছে। ছবিতে দুটি গ্যালাক্সি একসঙ্গে মিলে আছে মনে হলেও আসলে একটির চেয়ে অন্যটি বেশ দূরে। একটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে পিনহুইল আকারের এক উজ্জ্বল নীল নক্ষত্র। এনজিসি ৩৩১৪ গ্যালাক্সিটি প্রায় ৭০ হাজার আলোকবর্ষজুড়ে বিস্তৃত।

৩) এম৬৪: কালো চোখের ছায়াপথ
এই ছায়াপথের কেন্দ্রে আলো শোষণকারী একটি কালো রিং রয়েছে। এই রিং ধূলিকণা দিয়ে তৈরি। এ কারণে এটি ‘কালো চোখের ছায়াপথ’ নামে পরিচিত। ক্যাটালগের নাম মেসিয়ার ৬৪। গ্যালাক্সিটি সর্পিলাকার। এর দুটি ডিস্ক বা বলয় রয়েছে, যা পরস্পরের বিপরীতে ঘোরে। বাইরের বলয়টি প্রায় ৫২ হাজার আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত। ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ এডওয়ার্ড পিগট এ ছায়াপথ আবিষ্কার করেন। গ্যালাক্সিটি পৃথিবী থেকে ১৭ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। এর আপাত উজ্জ্বলতা বা অ্যাপারেন্ট ম্যাগনিচ্যুডের মান ৯.৮। তাই সাধারণ বা একটু ভালো মানের টেলিস্কোপ দিয়ে মে মাসে গ্যালাক্সিটি দেখা যায়।

৪) মেসিয়ার ১০৬
মেসিয়ার ১০৬ গ্যালাক্সিটি ‘এনজিসি ৪২৫৮’ নামেও পরিচিত। ১৭৮১ সালে পিয়ের মেক্যাইন সর্পিলাকার এ গ্যালাক্সি আবিষ্কার করেন। তিনি ছিলেন ফরাসি জ্যোতির্বিদ চার্লস মেসিয়ারের সহকারী। এই চার্লস মেসিয়ারের নামেই মেসিয়ার বস্তু-তালিকা বা মেসিয়ার অবজেক্ট ক্যাটালগ করা হয়েছে।’

গ্যালাক্সিটির অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ২৪ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। এর কেন্দ্রে একটি বিশালাকার কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে। রেডিও তরঙ্গের সাহায্যে এর নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে।

৫) মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি
বাংলা নাম আকাশগঙ্গা। হ্যাঁ, এ গ্যালাক্সিতেই আমাদের বাস। সর্পিলাকার এ গ্যালাক্সি প্রায় ১৩.৬ বিলিয়ন বছর পুরানো। চ্যাপ্টা চাকতির মতো দেখতে গ্যালাক্সিটিতে ঘূর্ণায়মান অসংখ্য নক্ষত্র, গ্রহ, ধুলোবালু, গ্যাস ইত্যাদি রয়েছে। এই চ্যাপ্টা চাকতিটি প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষজুড়ে বিস্তৃত। কেন্দ্র থেকে অনেকটা দূরে, এর একটি সর্পিল বাহুতে আমাদের সৌরজগতের অবস্থান। আমাদের এই সৌরজগৎ প্রতি সেকেন্ডে ৮ লাখ ২৮ হাজার কিলোমিটার বেগে মিল্কিওয়ের কেন্দ্রকে ঘিরে ঘুরছে। একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর। এ নিয়ে আরও জানতে গ্যালাক্সির মধ্যে সূর্যের গতিপথ

৬) গ্যালাক্সি এনজিসি ৬৭৫৩
এটিও একটি সর্পিলাকার গ্যালাক্সি। ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ জন হার্শেল ১৮৩৬ সালের ৫ জুলাই এটি আবিষ্কার করেন। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি থেকে এটি রয়েছে ১৪২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। এখন পর্যন্ত নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা শেষ ছবি এটি। এই গ্যালাক্সির সর্পিলাকার বাহুতে অসংখ্য নক্ষত্র রয়েছে। নীল রঙের নক্ষত্রগুলো নতুন, আর হলুদ নক্ষত্রগুলো পুরোনো।

৭) অ্যান্টেনা গ্যালাক্সি
কয়েক শ মিলিয়ন বছর আগে দুটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষ থেকে তৈরি হয় একটি নতুন গ্যালাক্সি। ক্যাটালগের নাম এনজিসি ৪০৩৮-৪০৩৯। গ্যালাক্সিটির ভালো নাম, অ্যান্টেনা গ্যালাক্সি। নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ছবি থেকে বিজ্ঞানীরা এর ব্যাপারে জানতে পেরেছেন।

ছবিতে এ নক্ষত্র জন্মের সময়কার অঞ্চলগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। একে সুপার স্টার ক্লাস্টার বলে। এর দীর্ঘ বাহুর কারণে নাম রাখা হয়েছে অ্যান্টেনা গ্যালাক্সি। টেলিস্কোপের সাহায্যে এই বাহুগুলো পৃথিবী থেকে দেখা যায়। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৭০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৮) ট্যাডপোল গ্যালাক্সি
এর আরেক নাম ইউজিসি ১০২১৪। সর্পিলাকার এ গ্যালাক্সির আকৃতি বিকৃত। এ জন্যই এটি দেখতে এত সুন্দর। অন্য একটি গ্যালাক্সির সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে এর আকৃতি এমন বিকৃত হয়ে গেছে। পৃথিবী থেকে প্রায় ৪২০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে এর অবস্থান। আকৃতি বিকৃতির ফলে এর মূল অংশে বাহুর পাশাপাশি রয়েছে দীর্ঘ লেজ। গ্যালাক্সির মূল অংশের কেন্দ্রে রয়েছে বিশালাকার একটি কৃষ্ণগহ্বর। আর প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার আলোকবর্ষ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লেজটিতে রয়েছে বিপুল সংখ্যক নক্ষত্র ও গ্যাস। বিজ্ঞানীদের মতে, লেজের উজ্জ্বল নীল নক্ষত্রগুলো তৈরি হয়েছে মহাজাগতিক ক্যালেন্ডারের হিসেবে ‘সাম্প্রতিক’ সংঘর্ষের ফলে।

৯) এআরপি ২৭৩
সবচেয়ে সুন্দর ছায়াপথগুলোর মধ্যে এএরপি ২৭৩ অন্যতম। এটি পৃথিবী থেকে ৩০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। সর্পিলাকার এ গ্যালাক্সি ইউজিসি ১৮১০ নামেও পরিচিত। এখানে আসলে দুটি গ্যালাক্সি রয়েছে। একটা বড়, অন্যটি ছোট। ছোটটির নাম ইউজিসি ১৮১৩। এটির তুলনায় অন্যটি প্রায় পাঁচ গুণ বড়। গ্যালাক্সি দুটি বর্তমানে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। ফলে ধুলো, গ্যাস ও নক্ষত্র মিলে তৈরি হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর নকশা। অনেকে একে ‘গোলাপের মতো’ বলেও উল্লেখ করেছেন। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ২০১০ সালে এই নিখুঁত ছবিটি তুলেছে।

১০) মেসিয়ার ৮২
মেসিয়ার ৮২ বা এম৮২ গ্যালাক্সিতে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে নতুন শিশু নক্ষত্র। এর আরেক নাম সিগার গ্যালাক্সি। সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি হারে নক্ষত্র জন্মাচ্ছে এ গ্যালাক্সিতে। বলা চলে, নক্ষত্রজন্মের বিস্ফোরণ হচ্ছে! বর্তমানে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চেয়ে প্রায় দশ গুণ বেশি নক্ষত্র আছে এতে!

১৭৭৪ সালে জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান এলার্ট বোর্ড মেসিয়ার ৮২ গ্যালাক্সি আবিষ্কার করেন। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। আজও নতুন নক্ষত্র জন্মাচ্ছে বলেই গ্যালাক্সিটি এখনো পূর্ণাঙ্গ আকৃতি পায়নি। ধীরে ধীরে আকৃতি নিচ্ছে। এর আপাত উজ্জ্বলতা ৮.৪। একটু বড় ধরনের টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এপ্রিলে গ্যালাক্সিটি ভালোভাবে দেখা সম্ভব।’