ঢাকা ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
এনায়েতপুরে শহীদদের স্মরণে ২নং স্থল ইউনিয়নে দোয়া ও আলোচনা সভা  সিরাজগঞ্জ রায়গঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন সাজাপ্রাপ্ত সেই প্রধান শিক্ষক আফছার আলী দূর্গা পূজাকে ঘিরে ব্যস্ত রাউজানের প্রতিমা শিল্পীরা  নারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার গোপন কক্ষটি গোপন ছিল না দায়িত্ব গ্রহণের আড়াই ঘন্টা পর রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ প্রেমিকার টাকা স্বর্ণলংকার হাতিয়ে নিয়ে ফ্লাইওভার থেকে ফেলে হত্যা  এনায়েতপুরে আগামী ২১শে সেপ্টেম্বর বিএনপির স্মরণ সভাকে সফল করতে প্রস্তুতিমূলক সভা  সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের নতুন সদস্য হলেন ২৫ গণমাধ্যম কর্মী রাজনৈতিক দলের সাথে মামলায় জড়িয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি না করার আহবান

নিয়ন মতিয়ুল

সাংবাদিকদের ‘খাপছাড়া’ প্রশ্ন ও পড়াটড়া

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৫৪:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪ ৩১ বার পড়া হয়েছে

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"square_fit":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

ক’দিন আগে আমার পোস্ট ‘সাংবাদিকতার বারোটা বেজে গেছে!’ পড়ে অনার্স পড়ুয়া একজন ইনবক্সে জানতে চাইলেন, কী জব করেন আপনি’? বললাম, ফেসবুকে কতদিন?” জানালেন, ১২ বছর। বললাম, “প্রোফাইলে সব তথ্য আছে, দেখেননি?” এরপর বললেন, “যদি একটা জব দেন উপকৃত হবো? সাংবাদিকতা আমার পছন্দ।”

আমি তাকে “যে কারণে মেধাবীরা সাংবাদিকতা ছাড়ছেন” শিরোনামে তথ্যবহুল এক লেখার লিংক দিয়ে বললাম, “নতুনদের আমি সাংবাদিকতায় আসতে বলি না। বরং বাধা দেই।” এ কথায় ছাত্রটি বললেন, “কেন বাধা দেন, বলা যাবে?” প্রচণ্ড বিরক্ত লাগল। এ যেন, “সপ্তকাণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতা রামের মাসি” আর “ইশারায় পণ্ডিত বোঝে, বোকা বোঝে কিলে” অবস্থা। শঙ্কা জাগল, এই ছেলে সাংবাদিকতায় এলে কতটা বাজাবেন!

২. বছর দেড়েক একটি রাজনৈতিক দলের বিট করেছি। একবার ক্রিটিক্যাল এক ইস্যুতে দলীয়প্রধানের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে সামনে বসলাম। লিখিত বক্তব্য শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরব হলেন রিপোর্টাররা। কয়েকটি প্রশ্নের পরে দেখলাম, ইস্যু বাউন্স করছে। মোড় ঘুরানোর প্রশ্ন করতে গিয়ে দেখলাম রিপোর্টারদের হিরোইজম শুরু। অবশেষে হৈ হট্টোগোলে মাইক বন্ধ করে উঠে গেলেন দলীয়প্রধান।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যদি জানাশোনা, পড়ালেখা না থাকে, ইস্যুর গতিপ্রকৃতি, প্রাসঙ্গিকতার সুদূরপ্রসারী প্রভাব যদি বুঝতে না পারা যায়, তাহলে প্রশ্নগুলো স্টুপিড হয়ে ওঠে। তখন প্রশ্নের মেরিট নয়, রিপোর্টারদের উঁচু গলাটাই চাউর হয়। ক্রমাগত এমন প্রবণতায় মগজ বাদ রেখে পেশীতে ভরে দিয়েই শুরু হয় রিপোর্টারদের হিরোইজম। কখনও কখনও সিনিয়ররাই এমন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেন জুনিয়রদের।

অভিনেত্রী শর্মিলী ঠাকুর, বিশ্বকবি বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয় কিনা, সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের পর মেঘের কাছে তথ্য চাওয়া, অভিনেত্রী ময়ুরীর মেয়ে তার মায়ের সিনেমা দেখেছে কিনা জানতে চাওয়া, অভিনেত্রী সীমানার মৃত্যুতে তার ছেলের প্রতিক্রিয়া জানা কিংবা ভালো ইংরেজি না জেনে বিদেশিদের দুর্বোধ্য প্রশ্ন করা- নিশ্চিতভাবেই ভালো সাংবাদিকতা নয়। সংবাদমাধ্যমের সাপ্তাহিক মিটিংগুলোতে এসব নিয়ে কী আলোচনা হয় না?

৩.গণমাধ্যমের প্রধান চরিত্র হলো জনগণের হয়ে ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিমূলক জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রশ্ন ছুঁড়ে উত্তর আদায় করা। এক্ষেত্রে যে কোনো প্রশ্ন করতেই পারেন সাংবাদিকরা। তবে উত্তরদাতার কাছ থেকে কীভাবে উত্তর বের করে আনবেন, তা নির্ভর করে কীভাবে, কোন কৌশলে প্রশ্নটা করছেন। প্রশ্ন করার ভাষা আর স্টাইলের ওপরেই নির্ভর করে আপনি কতটা দক্ষ, যোগ্য, বিচক্ষণ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কতটা জানেন। সাংবাদিকতার পরিচয়টাই বড় নয়, আপনার ব্যক্তিগত জ্ঞান, সুশিক্ষা, যোগ্যতা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

সমস্যাটা হচ্ছে, সাংবাদিকতা এখন রাজনৈতিক ‘বাইনারি’ দৃষ্টিভঙ্গির কাঁটাতারে আটকে গেছে। হয় পক্ষ, নয়তো প্রতিপক্ষ। হয় ডান, নয়তো বাম। হয় ক্ষমতাসীন, নয়তো বিরোধদল…। সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে সামনে রেখে এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রমোটার মূলত রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে হরিজন্টাল-ভার্টিক্যাল লেন্সের বাইরে বার্ডস আই বা ড্রোন লেন্স এখন উপেক্ষিত। প্রশ্নকর্তাদের নির্মোহ প্রশ্নগুলো তাই বাইনারি লেন্সে উত্তরদাতাদের ক্ষুব্ধ করে, আগ্রাসী করে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

নিয়ন মতিয়ুল

সাংবাদিকদের ‘খাপছাড়া’ প্রশ্ন ও পড়াটড়া

আপডেট সময় : ১২:৫৪:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪

ক’দিন আগে আমার পোস্ট ‘সাংবাদিকতার বারোটা বেজে গেছে!’ পড়ে অনার্স পড়ুয়া একজন ইনবক্সে জানতে চাইলেন, কী জব করেন আপনি’? বললাম, ফেসবুকে কতদিন?” জানালেন, ১২ বছর। বললাম, “প্রোফাইলে সব তথ্য আছে, দেখেননি?” এরপর বললেন, “যদি একটা জব দেন উপকৃত হবো? সাংবাদিকতা আমার পছন্দ।”

আমি তাকে “যে কারণে মেধাবীরা সাংবাদিকতা ছাড়ছেন” শিরোনামে তথ্যবহুল এক লেখার লিংক দিয়ে বললাম, “নতুনদের আমি সাংবাদিকতায় আসতে বলি না। বরং বাধা দেই।” এ কথায় ছাত্রটি বললেন, “কেন বাধা দেন, বলা যাবে?” প্রচণ্ড বিরক্ত লাগল। এ যেন, “সপ্তকাণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতা রামের মাসি” আর “ইশারায় পণ্ডিত বোঝে, বোকা বোঝে কিলে” অবস্থা। শঙ্কা জাগল, এই ছেলে সাংবাদিকতায় এলে কতটা বাজাবেন!

২. বছর দেড়েক একটি রাজনৈতিক দলের বিট করেছি। একবার ক্রিটিক্যাল এক ইস্যুতে দলীয়প্রধানের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে সামনে বসলাম। লিখিত বক্তব্য শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরব হলেন রিপোর্টাররা। কয়েকটি প্রশ্নের পরে দেখলাম, ইস্যু বাউন্স করছে। মোড় ঘুরানোর প্রশ্ন করতে গিয়ে দেখলাম রিপোর্টারদের হিরোইজম শুরু। অবশেষে হৈ হট্টোগোলে মাইক বন্ধ করে উঠে গেলেন দলীয়প্রধান।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যদি জানাশোনা, পড়ালেখা না থাকে, ইস্যুর গতিপ্রকৃতি, প্রাসঙ্গিকতার সুদূরপ্রসারী প্রভাব যদি বুঝতে না পারা যায়, তাহলে প্রশ্নগুলো স্টুপিড হয়ে ওঠে। তখন প্রশ্নের মেরিট নয়, রিপোর্টারদের উঁচু গলাটাই চাউর হয়। ক্রমাগত এমন প্রবণতায় মগজ বাদ রেখে পেশীতে ভরে দিয়েই শুরু হয় রিপোর্টারদের হিরোইজম। কখনও কখনও সিনিয়ররাই এমন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেন জুনিয়রদের।

অভিনেত্রী শর্মিলী ঠাকুর, বিশ্বকবি বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয় কিনা, সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের পর মেঘের কাছে তথ্য চাওয়া, অভিনেত্রী ময়ুরীর মেয়ে তার মায়ের সিনেমা দেখেছে কিনা জানতে চাওয়া, অভিনেত্রী সীমানার মৃত্যুতে তার ছেলের প্রতিক্রিয়া জানা কিংবা ভালো ইংরেজি না জেনে বিদেশিদের দুর্বোধ্য প্রশ্ন করা- নিশ্চিতভাবেই ভালো সাংবাদিকতা নয়। সংবাদমাধ্যমের সাপ্তাহিক মিটিংগুলোতে এসব নিয়ে কী আলোচনা হয় না?

৩.গণমাধ্যমের প্রধান চরিত্র হলো জনগণের হয়ে ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিমূলক জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রশ্ন ছুঁড়ে উত্তর আদায় করা। এক্ষেত্রে যে কোনো প্রশ্ন করতেই পারেন সাংবাদিকরা। তবে উত্তরদাতার কাছ থেকে কীভাবে উত্তর বের করে আনবেন, তা নির্ভর করে কীভাবে, কোন কৌশলে প্রশ্নটা করছেন। প্রশ্ন করার ভাষা আর স্টাইলের ওপরেই নির্ভর করে আপনি কতটা দক্ষ, যোগ্য, বিচক্ষণ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কতটা জানেন। সাংবাদিকতার পরিচয়টাই বড় নয়, আপনার ব্যক্তিগত জ্ঞান, সুশিক্ষা, যোগ্যতা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

সমস্যাটা হচ্ছে, সাংবাদিকতা এখন রাজনৈতিক ‘বাইনারি’ দৃষ্টিভঙ্গির কাঁটাতারে আটকে গেছে। হয় পক্ষ, নয়তো প্রতিপক্ষ। হয় ডান, নয়তো বাম। হয় ক্ষমতাসীন, নয়তো বিরোধদল…। সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে সামনে রেখে এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রমোটার মূলত রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে হরিজন্টাল-ভার্টিক্যাল লেন্সের বাইরে বার্ডস আই বা ড্রোন লেন্স এখন উপেক্ষিত। প্রশ্নকর্তাদের নির্মোহ প্রশ্নগুলো তাই বাইনারি লেন্সে উত্তরদাতাদের ক্ষুব্ধ করে, আগ্রাসী করে।