ঢাকা ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
এনায়েতপুরে শহীদদের স্মরণে ২নং স্থল ইউনিয়নে দোয়া ও আলোচনা সভা  সিরাজগঞ্জ রায়গঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন সাজাপ্রাপ্ত সেই প্রধান শিক্ষক আফছার আলী দূর্গা পূজাকে ঘিরে ব্যস্ত রাউজানের প্রতিমা শিল্পীরা  নারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার গোপন কক্ষটি গোপন ছিল না দায়িত্ব গ্রহণের আড়াই ঘন্টা পর রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ প্রেমিকার টাকা স্বর্ণলংকার হাতিয়ে নিয়ে ফ্লাইওভার থেকে ফেলে হত্যা  এনায়েতপুরে আগামী ২১শে সেপ্টেম্বর বিএনপির স্মরণ সভাকে সফল করতে প্রস্তুতিমূলক সভা  সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের নতুন সদস্য হলেন ২৫ গণমাধ্যম কর্মী রাজনৈতিক দলের সাথে মামলায় জড়িয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি না করার আহবান

নির্বাচন কেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণ কার্ডের সহজলভ্যতা ও সাংবাদিকতার আদিখ্যেতা!

শিব্বির আহমদ রানা গণমাধ্যমকর্মী
  • আপডেট সময় : ১১:০৩:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪ ৪১ বার পড়া হয়েছে

একটা ফেইসবুক টিভি ও আনকোরা নিউজ পোর্টাল থাকলে সহজে সম্পাদক বনে যাওয়া যায়। এ জন্যে সাংবাদিকের যতো না সংখ্যা তার সমানুপাতিক সম্পাদকও। এসব সম্পাদকের কোনো যোগ্যতা লাগে না। স্বল্প কিছু টাকা দিয়ে ডোমেইন হোস্টিং কিনে একটা পোর্টাল ক্রিয়েট হলেই হলো! এরাই গ্রামবাংলায় প্রতিনিয়ত অহরহ অখাদ্য সাংবাদিকতার প্রদুর্ভাব বাড়িয়ে যাচ্ছে। এদের অসম দৌরাত্ম্যে লবণ মাঠের শ্রমিক, কাচাঁ বাজারের ব্যবসায়ী, পানের দোকানদার, পথে ঘাটের ক্যানভাসার থেকে যে কেউ রাতারাতি বনে যায় সাংবাদিক। এরা মহান পেশায় এসে পেশাটিকে গলাটিপে হত্যার অবশিষ্টটুকু বাকি রাখেনা। তথ্য বিভ্রাট করে, প্রতিনিয়ত মানুষকে হয়রানী করে যাচ্ছে। সাংবাদিকতার মূল ‘থিম’টা কে তারা পৌঁছে দিয়েছে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে। একেবারেই এনআইসিইউতে।

এসব ফেইসবুক টিভি ও কথিত পোর্টালের সাংবাদিকদের ভাবখানা দেখলে মনে হবে এ উপজেলায় সেই একমাত্র সাংবাদিক। হুলস্থুল ভাব। এদের সাংবাদিকতার ধরণটাই তেলামি, তোষামোদী ও অস্বভাবিকভাবে সাধারণ জনগণকে হয়রানী করা। সারা বছরই তাদের কাছে কোনো অনুসন্ধানি প্রতিবেদন পাবেন না। পাবেন না জনপদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে একটি নিউজ বা প্রতিবেদন। এদের বেশীরভাগ নিউজ কৃতিসন্তান, প্রিয়জনেষু, বিশিষ্ঠদানবীর, হুররে চার গোলে বিজয়, চার চক্কায় হৈ চৈ টাইফের। এতটুকই কোন রকম হজম করা যায়।

এদের বেশীরভাগ কে দেখবেন জায়গা সম্পত্তির কেলঙ্কারি নিয়ে, ঘর-বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে এক ইঞ্চি খাসের পাশে আছে কিনা তা দেখভাল করা। ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাইরেক্ট বলে এখানে আপনি তো কাজ করতে পারেন না। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি! ইউএনও, এ্যাসিল্যান্ড, ওসি মহোদয়ের সাথে আমার পরিচয় আছে। তাদের কে বিষয়টি জানালে আপনার বারোটা বেজে যাবে। এভাবে স্পট হুমকি দিয়ে আসবে এদের একটা শ্রেণি। আসার সময় বলবেন এই ধরেন, এটা আমার ফোন নম্বর। রাতে ফোন দিয়েন! রাতে ফোন দিলে কী হবে? তার উত্তর ভালভাবেই দিবেন ভুক্তভোগীরা।

সভা, খেলা, ওয়াজ মাহফিল, জন্মদিন উৎসব, মেলা-মেজবানের লাইভ দিলেই তারা হয়ে যায় টিভি সাংবাদিক! এরা বিয়ের অনুষ্ঠান, কর্ণছেদন, খৎনা অনুষ্ঠান প্রচারেও নিয়ে নেয় কন্টাক্ট। এদের ভিড়ে প্রকৃত টিভি সাংবাদিকতা লাইফ সাপোর্টে। এভাবে চলতে থাকলে কোনটা সাংবাদিকতা আর কোনটা অপসাংবাদিকতা পরখ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এখানের সাংবাদিকতার রীতিনীতি নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি গঠনশূলক প্রক্রিয়া সচল থাকা চাই। না হয় সাংবাদিকতা লাইফ সাপোর্টে চলে যেতে আর বেশী সময় লাগবে না।

এরা সারা বছর জনপদের অনিয়ম, সমস্যা, সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলে না। মাখামাখি কিছু কন্টেন্ট করে নিজেদের একটা অবস্থান, অস্থিত্বের জানান দেয়। জাতীয়, স্থানীয় কোনো নির্বাচন আসলে প্রার্থিকেন্দ্রিক কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে। টাকার পরিমাণ বেশী হলে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করে ‘এবারে অমুক প্রার্থী প্রচারণায় বহুগুন এগিয়ে’, ‘জনপ্রিয়তার শীর্ষে তমুক প্রার্থী’, ‘তিনি একজন মানবতার ফেরিওয়ালা’, ‘এবারে বিজয়ের হাতছানি তারই দিকে হাঁকছে’! এভাবে তারা হেডলাইন, সাবহেডলাইন যোগ করে পাঠকের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। পরে ভোটের দিন রেজাল্টে তাদের ফলাফল থাকে শূণ্যের কোটায়, জামানত হারানোর পথে! এদের এসব প্রতিবেদন দেখে বুঝা যায় এরা সাংবাদিকতা না করে ইউটিউবের মতো কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে দায়সারা কর্মসম্পাদন করে মাত্র।

রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত নয়, নিবন্ধনপ্রাপ্ত নয়, বৈধতার চিকিভাগেও নেই এমন ফেইসবুক টিভি, অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কিভাবে জাতীয়, স্থানীয় নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ কার্ড পায়? একদিকে স্বচ্চ সাংবাদিকতার জন্য প্রার্থনা অন্যদিকে অপসাংবাদিকতার আহ্বান দুটোই কিভাবে সমানতালে চলে? যারা মূলধারার গণমাধ্যমে কাজ করে তারাও যদি ফেইসবুক টিভি, অনিবন্ধিত দায়সারা সংবাদ প্রকাশের মতো পোর্টালের প্রতিনিধির সাথে গুলিয়ে যায়, তাহলে কাকে যাছাই করবেন ‘সঠিক সাংবাদিকতা’ কী। এদের কাছে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ কার্ডটিই সাংবাদিকতার লাইসেন্স হয়ে যায়। এটাকে পূঁজি করে নিজেদের পরিচয় দেয় ‘আমি সাংবাদিক’!

লেখক: শিব্বির আহমদ রানা, গণমাধ্যমকর্মী

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

নির্বাচন কেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণ কার্ডের সহজলভ্যতা ও সাংবাদিকতার আদিখ্যেতা!

আপডেট সময় : ১১:০৩:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

একটা ফেইসবুক টিভি ও আনকোরা নিউজ পোর্টাল থাকলে সহজে সম্পাদক বনে যাওয়া যায়। এ জন্যে সাংবাদিকের যতো না সংখ্যা তার সমানুপাতিক সম্পাদকও। এসব সম্পাদকের কোনো যোগ্যতা লাগে না। স্বল্প কিছু টাকা দিয়ে ডোমেইন হোস্টিং কিনে একটা পোর্টাল ক্রিয়েট হলেই হলো! এরাই গ্রামবাংলায় প্রতিনিয়ত অহরহ অখাদ্য সাংবাদিকতার প্রদুর্ভাব বাড়িয়ে যাচ্ছে। এদের অসম দৌরাত্ম্যে লবণ মাঠের শ্রমিক, কাচাঁ বাজারের ব্যবসায়ী, পানের দোকানদার, পথে ঘাটের ক্যানভাসার থেকে যে কেউ রাতারাতি বনে যায় সাংবাদিক। এরা মহান পেশায় এসে পেশাটিকে গলাটিপে হত্যার অবশিষ্টটুকু বাকি রাখেনা। তথ্য বিভ্রাট করে, প্রতিনিয়ত মানুষকে হয়রানী করে যাচ্ছে। সাংবাদিকতার মূল ‘থিম’টা কে তারা পৌঁছে দিয়েছে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে। একেবারেই এনআইসিইউতে।

এসব ফেইসবুক টিভি ও কথিত পোর্টালের সাংবাদিকদের ভাবখানা দেখলে মনে হবে এ উপজেলায় সেই একমাত্র সাংবাদিক। হুলস্থুল ভাব। এদের সাংবাদিকতার ধরণটাই তেলামি, তোষামোদী ও অস্বভাবিকভাবে সাধারণ জনগণকে হয়রানী করা। সারা বছরই তাদের কাছে কোনো অনুসন্ধানি প্রতিবেদন পাবেন না। পাবেন না জনপদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে একটি নিউজ বা প্রতিবেদন। এদের বেশীরভাগ নিউজ কৃতিসন্তান, প্রিয়জনেষু, বিশিষ্ঠদানবীর, হুররে চার গোলে বিজয়, চার চক্কায় হৈ চৈ টাইফের। এতটুকই কোন রকম হজম করা যায়।

এদের বেশীরভাগ কে দেখবেন জায়গা সম্পত্তির কেলঙ্কারি নিয়ে, ঘর-বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে এক ইঞ্চি খাসের পাশে আছে কিনা তা দেখভাল করা। ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাইরেক্ট বলে এখানে আপনি তো কাজ করতে পারেন না। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি! ইউএনও, এ্যাসিল্যান্ড, ওসি মহোদয়ের সাথে আমার পরিচয় আছে। তাদের কে বিষয়টি জানালে আপনার বারোটা বেজে যাবে। এভাবে স্পট হুমকি দিয়ে আসবে এদের একটা শ্রেণি। আসার সময় বলবেন এই ধরেন, এটা আমার ফোন নম্বর। রাতে ফোন দিয়েন! রাতে ফোন দিলে কী হবে? তার উত্তর ভালভাবেই দিবেন ভুক্তভোগীরা।

সভা, খেলা, ওয়াজ মাহফিল, জন্মদিন উৎসব, মেলা-মেজবানের লাইভ দিলেই তারা হয়ে যায় টিভি সাংবাদিক! এরা বিয়ের অনুষ্ঠান, কর্ণছেদন, খৎনা অনুষ্ঠান প্রচারেও নিয়ে নেয় কন্টাক্ট। এদের ভিড়ে প্রকৃত টিভি সাংবাদিকতা লাইফ সাপোর্টে। এভাবে চলতে থাকলে কোনটা সাংবাদিকতা আর কোনটা অপসাংবাদিকতা পরখ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এখানের সাংবাদিকতার রীতিনীতি নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি গঠনশূলক প্রক্রিয়া সচল থাকা চাই। না হয় সাংবাদিকতা লাইফ সাপোর্টে চলে যেতে আর বেশী সময় লাগবে না।

এরা সারা বছর জনপদের অনিয়ম, সমস্যা, সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলে না। মাখামাখি কিছু কন্টেন্ট করে নিজেদের একটা অবস্থান, অস্থিত্বের জানান দেয়। জাতীয়, স্থানীয় কোনো নির্বাচন আসলে প্রার্থিকেন্দ্রিক কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে। টাকার পরিমাণ বেশী হলে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করে ‘এবারে অমুক প্রার্থী প্রচারণায় বহুগুন এগিয়ে’, ‘জনপ্রিয়তার শীর্ষে তমুক প্রার্থী’, ‘তিনি একজন মানবতার ফেরিওয়ালা’, ‘এবারে বিজয়ের হাতছানি তারই দিকে হাঁকছে’! এভাবে তারা হেডলাইন, সাবহেডলাইন যোগ করে পাঠকের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। পরে ভোটের দিন রেজাল্টে তাদের ফলাফল থাকে শূণ্যের কোটায়, জামানত হারানোর পথে! এদের এসব প্রতিবেদন দেখে বুঝা যায় এরা সাংবাদিকতা না করে ইউটিউবের মতো কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে দায়সারা কর্মসম্পাদন করে মাত্র।

রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত নয়, নিবন্ধনপ্রাপ্ত নয়, বৈধতার চিকিভাগেও নেই এমন ফেইসবুক টিভি, অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কিভাবে জাতীয়, স্থানীয় নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ কার্ড পায়? একদিকে স্বচ্চ সাংবাদিকতার জন্য প্রার্থনা অন্যদিকে অপসাংবাদিকতার আহ্বান দুটোই কিভাবে সমানতালে চলে? যারা মূলধারার গণমাধ্যমে কাজ করে তারাও যদি ফেইসবুক টিভি, অনিবন্ধিত দায়সারা সংবাদ প্রকাশের মতো পোর্টালের প্রতিনিধির সাথে গুলিয়ে যায়, তাহলে কাকে যাছাই করবেন ‘সঠিক সাংবাদিকতা’ কী। এদের কাছে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ কার্ডটিই সাংবাদিকতার লাইসেন্স হয়ে যায়। এটাকে পূঁজি করে নিজেদের পরিচয় দেয় ‘আমি সাংবাদিক’!

লেখক: শিব্বির আহমদ রানা, গণমাধ্যমকর্মী