গাজায় নেই ঈদের আনন্দ, অশ্রুসিক্ত ফিলিস্তিনবাসী
- আপডেট সময় : ০৫:১৮:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪ ৩১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা পোর্টাল: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা, মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে এই দুটি ঈদ উদযাপন করা হয় উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দের মধ্য দিয়ে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত অবরুদ্ধ গাজায় ঈদের এই আনন্দ যেন প্রতিবারই ম্লান হয়ে যায়। সেখানে ঈদের দিনে হাসি-আনন্দের পরিবর্তে প্রতি মুহূর্তে ভর করে চাপা আতঙ্ক, প্রতিধ্বনিত হয় বেদনার সুর।
ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজার নুসেইরাত ক্যাম্পের বাসিন্দা ইসমাইল আলিয়ান। তাঁর বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “আজকের দিনে পাঁচ মিলিয়নের বেশি মুসলিম আরাফাত পর্বতে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছে। আর আমরা ফিলিস্তিনিরা নির্যাতিত, গণহত্যার শিকার। আমরা কীভাবে ঈদুল আজহা উদযাপন করবো? আমাদের জন্য এটি একটি দুর্দশাগ্রস্ত ঈদ, প্রতিনিয়ত এখানে মানুষ মারা যাচ্ছে।”
ইসমাইল আলিয়ান তার ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির মধ্যে দাঁড়িয়ে আরো বলেন, “আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা মর্যাদার সাথে বাঁচতে চাই। আমরা শিক্ষিত মানুষ, কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনছে না। কেউ আমাদের পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছে না। আমরা এখানে দুর্বিষহ, ভয়াবহ অবস্থায় বাস করছি। আমরা প্রস্তরযুগে ফিরে যাচ্ছি। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। সব ফিলিস্তিনি হামাসের সদস্য বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সত্য নয়। তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা শান্তি এবং মর্যাদার সাথে বাঁচতে চাই।”
শিশুরা ঈদ উদযাপনের মূল কেন্দ্রবিন্দু, অথচ ফিলিস্তিনে এই কঠিন বাস্তবতায় সবচেয়ে ক্ষতির শিকার এই শিশুরাই। ঈদ আনন্দে জেগে ওঠার পরিবর্তে তাদের ঘুম ভাঙছে ড্রোন ও বিস্ফোরণের শব্দে। সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বাস করার মানসিক ক্ষত কেড়ে নিয়েছে তাদের নিরুদ্বেগ শৈশবকে। ঘরবাড়ি ও পরিবারের সদস্যদের হারানোর ব্যাথা ঈদকে করে তুলেছে বেদনাদায়ক। স্মারক হয়ে উঠেছে কঠিন এক বাস্তবতার।
আহত শিশু জামিল আবু ওদেহ ঈদের দিনে হাসপাতালে শুয়ে বলছে, “যুদ্ধ শুরুর পরপরই আমরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাই। আমরা বেইত হনুন থেকে দেইর আল-বালাহতে চলে আসি। সেখানে আমরা একটি স্কুলে আশ্রয় নেই। পরে স্কুলটিতে হামলা হলে আমরা আহত হই। আগের ঈদগুলো অনেক সুন্দর ছিল, আমরা উদযাপন করেছিলাম এবং মাংস খেয়েছিলাম, আমরা তখন বেশ খুশি ছিলাম, কিন্তু এখনকার ঈদে কোন আনন্দ নেই। প্রতিনিয়ত আমরা আহত হচ্ছি, মারা যাচ্ছি। এটা কোনভাবেই ঈদ হতে পারেনা।’
একসময় ঈদের আগে গাজার বাজারগুলোতে সাধারণত দেখা যেত মানুষের ভিড়, হট্টগোল, নতুন পোশাক ও খেলনার স্টল। কিন্তু এবারের ঈদে সেসব জায়গায় কেবলই ধ্বংসস্তূপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুসের মতে, গাজার অনেক মানুষ প্রচন্ড ক্ষুধা এবং দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হচ্ছেন। অচিরেই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করেন তিনি।
গাজাবাসীর জন্য ঈদ মানে বেদনা, হাজারো কষ্টের গল্প। পৃথিবীর বেশিরভাগ মুসলিম দেশ তাদের তাদের এ অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর থেকে। তবুও গাজাবাসী স্বপ্ন দেখে একদিন সবাই তাদের বুঝবে, তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। একদিন তারাও আনন্দ-উল্লাসে ঈদ উদযাপন করতে পারবে।’